ভালো-মন্দ, লাভ-ক্ষতি, সুখ-দুখ, কষ্ট-আরাম, রাত-দিন ইত্যাদি প্রত্যেকটা শব্দেরই একটার বিপরীত আরেকটা থাকে ; সেটা আমরা সবাই জানি । তাই আনন্দের সময় আনন্দের খুশিতে আত্মহারা হয়ে সবকিছু ভুলে যেতে নেই । আবার দুঃখের দিনে কষ্ট পেয়ে মন ভেঙে চুপচাপ বসে হতাশা করাও উচিত নয় । আমাদের জীবনে যে পরিস্থিতিই আসুক না কেন, ধৈর্য ধরে থাকতে পারলে তার সুফল অবশ্যই পাওয়া যায় ।
বর্তমানে সত্যিই দেশ তথা সারা বিশ্ব এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলছে । যার কারণে আর্থিক ক্ষতি তো হচ্ছেই উপরন্ত প্রাণ বিসর্জনও দিতে হচ্ছে অনেককেই । এখনো ঠিক করে বোঝা যাচ্ছে না এর অন্ত কবে হবে । যাই হোক না কেনো, এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের সবাইকেই নিয়ম-নীতি মেনে ধৈর্য ধরে এগিয়ে চলতে হবে । যেটা একবার শুরু হয় তার শেষও একদিন হয় । ভয় না পেয়ে মনের জোরে সেই নতুন ভোর দেখার আশায় চলে যেতে হবে ।
আমাদের প্রত্যেকের জীবনে মন্দ অর্থাৎ খারাপ সময় আসে চলার পথে । সেই মন্দ সময়ের সরাসরি মন্দ দিকটা তো আছেই । তবে আবার সেই পরিস্থিতি থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি ও অনেক ভালোর দিকও দেখতে পাই । সেটা কে কি ভাবে দেখবে তার উপর নির্ভর করে ভালোর দিকটা । এটাও ভালো করে বুঝতে হবে যে, মন্দ আছে বলেই ভালোর ভালোত্বটা আমরা সহজেই বুঝতে পারি । যেমন গরম আছে বলেই ঠান্ডার মহত্বটা বুঝে আমরা অনেকেই ঘরে এসি লাগাই ।
বর্তমানে যে আতঙ্ক ও কষ্টকর জীবন আমরা সবাই বয়ে চলেছি প্রতিদিন । কেউবা ঘরে কেউবা কর্তব্যরত অবস্থায় বাইরে । এই মন্দ পরিস্থিতির মন্দগুলো তো আমরা সবাই ভোগ করে চলেইছি । তবে এর থেকেই আবার কিছু কিছু ভালো জিনিস আমরা দেখতে পাচ্ছি ও আগামীর জন্য ভাবছি । আজ এই ভয়ঙ্কর কঠিন পরিস্থিতি হয়েছে বলেই আমরা কিন্তু প্রত্যেকেই প্রত্যেকের পরিবারকে চব্বিশটা ঘন্টা সময় দিতে পারছি । কর্মরত অবস্থায় আমরা অনেকেই ভীষণ কষ্ট করে থাকি । তার থেকে তো এখন অনেক আরাম করতে পারছি, নয় কি ?
এই মুহূর্তে আমরা প্রত্যেকেই কিন্তু শুধুমাত্র মানুষ । কারো মনের মধ্যে কোনো ইগো কিংবা অহংকার নেই । কেননা সবাই এখন ঘরে বসে আছে কর্মহীন হয়ে । ঠিক আজকের দিনে কেউ বলতে পারবে না যে, আমি খুব বড় খেলোয়ার, আমি খুব বড় অভিনেতা, আমি খুব বড় নেতা, কিংবা আমি তোমার থেকে আরও বড় কিছু । এখন মানুষ সবাই সমান ।
এই কঠিন পরিস্থিতি আসার জন্যই অনেকটাই ধনী-গরীবের মধ্যে ফারাকটা কমে যাচ্ছে । অনেক বিত্তশালী মানুষ এগিয়ে আসছেন মুক্ত হস্তে দান করার জন্য । আবার অনেক ব্যক্তি ও গোষ্ঠী গরীব মানুষদেরকে সাহায্য করার জন্য খোলা মনে এগিয়ে আসছেন । এটা সত্যিই মানবিকতা ও সমাজে সবাই মিলে বেঁচে থাকার জন্য একটা ভালোর দিক দেখাচ্ছে আমাদেরকে ।
আজ কঠিন পরিস্থিতি এসেছে বলেই আমরা এখন ভাবছি যে, অন্যান্য ক্ষেত্রে বেশি খরচা না করে । যাতে আমরা সুস্থ থাকতে পারি, সেই সব ক্ষেত্রে খরচা করাটা বেশি শ্রেয় । এখন এটাও দেখা যাচ্ছে যে, ধর্ম বিদ্বেষ কিংবা কোন রাজনৈতিক বিদ্বেষ নেই কারো মনেই । সবাই এক হয়ে এই পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করছে । এছাড়া পরিবেশেরও অনেকটাই উন্নতি হয়েছে । এই ঝড় থেমে যাওয়ার পর আমরা যদি সবাই এইভাবেই চলতে পারি । তাহলে সমাজ, দেশ তথা সারা বিশ্বে এক নতুন দিনের সূচনা করবে, যেটা সমস্ত জীবের জন্যই ভালো হবে ।