প্রসূন- কী গো, আজ প্রিয়মের স্কুলের স্পোর্টস ডে ছিল না? প্রীতি- ওয়াও! তাই নাকি, প্রিয়ম? স্পোর্টসে ও কী প্রাইজ পেল বৌদি? জুঁই- তোমার ভাইপোকেই জিগ্যেস করো! প্রীতি- কীরে প্রিয়ম? প্রিয়ম- জানো পিসি, রাজীভ রানিং এ ফার্স্ট হয়েছে! পরমা- দাদু তুমি তাহলে সেকেণ্ড? প্রিয়ম- না না! সেকেণ্ড তো সৌরীশ! পরিমল- তারমানে দাদু থার্ড হয়েছে। ব্রোঞ্জ মেডেল! বাঃ! প্রিয়ম- নাতো, থার্ড তুরীয়া। প্রসূন- যাঃ, তুই কিচ্ছু প্রাইজ পাস নি! প্রিয়ম- আমি দৌড়েছি খুব জোরে, কিন্তু পাঁচজন আরো জোরে দৌড়েছে বাবা! তবে আমিও প্রাইজ পেয়েছি! সবাইকে মিস চকলেট দিয়েছেন! জুঁই- ব্যস, চকলেট প্রাইজ পেয়েছে ছেলে, আর কী চাও! প্রসূন- আর কী ইভেন্ট ছিল, রানিং ছাড়া? প্রিয়ম- ফ্রগ রেস ছিল, কিন্তু অইভাবে লাফিয়ে যেতে আমার ভাল লাগেনি, উঠে চলে এসেছি। প্রীতি- হিহিহি সো কিউট! বেশ করেছিস! পরমা- ওসব ব্যাং লাফানো আবার কী ইভেন্ট! আমাদের সময় স্কিপিং রেসে আমি বরাবর ফার্স্ট হতাম! পরিমল- সেই লাফানোর অভ্যাস এখনো চলছে তোমার! পরমা- ব্যস, আবার শুরু হয়ে গেল! তুমি নিজে স্পোর্টসে কটা প্রাইজ পেয়েছিলে শুনি? পরিমল- আমি লং ডিস্টান্স রানার ছিলাম বুঝলে! প্রসূন- বাবা সত্যিই লম্বা দৌড়ের ঘোড়া। প্রিয়ম- আরো ছিল, লেমন অ্যান্ড স্পুন। আমার লেমনটা পড়ে গেল, নইলে আমি ফার্স্ট হতাম। ব্রোঞ্জ পেতাম। প্রীতি- ব্রোঞ্জ নয়, ফার্স্ট হলে গোল্ড পেতিস। এনিওয়ে, আজ সারাদিন মজা করেছিস তো? প্রিয়ম- খু-উ-উ-ব!! জুঁই- সারাদিন রোদে ছোটাছুটি করেছে, মজা তো হবেই! আমি যদি যেতাম… প্রসুন- এই তো বললে পেরেন্টস অ্যালাউড নয়! কী করে যেতে তুমি? জুঁই- অ্যালাউড নয়, কিন্তু রাজীবের মা গেছিল। ওই চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ছেলেটাকে ফার্স্ট করিয়ে দিল কেমন! প্রসুন- ও কাম অন! ঐভাবে ফার্স্ট করিয়ে কী লাভ! জুঁই- কী আবার লাভ! প্রাইজটা পেল তো! বাচ্চাদের মনে কম্পিটিশনটা এইভাবেই তো আসবে! প্রীতি- বৌদি, তুমি ওই বাচ্চাদের মনে কম্পিটিশন ঢোকানোকে সাপোর্ট করছ! জুঁই- আজকের যুগটাই তো কম্পিটিশনের! হেরে গেলে একেবারেই বাদ পড়ে যাবে! তাই উপায় কী! পরমা- আহা বেচারা! এখন তো ওদের আনন্দে খেলাধুলো করবারই বয়স! এখন এত চাপ দিও না! জুঁই- মা, কিছু মনে করবেন না, এখন আর আপনাদের যুগ নয়, সময় পাল্টে গেছে। ওই আপনার ছেলেও তো চায় প্রিয়ম বড় হয়ে কম্প্যুটার ইঞ্জিনিয়ার