• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক প্রকল্পশ্রীরিয়্যাল ধারাবাহিকে প্রকল্প ভট্টাচার্য (পর্ব – ৭ ।। প্রথম ভাগ) 

নাম: পরিমলবাবুর পরিবারকথা

পর্ব ৭: ছেলেবেলা

মুখ্য চরিত্র: পরিমলবাবু (বয়স পঁয়ষট্টি, ক্লার্কের চাকরি করে রিটায়ার করেছেন) পরমা (পরিমলবাবুর স্ত্রী, বয়স পঞ্চান্ন, গৃহবধূ) প্রসূন (ছেলে, বয়স ত্রিশ, আইটি ফার্মে চাকরিরত) জুঁই (পুত্রবধূ, বয়েস পঁচিশ, স্কুল টিচার) প্রীতি: (মেয়ে, বয়স পঁচিশ, কলেজে পড়ে) প্রিয়ম (নাতি, বয়েস সাত বছর, ক্লাস টু)
(রাতে খাওয়ার টেবিলে)
প্রসূন- কী গো, আজ প্রিয়মের স্কুলের স্পোর্টস ডে ছিল না?
প্রীতি- ওয়াও! তাই নাকি, প্রিয়ম? স্পোর্টসে ও কী প্রাইজ পেল বৌদি?
জুঁই- তোমার ভাইপোকেই জিগ্যেস করো!
প্রীতি- কীরে প্রিয়ম?
প্রিয়ম- জানো পিসি, রাজীভ রানিং এ ফার্স্ট হয়েছে!
পরমা- দাদু তুমি তাহলে সেকেণ্ড?
প্রিয়ম- না না! সেকেণ্ড তো সৌরীশ!
পরিমল- তারমানে দাদু থার্ড হয়েছে। ব্রোঞ্জ মেডেল! বাঃ!
প্রিয়ম- নাতো, থার্ড তুরীয়া।
প্রসূন- যাঃ, তুই কিচ্ছু প্রাইজ পাস নি!
প্রিয়ম- আমি দৌড়েছি খুব জোরে, কিন্তু পাঁচজন আরো জোরে দৌড়েছে বাবা! তবে আমিও প্রাইজ পেয়েছি! সবাইকে মিস চকলেট দিয়েছেন!
জুঁই- ব্যস, চকলেট প্রাইজ পেয়েছে ছেলে, আর কী চাও!
প্রসূন- আর কী ইভেন্ট ছিল, রানিং ছাড়া?
প্রিয়ম- ফ্রগ রেস ছিল, কিন্তু অইভাবে লাফিয়ে যেতে আমার ভাল লাগেনি, উঠে চলে এসেছি।
প্রীতি- হিহিহি সো কিউট! বেশ করেছিস!
পরমা- ওসব ব্যাং লাফানো আবার কী ইভেন্ট! আমাদের সময় স্কিপিং রেসে আমি বরাবর ফার্স্ট হতাম!
পরিমল- সেই লাফানোর অভ্যাস এখনো চলছে তোমার!
পরমা- ব্যস, আবার শুরু হয়ে গেল! তুমি নিজে স্পোর্টসে কটা প্রাইজ পেয়েছিলে শুনি?
পরিমল- আমি লং ডিস্টান্স রানার ছিলাম বুঝলে!
প্রসূন- বাবা সত্যিই লম্বা দৌড়ের ঘোড়া।
প্রিয়ম- আরো ছিল, লেমন অ্যান্ড স্পুন। আমার লেমনটা পড়ে গেল, নইলে আমি ফার্স্ট হতাম। ব্রোঞ্জ পেতাম।
প্রীতি- ব্রোঞ্জ নয়, ফার্স্ট হলে গোল্ড পেতিস। এনিওয়ে, আজ সারাদিন মজা করেছিস তো?
প্রিয়ম- খু-উ-উ-ব!!
জুঁই- সারাদিন রোদে ছোটাছুটি করেছে, মজা তো হবেই! আমি যদি যেতাম…
প্রসুন- এই তো বললে পেরেন্টস অ্যালাউড নয়! কী করে যেতে তুমি?
জুঁই- অ্যালাউড নয়, কিন্তু রাজীবের মা গেছিল। ওই চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ছেলেটাকে ফার্স্ট করিয়ে দিল কেমন!
প্রসুন- ও কাম অন! ঐভাবে ফার্স্ট করিয়ে কী লাভ!
জুঁই- কী আবার লাভ! প্রাইজটা পেল তো! বাচ্চাদের মনে কম্পিটিশনটা এইভাবেই তো আসবে!
