প্রয়াণদিবসে শ্রদ্ধা
মুনশি প্রেমচন্দ ১৯৩৬ সালের ৮ অক্টোবর প্রয়াত হন। তাঁর জন্ম ৩১ জুলাই, ১৮৮০। মুনশি প্রেমচন্দ তাঁর কলমের নাম। বাঙালি লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কলমে উদ্দীপ্ত হয়ে সাধারণ ভারতীয়ের জীবনগাথা লিখবেন বলে “ধনপতরাই শ্রীবাস্তব” মুনশি প্রেমচন্দ ছদ্মনাম নিয়েছিলেন। ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দি ও উর্দূ সাহিত্যের ক্ষেত্রে সবার প্রথমে যে নামটি মনে আসে, তা হল মুনশি প্রেমচন্দ। ব্রিটিশ ভারতের বারাণসী রাজ্যের লামহি তে আজকের দিনে তাঁর জন্ম হয়। হিন্দি সাহিত্যে তাঁর লেখাতেই প্রথম রিয়ালিজম ফুটে ওঠে। তিনি যুক্তিসংগত সহমর্মিতার সাথে ভারতীয় উপমহাদেশের দরিদ্র মানুষের জীবন যাত্রার বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। তাঁর কলমে বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে দুর্নীতি প্রতিরোধ, দারিদ্র্য, সামন্ততান্ত্রিক প্রথা, ঔপনিবেশিক তা, এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পাশাপাশি নাবালিকা বিধবাদের যন্ত্রণার কথাও উঠে এসেছে। উঠে এসেছে যৌনকর্মীদের জীবনের সংকটের কথাও। প্রেমচন্দ শোষণের জোয়াল থেকে শ্রমিক কৃষকের মুক্তি চেয়েছিলেন, কিন্তু অতি দ্রুত শিল্পায়নকেও তিনি মেনে নিতে পারেন নি। ভারতকে দ্রুত শিল্পোন্নত করার প্রক্রিয়াকে তিনি বড়লোকের স্বার্থরক্ষা ও পুঁজিবাদের সংহতি বলে ধারণা করতেন।
তাঁর সাহিত্য সৃষ্টি থেকে বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্রকার ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ ছায়াছবি নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়াও সদ্গতি, গোদান, ওকাওরি কথা, তাঁর সাহিত্য সম্ভার হতে তৈরি ফিল্ম। শরৎচন্দ্রের মতোই প্রেমচন্দের সাহিত্যেও মাতৃহৃদয়ের ভাব কাজ করত। প্রেমচন্দ বলতেন, সত্যই হল প্রেমে পৌঁছনোর প্রথম ধাপ। বলতেন, সৌন্দর্য প্রকাশের জন্য অলঙ্কারের প্রয়োজন হয় না। কোমলতার পক্ষে অলঙ্কারের বোঝা বহন করা শক্ত। বলতেন, জীবনে সার্থক হতে গেলে, দরকার শিক্ষা। শুধু মাত্র সাক্ষরতা ও ডিগ্রি দিয়ে যা অর্জন সম্ভব নয়।
জন্মের একশ চল্লিশ বছর পরেও প্রেমচন্দের সাহিত্যিক মূল্যবোধ আমাদের আলো দেখায়।
লেখা- মৃদুল শ্রীমানী