মুড়িমুড়কি -তে শুভশ্রী ভট্টাচার্য
দাঁত সংক্রান্ত
১)
আমাদের যখন দাঁত বাঁধানোর জায়গায় ডিউটি ছিল একবার এক কাণ্ড হয়েছিল। হঠাৎ মনে পড়ে গেল। এক ভদ্রলোকের পাটিকে পাটি বাঁধাতে হবে। সেদিন ট্রায়াল ছিল। ট্রায়ালের দিন মুখে মোমের তৈরি ডেঞ্চার পরিয়ে দেখা হয় সব ঠিকঠাক আছে কি না। আমি পরিয়েছি। ট্রায়ালেই সুন্দর ফিট করেছে। মানিয়েওছে। তিনি খুশি। এমন সময় ভেতর থেকে কী একটা কাজে ডাক পড়ল। আমি ভদ্রলোককে একটু বসতে বলে ভেতরে গেলাম। ফিরে এসে হাসি, কথা সব ঠিক আছে কি না চেক করে ছাড়ব।
ওমা ফিরে এসে দেখি চিড়িয়া ভাগলবা। তিনি ঐটেকেই আসল ডেঞ্চার মনে করে পরে চলে গেছেন। আমি তো হায় হায় করছি। ছুটে গেলাম গেটের দিকে যদি তাঁকে ধরতে পারি। হায়রে, আমার এত পরিশ্রমের কাজ এভাবে নষ্ট হবে ভাবতেও কান্না পাচ্ছে। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে হতাশভাবে ফিরে আসছি। কী আর হবে? সবচেয়ে খারাপ হল আবার নতুন করে কাজটা করতে হবে।
প্রস্থেটিক্স রুমে ঢোকার মুখে দেখি তিনি বসে আছেন। হাতে মোমের ডেঞ্চার দুটি। ফিরে যে আসতেই হবে জানতাম, এত তাড়াতাড়ি ফিরবেন ভাবিনি। দন্তহীন মাড়ি খিঁচিয়ে আমাকে উনি বললেন, ‘কী ডেঞ্চার দিলেন, একবার চা খেতেই সবকটা দাঁত টসটস করে পড়ে গেল।’ আমি হাসব না কাঁদব বুঝতে পারলাম না। মোম তো, গরম চায়ে গলে তো যাবেই। গতকাল সারাটা দিন লেগেছিল আমার এই টুথ সেটিং করতে, সেগুলো এখন ওনার হাতে।
ঢোঁক গিলে বললাম, ‘পেটে চলে যায়নি তো?’ তিনি বললেন, ‘যায়নি, যেতেই পারত। আপনারা সরকারী জায়গা বলে এই কোয়ালিটির দাঁত দেন?’
মাথা ঠাণ্ডা করে হাসি, কান্না, রাগ সব দমন করে কোন মতে সবটা বুঝিয়ে বললাম। তিনি মাড়ি বের করে অমায়িক হেসে বললেন, ‘ও, এগুলো মোমের ওপর বসানো? এত ভাল ফিট করেছে দেখে ভাবলাম আসল। আসলে আমার একটু কাজ ছিল। তাই আপনার জন্য অপেক্ষা না করেই কেটে পড়ছিলুম।’ আমি এবার দাঁত খিঁচিয়ে বললাম, ‘কাজ ছিল? তাই জন্য ক্যাণ্টিনে গিয়ে চা খাচ্ছিলেন? আর আমাকে যে আবার টুথ সেটিং করতে হবে। আপনাকেও আবার ট্রায়াল দিতে আসতে হবে।’ অম্লানবদনে বললেন, ‘তাতে কী, আপনার একটু বেশি করে প্র্যাকটিস হয়ে যাবে।’ তাতেও আমি খুশি হচ্ছি না দেখে বললেন, ‘আর আপনাকে নাহয় ডেলিভারি হয়ে গেলে চা খাইয়ে দেব।’ বলে আবার ঐ গা জ্বালানো হাসি।