প্রীতি- বৌদি, তুমি ওই বাচ্চাদের মনে কম্পিটিশন ঢোকানোকে সাপোর্ট করছ!
জুঁই- আজকের যুগটাই তো কম্পিটিশনের! হেরে গেলে একেবারেই বাদ পড়ে যাবে! তাই উপায় কী!
পরমা- আহা বেচারা! এখন তো ওদের আনন্দে খেলাধুলো করবারই বয়স! এখন এত চাপ দিও না!
জুঁই- মা, কিছু মনে করবেন না, এখন আর আপনাদের যুগ নয়, সময় পাল্টে গেছে। ওই আপনার ছেলেও তো চায় প্রিয়ম বড় হয়ে কম্প্যুটার ইঞ্জিনিয়ার হোক। সেটাও তো প্রেশার!
প্রসূন- কী মুস্কিল, ওটা তো আমার একটা ইচ্ছা শুধু!
জুঁই- আচ্ছা বাবা, মা, আপনারাই বলুন, প্রসূন আর প্রীতি যখন ছোট ছিল, তখন আপনারা কী চাইতেন? ওরা বড় হয়ে কী হবে?
পরিমল- আমি কিচ্ছু চাইনি। বড় হোক, নিজেরা কিছু করেকম্মে খাক, তাতেই হত।
পরমা- তুমি থামো! তুমি কোনোদিন কিচ্ছু প্ল্যানিং করেছ? আমি কিন্তু চাইতাম আমাদের ছেলেমেয়েরা বড় হবে!
পরিমল- আরে আমিও সেটাই তো বললাম!
পরমা- তোমার বড় হওয়া মানে বয়সে বড়। আমি বলছে সম্মানে বড়।
প্রসূন- আচ্ছা মা, ঠিক আছে। বুঝেছি। কিন্তু এখন আরো স্পেসিফিক চিন্তা করতে হয় বাবা মা দের।
জুঁই- একজ্যাক্টলি। কোন স্ট্রীমে পড়বে, তার জন্য কী ট্যুশন দরকার…
প্রীতি- এক মিনিট বৌদি, তোমরা প্রিয়মকে জিগ্যেস করেছ যে ও কী হতে চায়?
প্রিয়ম- আমাকে কেউ কিছু জিগ্যেস করেনি।
প্রীতি- গ্রেট! আচ্ছা, আমি জিগ্যেস করছি, তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও?
প্রিয়ম- আমি পাইলট হবো।
জুঁই- গাড়িতে করে পাহাড়ে চড়তে গিয়ে বমি করে ফেলিস, তুই হবি পাইলট! তবেই হয়েছে!
প্রিয়ম- কেন মা, পাইলট হলে বমি করতে দেবে না?
পরিমল- কেন দেবে না! তবে প্লেন চালাতে চালাতে বমি করলে অসুবিধা হবে যে!
প্রিয়ম- তাহলে আমি জ্যুলজিস্ট হবো। জ্যু তে থাকবো।
পরমা- সেকি দাদু, চিড়িয়াখানায় কেউ থাকে নাকি!
জুঁই- হ্যাঁ, ওর বন্ধুগুলো তো বাঁদর, তারা থাকে। তাই নারে?
প্রসূন- বেচারা আজ স্পোর্টসে প্রাইজ পায়নি বলে তুমি এত রিয়াক্ট করছ কেন!
জুঁই- আচ্ছা, আমি চুপ করলাম। তোমরা ডিসাইড করো ও কী হবে।
প্রীতি- ওর খেলাধুলো করতে ভাল লাগে না, তাই না?
প্রিয়ম- ভাল লাগে তো! খেলি তো!
পরিমল- এই তো! গুড বয়! খুব খেলাধুলো করবে! তোমার বয়সে আমিও খুব খেলতাম। তা কী খেলতে ভাল লাগে তোমার?
প্রিয়ম- সবকিছু। ফুটবল, ক্রিকেট, বেসবল…
প্রীতি- বেসবল আবার কথায় পেলি রে!
প্রিয়ম- কেন, ভিডিও গেম আছে তো!
পরমা- বোঝো কাণ্ড! দাদু তুমি ভিডিও গেমের কথা বলছ এতক্ষণ?
প্রসূন- বুঝলে তো মা, অবস্থাটা?
পরিমল- কেন দাদু, মাঠে খেলতে ভাল লাগে না তোমার?
প্রিয়ম- মাঠ এখানে কই দাদু?
পরিমল- তোমাদের স্কুলে মাঠ নেই?
