• Uncategorized
  • 0

“পুরুষ” নিয়ে বিশেষ সংখ্যায় সোহিনী গোস্বামী

জীবনের গল্প

মেয়েটা জিওইনফরম্যাটিক্স। যাকে বলে ঝকঝকে। শক্ত। স্মার্ট। পড়া শেষ করেই এক্সিকিউটিভ পোস্টে।
মেয়েটির বাবা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পাব্লিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার। পাড়ার ক্লাব, পুজোর কালচারাল কমিটি, আত্মীয়মহল, সবার সব কাজে হই হই, সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়ায় পটু।
মেয়ের প্রথম পোস্টিং। বাবা সঙ্গে গেছেন গুছিয়ে দিতে। সে যে বাপের কলিজার টুকরো।সাউথে আসা, তাই রুটিন চেকআপ করতে এলেন ।
কর্কট রোগ।
চলল হাসি মুখে লড়াই। আর সব সময় মনে করানো কেউ মুখ কালো করবে না। উঁহু।
মেয়েটা চিঠি লেখে বাবাকে।
বাবা তোমায় দিলাম খোলা চিঠি :-
ডিয়ার বাবা,
তোমাকে নিয়ে যে কোনদিন কিছু লিখতে হবে কখনওই ভাবিনি। নিজের অন্তর্মুখী স্বভাবের দরুন আমিও কোনদিনই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারিনা। নিজের আবেগকে গদগদ ভাষায় সর্বসমক্ষে প্রতিভাত করা আমার ধাতে সয় না।
তবে কি আমি পুড়ি না?
তবে কি আমার আবেগ নেই?
সবটাই আছে। যেমন মুক্তো থাকে ঝিনুকের আবডালে।
আজ তুমি শান্তির দেশে রয়েছ। আমি তোমার মতো কখনোই বাকপটু ছিলাম না। সবসময় বলতে মেয়েটা আমার মুখচোরা।
ছোটবেলায় দেখতাম সবার বাবা মানে বিরাট শাসন , কিন্তু আমার কাছে বাবা মানেই ঘুরতে যাওয়া, পড়াশুনা না করা,রাত করে গল্প করা,খুশির দমকা হাওয়া। বরং মা-ই আমাকে কড়া হাতে শাসন করেছেন ।
বাবা বলে, আগে মানুষ হও, মানুষকে মর্যাদা দাও ও তাঁদের পাশে থাক। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া মানে টাকা,বাড়ি ,গাড়ি নয়। আজকে, বাবা, বুঝতে পারি মানুষের পাশে থাকার তৃপ্তি ।এখনো তোমার বন্ধুরা,রিক্সাওয়ালা,অটোওয়ালা, সবজিওয়ালা দেখা হলেই তোমার নাম করে। ওদের মাঝে তুমি ভীষণ ভাবে বেঁচে আছ। কী করে , বাবা, তোমার ওইটুকু সামর্থ্য নিয়ে তুমি ওদের পাশে দাঁড়াতে ?
জীবনে প্রতিষ্ঠিতর সংজ্ঞায় আমি আছি কিনা জানিনা। কিন্তু যে সময় আর পাঁচটা ছেলেমেয়ে জীবনের সিলেবাসে প্রথম পাঠ নিতে শুরু করেছে, সেই সময়, তুমি বাবা, তোমার এই মেয়েটার কাঁধে পুরো জীবনের ভারটা একলা বওয়ার ব্যবস্থা করে গেলে আর দুর থেকে যেন বলছ “পড়ে যেতে যেতেই শিখবি রে বোকা!”
সত্যি এতটাই কি প্রয়োজন ছিল?
না বাবা, তোমার মত শৌখিন ও দিলদার হয়ে উঠতে পারিনি।
এটাও তোমার চিরকালের অভিযোগ ছিল ।
তুমি আবার ফিরে এস। আমরা হারিয়ে যাই পুরীর সমুদ্রতটে বা কুলুমানালির পাহাড় বা মুম্বাইয়ের গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়ার কাছে , যেখানে বসে তোমার না-বলা গল্পটা শেষ করবে, যেটা বলতে বলতে সবসময় তুমি ঘুমিয়ে পড়তে। হ্যাঁ বাবা , আমি নিজেকে আবার শুধরে নেব। তুমি এসে দেখ আমি কেমন বড়ো হয়ে গেছি ,তোমার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কেমন চলতে পারি,একটি বার আমাদের পাশে এসে দাঁড়াও……।
ইতি
বুরু
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।