• Uncategorized
  • 0

“পুরুষ” নিয়ে বিশেষ সংখ্যায় দেবশ্রী ভট্টাচার্য

 আকাশ থেকে ঝুর ঝুর করে ফুলের পাপড়ি ঝরে পড়ল । পুরাকালে শোনা যায় সাঙ্ঘাতিক কোনো অসাধ্য সাধন করলে এমন করে আকাশ থেকে পুষ্পবৃষ্টি করতেন । এই ঘোর কলিকালে কিসের জন্য এই পুষ্পবৃষ্টি ? কিছু না, আসলে এতদিন ধরে জানা ছিল সীমান্তে যারা মেশিন গান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে , তারাই দেশের সৈনিক । সেই তকমাটা হঠাৎ করেই কিছু সাদা পোশাক পরা দাক্তার নার্স আর সাস্থ্যকর্মীরা ছিনিয়ে নিয়েছে তাই বোধহয় এই সামরিক কায়দায় অভিবাদন । 
ডক্টর দত্ত এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলেন সবই গাঁদা ফুলের কুচো পাপড়ি । একটাও আস্ত ফুল দেখতে পেলেন না । ফিরেই আসছিলেন হঠাৎ দেখলেন পায়ের কাছেই পড়ে আছে একটা সাদা চন্দ্রমল্লিকা । মনটা বেশ খুশি হয়ে গেল । কুড়িয়ে নিয়ে পকেটে রাখলেন , আজ প্রায় বারোদিন হয়ে গেল , ছেলেটার সাথে কথা হয়নি । আজও যে হবে তাঁর কোনো মানে নেই। 
ডক্টর দত্ত ফুলটার দিকে তাকালেন , ফুল অর্ঘদীপের বড় প্রিয়। অর্ঘ আর দীপালি , তাই নাম মিলিয়ে ছেলের নাম রেখেছিলেন অর্ঘদীপ। প্রথম দু তিন বছরে কিছু বুঝতে পারেননি , ছেলেটা দিনে ডিউটি , রাতে ক্লান্ত শরীর বিছানায় ছুঁড়ে ফেলা । আবার কখনো ডবল শিফটে কাজ – এই ভাবেই চলছিল ।
দু তিন বছর বয়স হয়ে গেল , তবু ছেলে কথা বলে না। অকারণে চিৎকার করে। জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলে। ডক্টর দত্ত ভাবেন বাচ্চার খেয়াল । বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে । 
কিছুই ঠিক হল না। পাঁচ বছর বয়স হয়ে গেল । তবু ছেলেটার কোনো পরিবর্তন হল না। সে তার নিজের খেয়ালেই থাকে। ডক্টর দত্ত বুঝতে পারেন , একটা বড় ভুল হয়ে গেছে। খুব ভালো করেই বুঝলেন আসলে অভাগা ছেলেটার তিনি ও তাঁর স্ত্রী ছাড়া এই বিশাল পৃথিবীতে আর কেউ নেই । বিশ্বাস করে যে পরিচারিকাকে রেখেছিলেন , সে যে সুযোগ পেলেই ছেলেটাকে নির্মম ভাবে মারত – সেটাও তিনি দেখেছেন গোপন ক্যামেরাতে । ছেলেটা আগেই হাত বাড়িয়ে বহুবার ব্যথা ব্যথা বলে দেখিয়েছিল তাকে – কিন্তু তিনি বিশেষ আমল দেননি। সবই শিশুর খেয়াল । কী জানি দেশের বাড়িতে কী চলছে ওর সাথে ।  
অজ পাড়া গাঁয়ে বাড়ি, দেশের বাড়িতে দাদার কাছে রেখে এসেছেন ছেলেকে । এখানে স্বামী স্ত্রী দুজনেই দিনরাত ডিউটি করছেন করনার জন্য। ওখানে ঠিকমত সিগন্যাল পাওয়া যায় না। তবে পেলেও লাভ নেই , ছেলেটা ফোনে  কথা বলতে পারে না। হয়ত বুঝতেও পারে না বাবা ফোন করেছে। অবান্তর কথা বলে যায় , তবু সেটাই ভালো লাগে ডক্টর দত্তের। 
আজ ঠিক করে রেখেছেন একটা ভিডিও কল করবেন । ওখানে নেটের দেখা পাওয়া আর ঈশ্বরের দেখা পাওয়া সমান । তবু ভাইপোকে বলে রেখেছেন নেট ঠিকঠাক চললেই যেন একটা মিসড কল দেন। 
মিসড কল এল একটা । ডক্টর দত্ত তাড়াতাড়ি একটা কেবিনে ঢুকে দরজা বন্ধ করলেন। এখানেও নেট আসে না ঠিকমত । তবে এখন ভাগ্য সহায় । 
ওই তো দেখা যাচ্ছে অর্ঘদীপকে একটা কৌটোর ঢাকাকে বেবলেটের মত ঘুরিয়ে চলেছে। 
  • দীপ দীপ দেখ ,বাবা !
ডক্টর দত্ত চিৎকার করে উঠলেন ।
 অর্ঘদীপ বোধহয় দেখতে পেল না। ডক্টর দত্ত আবার চিৎকার করলেন 
  • দীপ ,দীপ ! 
এবার একবার তাকাল । কী বুঝল কে জানে মোবাইল স্ক্রিনের ওপর একটা থাবড়া মারল । এটাই হয়ত ছেলের আদর 
  • দেখ দীপ তোমার জন্য কী এনেছি ! 
 ডক্টর দত্ত পকেটে হাত দিয়ে থমকে গেলেন , আসলে খেয়াল হয়নি, তিনি পিপিই পরে আছেন । প্রথম প্রথম অসুবিধা হত। এখন এমন অভ্যাস হয়ে গেছে যে খেয়ালই হয়নি । ঘামে জামাটা পুরো ভিজে আছে । ফুলতা নেতিয়ে একেবারে নিজের স্বাভাবিক অবস্থাই হারিয়ে ফেলেছে। পাপড়িগুলো অনেকগুলোই জলে ভিজে আলাদা হয়ে গেছে। 
  • দেখ দীপ !
তাও ডক্টর দত্ত চেষ্টা করলেন টেবিলে ফুলটাকে জিগস অব পাজেলের মত সাজিয়ে একটা আকার দেওয়ার । 
অর্ঘদীপ সেদিকে হাঁ করে খানিকটা চেয়ে রইল ডক্টর নায়েক হতাশ হলেন । ঠিক বুঝতে পারলেন না, দীপ কি বুঝতে পারল না, নাকি তিনি ঠিক করে সাজাতে পারলেন না। আবার একবার গুটিয়ে যাওয়া পাপড়িগুলো টেনে টেনে সোজা করে দেখালেন , না দীপের মুখে কোনো উত্তর নেই।
বন্ধ দরজায় টোকা দিচ্ছে কেউ, ডিউটিতে যেতে হবে । ফোনটা বন্ধই করতে গেলেন । ঠিক সেই সময় অর্ঘদীপ চিৎকার করে উঠল এফ ফর ফ্লাওয়ার । ফ্লাওয়ার মানে ফুল । 
চোখের কোণা থেকে কিছু একটা গড়িয়ে এল ঘাম না জল কে জানে!                
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।