প্রিয়ম- না তো! একটা সিমেন্ট গ্রাউণ্ড আছে, ছোট। সেখানে আমাদের লেফট রাইট করতে শেখায় পিটি স্যার।
পরমা- পিটি মানে কী জানো?
প্রিয়ম- হ্যাঁ, পিটুনি। স্যার খুব রাগী। কেউ লাইনে কথা বললেই পেটায়!
প্রীতি- হিহিহিহি! পিটি মানে পিটুনি! এটা দারুণ!
পরিমল- হাসির কথা নয় রে প্রীতি! খুব চিন্তার বিষয়! দাদু, পিটি মানে ফিজিক্যাল ট্রেনিং! শরীরশিক্ষা!
প্রসুন- তোদের যে পিটি সাবজেক্ট রয়েছে, নম্বর দেয়, সেটাতে কী হয়?
প্রিয়ম- আমাদের শুধু সাওধান-বিশ্রাম-কদমতল-ডাইনেমুড়-বাঁয়েমুড়-পিছেমুড়, আর বড়দের সামনেসে তেজ চল একদো একদো প্যারেড থাম একদো।
পরমা- আর ব্যায়াম-ট্যায়াম করায়না?
প্রিয়ম- হ্যাঁ ইয়োগা বলে ব্যায়াম না। পদমাসোনা, বজরাসোনা করতে হয়।
প্রীতি- হিহিহি ও সোনা আমার! হাউ সুইট!
প্রসূন- তোর সুইট লাগল! আমার তো ব্লাড সুগার বেড়ে গেল! হ্যাঁরে প্রিয়ম, এই নামগুলো কে শিখিয়েছে রে?
প্রিয়ম- কেন পিটিস্যার!
প্রসুন- আমি কালই যাচ্ছি তোদের স্কুলে।
পরিমল- সে নাহয় যাস, কিন্তু ভাবছি এবার থেকে প্রিয়মকে খেলাতে নিয়ে যেতে হবে কোথাও। আচ্ছা, ওপাড়ায় একটা বড় মাঠ ছিল না?
পরমা- ছিল বলছ কেন? এখনো আছে। মেলাটেলা হয়, দুর্গাপুজোও ওখানেই তো হয়।
পরিমল- কিন্তু ওর একা যাওয়ার পক্ষে একটু দূর হবে। কেউ নিয়ে গেলে…
পরমা- তুমিই নিয়ে যাও না কেন বিকেলবেলা?
পরিমল- আমি! আমি আবার…
পরমা- বুঝেছি। শুধু উপদেশ দিতে আছ, কাজের বেলায় নেই।
পরিমল- না না, তা কেন, আমি কি কাজে ভয় পাই! আচ্ছা আমিই যাব।
প্রীতি- এইতো চাই বাবা!
প্রিয়ম- দিদু তুমিও চল, নইলে দাদু বন্ধুদের সংগে গল্প করতে বসে যাবে, আমায় খেলাবে না!
পরমা- দেখেছ! নাতি তোমায় ঠিক চিনেছে!
পরিমল- না, আমি কারও সংগে গল্প করব না। প্রমিস!
প্রসূন- তাহলে কাল থেকেই?
জুঁই- আচ্ছা, আমি একটা কথা বলি? ও যে মাঠে খেলতে যাবে রোজ, তাহলে ওর হয়ে ট্যুশনগুলো কি তুমি অ্যাটেণ্ড করবে?
প্রসূন- আরে, ওসব ম্যানেজ হয়ে যাবে, চিন্তা কোরোনা। টাইম স্লট বদলে দেব।
জুঁই- বেশ। আর স্কুলের হোমওয়ার্ক?
প্রসূন- ওক্কে, আমি ওর হোমোয়ার্ক করাবার দায়িত্ব নিলাম।
 জুঁই- আচ্ছা। খুব ভাল কথা, তাহলে আমার আর কিছু বক্তব্য নেই।
প্রিয়ম- মা, তুমিও চল না আমাদের সঙ্গে!
জুঁই- না বাবা, তোরা যা। অন্ততঃ একদিন মাঠে গিয়ে খেল, আমি শুনেও শান্তি পাই!
পরিমল- তাহলে তাই হোক, কাল আমরা দুজন বিকেলে মাঠে যাব। শুনছ, আমার ট্র্যাক স্যুটটা আর জুতোজোড়া বার করে রেখো! আর এক্সারসাইজের ব্যাগটা। একটা জলের বোতল লাগবে।
পরমা- ভগবান! নাতিকে খেলাতে নিয়ে যাবে, নাকি এভারেস্টে চড়তে যাবে!!
পরিমল- ওই হলো, সাফল্যের শিখরে চড়বে আমাদের প্রিয়ম!!

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।