• Uncategorized
  • 0

মুড়িমুড়কি -তে শুভশ্রী পাল

ভালোবাসাবাসি

আমাদের গ্রামের স্কুলের বাচ্চারা বর্ষার দিনে বেশি বেশি করে স্কুলে আসে, আমার মত দিদিমনিদের ছাত্র ছাত্রীরা পড়বে বলে স্কুলের প্রতি টান একথা শুনে গাধাও পিছন ঘুরে পশ্চাতদেশ দেখিয়ে দেবে তা বলাই বাহুল্য। এনারা আসেন খিচুড়ির টানে আর স্কুলের সামনে জমা জলের টেম্পোরারি ডোবা থেকে মাছ ধরতে আর ঢ্যামনা সাপ তাড়া করতে। অতঃপর আমার কাছে প্রেম নিয়ে নালিশ আসে।
অসীমাকে নিজের ধরা পুঁটিমাছ দিয়ে দিয়েছে ক্লাস ফোরের নাফিজউদ্দিন, সুতরাং কৃতজ্ঞতা জানাতে অসীমা তাকে বলেছে তুই খুব ভাল ছেলে। তা শুনে তার সহপাঠিনী ক্লাস থ্রী এর রিমি বুঝে গেছে ওদের মধ্যে ওসব আছে। কীসব জিজ্ঞাসা করলে লজ্জা লজ্জা মুখে উত্তর আসে, ভালবাসাবাসি।
আমারো হেব্বি লজ্জা লাগত তবে ক্লাস থ্রীতে নয় কারণ তখনও সোমাপাকা আমাদের প্রেমের মানে শেখায়নি।
ফাইভে উঠে নতুন ইংরাজী বই যোগ হত সিলেবাসে কারণ জ্যেঠুমনি সেসময়ে ভালবেসে প্রাইমারীতে ইংরাজী এবং পাশ-ফেল তুলে দিয়েছিল।  নতুন ইংরাজীর সাথে সাথে আমদানি হল নতুন বড় হতে শেখার সিলেবাস “প্রেম”।
সোমাপাকা সাতদিন ধরে পাখিপড়া বলে বলে আমার মত আকাট কে শেখাতে সক্ষম হল প্রেমের মানে।
প্রেমের সংজ্ঞাঃ সূত্র ১- কেউ কাউকে আই লাভ ইউ  বলা মানে সে তার সাথে প্রেম করে।
নিয়ম মেনে আমি আমার তখনকার প্রিয় বন্ধু তৃষাকে l love you বলে দিলাম।
কিন্তু গুরুমাতা তা নাকচ করে দিলেন।
সূত্রের ব্যাখ্যা বহরে বেড়ে শেখাল…
কোন সমলিঙ্গের সাথে প্রেম হয় না। সুতরাং একপিস ছেলেকে আই লাভ ইউ না বললে আমার প্রেম অসম্পূর্ণ।
এবার সেসময়ে পুরুষ বলতেই যার কথা প্রথম মাথায় আসে সে ভদ্রলোক হলেন আমার পিতৃদেব।

গুরুমাতার কাছে অনুমতি চাইলাম বাবার সাথে প্রেম করার। তিনি আঁতকে উঠে জানালেন বাবা, কাকা, তুতো দাদা বা ভাই অর্থাৎ রক্তের সম্পর্কে থাকা কারো সাথে প্রেমের নিয়ম নেই।