হোক। সেটাও তো প্রেশার! প্রসূন- কী মুস্কিল, ওটা তো আমার একটা ইচ্ছা শুধু! জুঁই- আচ্ছা বাবা, মা, আপনারাই বলুন, প্রসূন আর প্রীতি যখন ছোট ছিল, তখন আপনারা কী চাইতেন? ওরা বড় হয়ে কী হবে? পরিমল- আমি কিচ্ছু চাইনি। বড় হোক, নিজেরা কিছু করেকম্মে খাক, তাতেই হত। পরমা- তুমি থামো! তুমি কোনোদিন কিচ্ছু প্ল্যানিং করেছ? আমি কিন্তু চাইতাম আমাদের ছেলেমেয়েরা বড় হবে! পরিমল- আরে আমিও সেটাই তো বললাম! পরমা- তোমার বড় হওয়া মানে বয়সে বড়। আমি বলছে সম্মানে বড়। প্রসূন- আচ্ছা মা, ঠিক আছে। বুঝেছি। কিন্তু এখন আরো স্পেসিফিক চিন্তা করতে হয় বাবা মা দের। জুঁই- একজ্যাক্টলি। কোন স্ট্রীমে পড়বে, তার জন্য কী ট্যুশন দরকার… প্রীতি- এক মিনিট বৌদি, তোমরা প্রিয়মকে জিগ্যেস করেছ যে ও কী হতে চায়? প্রিয়ম- আমাকে কেউ কিছু জিগ্যেস করেনি। প্রীতি- গ্রেট! আচ্ছা, আমি জিগ্যেস করছি, তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও? প্রিয়ম- আমি পাইলট হবো। জুঁই- গাড়িতে করে পাহাড়ে চড়তে গিয়ে বমি করে ফেলিস, তুই হবি পাইলট! তবেই হয়েছে! প্রিয়ম- কেন মা, পাইলট হলে বমি করতে দেবে না? পরিমল- কেন দেবে না! তবে প্লেন চালাতে চালাতে বমি করলে অসুবিধা হবে যে! প্রিয়ম- তাহলে আমি জ্যুলজিস্ট হবো। জ্যু তে থাকবো। পরমা- সেকি দাদু, চিড়িয়াখানায় কেউ থাকে নাকি! জুঁই- হ্যাঁ, ওর বন্ধুগুলো তো বাঁদর, তারা থাকে। তাই নারে? প্রসূন- বেচারা আজ স্পোর্টসে প্রাইজ পায়নি বলে তুমি এত রিয়াক্ট করছ কেন! জুঁই- আচ্ছা, আমি চুপ করলাম। তোমরা ডিসাইড করো ও কী হবে। প্রীতি- ওর খেলাধুলো করতে ভাল লাগে না, তাই না? প্রিয়ম- ভাল লাগে তো! খেলি তো! পরিমল- এই তো! গুড বয়! খুব খেলাধুলো করবে! তোমার বয়সে আমিও খুব খেলতাম। তা কী খেলতে ভাল লাগে তোমার? প্রিয়ম- সবকিছু। ফুটবল, ক্রিকেট, বেসবল… প্রীতি- বেসবল আবার কথায় পেলি রে! প্রিয়ম- কেন, ভিডিও গেম আছে তো! পরমা- বোঝো কাণ্ড! দাদু তুমি ভিডিও গেমের কথা বলছ এতক্ষণ? প্রসূন- বুঝলে তো মা, অবস্থাটা? পরিমল- কেন দাদু, মাঠে খেলতে ভাল লাগে না তোমার? প্রিয়ম- মাঠ এখানে কই দাদু? পরিমল- তোমাদের স্কুলে মাঠ নেই? প্রিয়ম- না তো! একটা সিমেন্ট গ্রাউণ্ড আছে, ছোট। সেখানে আমাদের লেফট রাইট করতে শেখায় পিটি স্যার। পরমা- পিটি মানে কী জানো? প্রিয়ম- হ্যাঁ, পিটুনি। স্যার খুব রাগী। কেউ লাইনে কথা বললেই পেটায়! প্রীতি- হিহিহিহি! পিটি