পড়ে পুণ্যবানে ভৈরব প্রজাপত্যানন্দ তীর্থনাথ

অথ বলি কথা
চন্ডীর দ্বাদশোধ্যায় এর মধ্যে দেবী মাহাত্ম্য তে উল্লেখ আছে-
“বলি প্রদানে পূজায়ামগ্নি কার্যে মহোৎসবে।সর্বং মমৈতন্মহাৎময়ম উচ্চায়ং শ্রাবয়মেবচ।।
অর্থাৎঃ মানুষ বিধি জেনে বা নাজেনে আমার উদ্দেশ্যে অনুষ্টিত বলিদান,, পুজা বা যজ্ঞাদি যা করিবে আমি অতীব পৃথির সাথে তা গ্রহন করিব।।
“বলিভিঃ সাধ্যতে মুক্তির্ব্বলিভিঃ সাধ্যতে দিবং।
বলিদানেন সততং জয়েচ্ছত্রূন্নৃপান্নৃপঃ।।
(কালিকা পুরান৬৭/৬)
বলি দ্বারা মুক্তি লাভ হয়।এবং নৃপতিগন বলি দান দ্বারা শত্রু পক্ষকে পরাজিত করতে পারেন।।
এইবার আসা যাক অনেকেই বলি কে হিংসাত্মক কার্য্য বলে গন্য করছেন। হুংকার দিয়ে বলছেন – অহিংসা পরম ধর্ম্ম।
তাই আসুন হিংসার সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা যাক,,
হিনস্ ধাতু হইতে হিংসা শব্দ সাধিত হইয়াছে। হিনস্ ধাতুর অর্থ হনন বা বধ,, কাজেই হিংসা শব্দের ধাতু প্রত্যয় গত অর্থ বধ। যখন বধের অভাব অর্থাৎ বধ হয় না তখনই অহিংসা বুঝায়। শাস্ত্রে হিংসা শব্দের অন্যান্য অর্থে বহুল ব্যবহার দেখা যায়। হনন ব্যতিরেকেও শাস্ত্র হিংসা শব্দ ও হনন হইলে ও অহিংসা শব্দ ব্যবহার করিয়াছেন।।
যাই হোক যজ্ঞে পশু বলি কে হিংসাত্মক কার্য হিসেবে গন্য করা হয় না।
নীতিশাস্ত্র তে এই রূপ উল্যেখ আছে।
“আহবেষু মিথোহন্যোন্যং জিঘাংসা মহীক্ষিতঃ যুদ্ধমানাঃ পরং শক্ত্যা স্বর্গ যান্ত্যপরাঙ্মুখা।
যজ্ঞেষু পশবো ব্রক্ষণ হন্যন্তে সততং দ্বিজৈঃ সংস্কৃতাঃ কিল মন্ত্রৈশ্চ তেহপি স্বর্গমবাপ্নুবন্।।”
অর্থাৎঃ কোন রাজা অথবা ক্ষত্রিয় যখন যুদ্ধক্ষেত্রে ঈষংন্বিত/ঈর্ষান্বিত শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ রত হন, মুত্যুর পর তিনি স্বর্গলোকে গমন করেন, তেমনই মন্ত্রোচ্চারণ করে যজ্ঞে পশুবলি দিলে স্বর্গ লাভ করেন তেমনি যজ্ঞ আয়জনকারি দেবতাদের আর্শিবাদ প্রাপ্ত হন ও উচ্চমার্গ লাভ করেন তাই যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুকে হত্যা করা এবং যজ্ঞে পশু বলি দেওয়াকে হিংসাত্মক কার্য বলে গন্য হয়না কারন এই ধর্মানুষ্ঠানের মাধ্যমে সকলেই লাভবান ও আর্শিবাদ প্রাপ্ত হয়।।
আদি পিতা মনু উনার একটি শ্লোকে বলেছেন
“যা বেদ বিহিতা হিংসা নিয়তাস্মিংশ্চরাচরে।
অহিংসামেব তান্বিদ্যাদ্বেদাদ্ধর্ম্মোহি নির্ব্বভৌ।।
বেদ হতেই ধর্মের উৎপত্তি বা প্রকাশ অতএব বেদানুসারে এই চরাচর জগতে যে হিংসার (জীববধের) বিধান আছে তাহা অহিংসা বলিয়া জানিবে। অর্থাৎ বধ জনিত পাপ হয় না।।
বিষ্ণু সংহিতায় উল্যেখ আছে-
“যজ্ঞার্থং পশবঃ সৃষ্টা স্বয়মেব স্বয়ম্ভুবা।
যজ্ঞোহি ভূত্যৈ সর্ব্বস্য তস্মাদ যজ্ঞে বধোহবধঃ।।
অর্থাৎঃ-যজ্ঞ সম্পাদনের জন্যই স্বয়ং ব্রহ্ম পশু দিগকে সৃজন করিয়াছেন,,এবং যজ্ঞ সর্ব্ব সাধারণের হিতকল্পে। অতএব যজ্ঞের নিমিত্তে যে পশু বলি হয় তাহা বধ জনিত পাপমুক্ত।
বশিষ্ঠ সংহিতার ৪র্থ অধ্যায়ে উল্যেখ আছে-
না কৃত্বা প্রানিনাং হিংসাং মাংস মুৎপদাতে কচৎ।
ন চ প্রানিবধঃ স্বর্গ্য স্তষ্প্রাদ যাগে বধো ইবধঃ।।
অর্থাৎঃপ্রানি হিংসা না করিলে মাংস উৎপন্ন হয় না,,আবার প্রানি বধ স্বর্গজনক নহে,, এই জন্যই যজ্ঞের নিমিত্তে যে বধ হয় তাহা অবধ বা অহিংসা।। অশ্বমেদ যজ্ঞের ফল স্বর্গলাভ।।
“দেবীভাগবত পাঠক্রমে জানা যায়,,
“দেব্যগ্রে নিহতা যান্তি পাশবঃ স্বর্গমব্যয়ং।
ন হিংসা পশু জাতত্র নিঘ্নতাং তৎকৃতেহনঘ।।”
অর্থাৎঃ-হে অনঘ,,দেবীর সম্মুখে যে পশুকে নিধন(বলি প্রদান) করা যায়,,,সেই সমস্ত পশু অক্ষয়। স্বর্গলাভ করে।এবং সেই হনন হিংসা নয়। যজ্ঞে প্রত্যক্ষ পশুবধ দেখা যায়,,সেই বধ অহিংসা।।
শ্রীমদ্ভাগবত প্রধান শ্রীধর স্বামী ভাগবতের একাদশ স্কন্ধের পঞ্চম অধ্যায়ের ত্রয়োদশ শ্লোকের টীকায় বলির বৈধতা স্বীকার করিয়া বলেছেন
“তথা পশোরপি আলভনমেব বিহিত ন তু হিংসা।
অয়মর্থঃ দেবতোদ্দেশেন যৎ পশুহননং তদালভন বায়ব্যং শ্বেত্মালভেতেত্যাদি শ্রুতের্ণতু হিংসা।
এখানে “পশুর আলভন করিবে ” বলা হয়ছে। দেবতার উদ্দেশ্যে যে পশু বধ করা হয় তাহার নাম আলভন।বায়ূদেবতার নিমিত্তে শ্বেত ছাগল আলভন অর্থাৎ বলি দিবে এইরূপ শ্রুতি অনুশারে যে বলি দেয়া যায় তাহা হিংসা নয়।

‘পরমব্রহ্মেশ্বরী’