এ তো মহা জ্বালা। একপিস প্রেম না করলে মান-ইজ্জত বাঁকার জলে ভেসে যাবে এদিকে।
সোমার কল্পরাজ্যে কোটি কোটি পুরুষ। তাদের কেউ ওকে আই লাভ ইউ বলে, কেউ কিস করে, কেউ শালা সুহাগ রাতের খাট সাজায় আর আমি স্কুলের কঙ্কাল বারান্দায় বসে কঙ্কালটা ছেলে না মেয়ে সেটা বোঝার চেষ্টা করি। কিঁউকি মেরে কো এক পুরুষ চাহিয়ে, সে জ্যান্ত হোক বা কঙ্কাল।  আই লাভ ইউ বোল দিয়ে তো মার দিয়া কেল্লা।
সেসময়েই বোঝা উচিত ছিল ভগা আমার কপালে প্রেম রেখা টানার সময় শালা পেনের কালি শেষ হয়ে গিয়ে শুধু ইম্প্রেশনটাই পড়েছে কিন্তু দাগ নেই।
যাক গে সেসব কথা।
আমার চোখে বাবা ছাড়া প্রভাবিত করার মত কোনো ছেলেপুলে নেই।  অথচ প্রেম না করলে স্কুল যাওয়া আর সতীনের কোলে ছেলে দেখা একরকম ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতএব ঢপ শিল্পের দারস্থ হতেই হল। তবে নির্জলা মিথ্যেও বলার মত বুকের পাটা বা তক্তা কোনটাই নেই৷ তাই আধাআধা।
রবিবারের এক দুপুরে মা দোকানে যেতেই আমি দরজা বন্ধ করে এক লাফে উঠোন পেরিয়ে ঘরের দরজাও বন্ধ করে………….
টিভির সামনে হাঁটু মুড়ে দু হাত জোর করে চোখ বুজে আমার বাবা পরবর্তী হিরো কে বলেই ফেললাম….
শক্তিমান,  I love you
শক্তিমান,   I love you
শক্তিমান,   I love you
তিন সত্যির কন্সেপ্ট তখন খুবই জোরালো ছিল আর কী।
খানিক পরে বুকের ভিতরের দুম দাম হাতুড়ি পেটানোর ফীল আর উত্তেজনার হাঁফানিতে খাবি খেতে খেতেই চোখ মেলে তাকাতেই শক্তিমান সিরিয়ালে গীতার দিকে ভালবাসা মাখা চোখে তাকাল আর এই আবাং কল্পচক্ষুতে দেখিল শক্তিমান তার দিকে প্রেম প্রেম দৃষ্টি এঁকে দিচ্ছে। আরিইইইইশ্লা মেরীঈঈঈ তু তো মার দিয়া কেল্লা। সোজা শক্তিমানের সাথে প্রেম???? গুরু তুমি তো জিনিস নিকলা পুরো।
পরদিন স্কুলে গিয়ে ব্রেকিং নিউজঃ মেরী প্রেম করছে। তখন আমার এই অ্যাত্তবড় শুভশ্রী নামটা বহুল প্রচলিত ছিল না। একে তো টমবয় মেরী প্রেম করছে তাও আবার কার সাথে? না শক্তিমানের সাথে। উঁচু ক্লাসের দিদিরা আমাকে দেখতে এল সেদিন। আর আমি লাজে রাঙা কনে বৌ থুড়ি প্রেমিকা হয়ে জানালাম হ্যাঁ সত্যিই কাল আমি শক্তিমান কে আই লাভ ইউ বলেছি।
যেহেতু তিনবার বলেছি তাই আমার ভালবাসায় কোন ভেজাল নেই তা সকলে এক বাক্যে মেনে নিল।
এবার শক্তিমানের দিক থেকে হ্যাঁ বা না বিচারের পালা। আমার প্রোপোজ শুনে সে আমার দিকে সেই একটা কীরকম কীরকম শিরশিরানি জাগানো চোখে তাকিয়েছে সুতরাং তারও কুছ কুছ হোতা হ্যায়।
তাছাড়া এখনো অব্দি যখন আমার মায়ের কাছে এসে সে নালিশ করেনি তার মানে গ্যারান্টেড হি লাভস মী।
কেননা পাক খেতে খেতে আমাদের রেল কোয়ার্টারে আসা শক্তিমানের কাছে কঠিন কিছু নয়। তাই আপত্তি থাকলে সে মা কে এসে নালিশ করেই যেতে পারত।
এবং। এবং, এবং…. মোক্ষম পয়েন্ট ধরিয়ে দিল টুকটুকি। ও বলল মেরী ক্যারাটে শেখে তাই বাকী প্রার্থীদের তুলনায় আমি যোগ্যতর। কারণ শত্রুর দমনে আমিও সঙ্গত করতে পারব। উপরন্তু যেহেতু তখনও অব্দি আমার  Aim in life  ছিল সানি দেওলের মত জাঁবাজ ইমানদার পুলিশ অফিসার হওয়া তাই আমার আর শক্তিমানের জুটিই একমাত্র পারফেক্ট।
এরপর আর কোন কথা চলে না। আমি একমেবাদ্বিতীয়ম শক্তিমানের প্রেমিকা হয়ে গেলাম। এই খুশিতে আমারও আর গীতার প্রতি কোন পজেসিভনেস বা ইনসিকিউরিটি রইল না। কেননা আস্ত মানুষটাই যখন আমায় ভালবাসে তখন গীতা যতই শক্তিমানের ওপর ডোরে ডালুক না কেন শক্তিমান তো শুধু আমারই। তাই না?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।