মানে পিটুনি! এটা দারুণ! পরিমল- হাসির কথা নয় রে প্রীতি! খুব চিন্তার বিষয়! দাদু, পিটি মানে ফিজিক্যাল ট্রেনিং! শরীরশিক্ষা! প্রসুন- তোদের যে পিটি সাবজেক্ট রয়েছে, নম্বর দেয়, সেটাতে কী হয়? প্রিয়ম- আমাদের শুধু সাওধান-বিশ্রাম-কদমতল-ডাইনেমুড়-বাঁয়েমুড়-পিছেমুড়, আর বড়দের সামনেসে তেজ চল একদো একদো প্যারেড থাম একদো। পরমা- আর ব্যায়াম-ট্যায়াম করায়না? প্রিয়ম- হ্যাঁ ইয়োগা বলে ব্যায়াম না। পদমাসোনা, বজরাসোনা করতে হয়। প্রীতি- হিহিহি ও সোনা আমার! হাউ সুইট! প্রসূন- তোর সুইট লাগল! আমার তো ব্লাড সুগার বেড়ে গেল! হ্যাঁরে প্রিয়ম, এই নামগুলো কে শিখিয়েছে রে? প্রিয়ম- কেন পিটিস্যার! প্রসুন- আমি কালই যাচ্ছি তোদের স্কুলে। পরিমল- সে নাহয় যাস, কিন্তু ভাবছি এবার থেকে প্রিয়মকে খেলাতে নিয়ে যেতে হবে কোথাও। আচ্ছা, ওপাড়ায় একটা বড় মাঠ ছিল না? পরমা- ছিল বলছ কেন? এখনো আছে। মেলাটেলা হয়, দুর্গাপুজোও ওখানেই তো হয়। পরিমল- কিন্তু ওর একা যাওয়ার পক্ষে একটু দূর হবে। কেউ নিয়ে গেলে… পরমা- তুমিই নিয়ে যাও না কেন বিকেলবেলা? পরিমল- আমি! আমি আবার… পরমা- বুঝেছি। শুধু উপদেশ দিতে আছ, কাজের বেলায় নেই। পরিমল- না না, তা কেন, আমি কি কাজে ভয় পাই! আচ্ছা আমিই যাব। প্রীতি- এইতো চাই বাবা! প্রিয়ম- দিদু তুমিও চল, নইলে দাদু বন্ধুদের সংগে গল্প করতে বসে যাবে, আমায় খেলাবে না! পরমা- দেখেছ! নাতি তোমায় ঠিক চিনেছে! পরিমল- না, আমি কারও সংগে গল্প করব না। প্রমিস! প্রসূন- তাহলে কাল থেকেই? জুঁই- আচ্ছা, আমি একটা কথা বলি? ও যে মাঠে খেলতে যাবে রোজ, তাহলে ওর হয়ে ট্যুশনগুলো কি তুমি অ্যাটেণ্ড করবে? প্রসূন- আরে, ওসব ম্যানেজ হয়ে যাবে, চিন্তা কোরোনা। টাইম স্লট বদলে দেব। জুঁই- বেশ। আর স্কুলের হোমওয়ার্ক? প্রসূন- ওক্কে, আমি ওর হোমোয়ার্ক করাবার দায়িত্ব নিলাম। জুঁই- আচ্ছা। খুব ভাল কথা, তাহলে আমার আর কিছু বক্তব্য নেই। প্রিয়ম- মা, তুমিও চল না আমাদের সঙ্গে! জুঁই- না বাবা, তোরা যা। অন্ততঃ একদিন মাঠে গিয়ে খেল, আমি শুনেও শান্তি পাই! পরিমল- তাহলে তাই হোক, কাল আমরা দুজন বিকেলে মাঠে যাব। শুনছ, আমার ট্র্যাক স্যুটটা আর জুতোজোড়া বার করে রেখো! আর এক্সারসাইজের ব্যাগটা। একটা জলের বোতল লাগবে। পরমা- ভগবান! নাতিকে খেলাতে নিয়ে যাবে, নাকি এভারেস্টে চড়তে যাবে!! পরিমল- ওই হলো, সাফল্যের শিখরে চড়বে আমাদের প্রিয়ম!!