• Uncategorized
  • 0

পাঠ প্রতিক্রিয়ায়: বিকাশ দাস ( বিল্টু )

গ্রন্থ  : লোকসংগীত শুনি

কবি : সুবীর সরকার

গভীর রাত ;মন কিছুতেই  বসছিলনা।নানান চিন্তা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল। পুরানো ডাইরি বের করে স্মৃতি চারন করার ইচ্ছে জাগল, বাইরে অঝোরে বৃষ্টিধারা! রোমান্টিকতা একদম নেই।কি যেন নেই !স্তব্ধতা,  কিসের শুন্যতা গ্রাস করে আছে ;অতৃপ্ত আত্মারা  ঘুরে বেড়াচ্ছে হয়ত! ভোর হওয়ার পথে- কোন হদিস নেই আমার ।-তবে  আমি বুঝি আমি’ই নেই? রাস্তায় হঠাৎ গুলির আওয়াজ ;রাজনৈতিক অস্তিরতা।    একটা হট্টগোল, না।মিলিয়ে গেল।ঠিক তখনি আমার চোখের সামনে সুবীর দাদার “‘লোকসংগীত  শুনি” ভাবলাম একটু মনোনিবেশ করি।ভোর হতে তখনও ঘন্টা দুয়েক বাকি।আসলে আমারও যে লোকসংগীত  খুব প্রিয়।
[সুবীর দাদার সাথেও আমরাও (বাবা কাকারা )তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা,উত্তরের জনপদ আমাকেও তাই  টানে, মানসাইয়ের  স্রোতে মিশে যাই ভোলা বাউলের লোকসংগীতে।]
বুমেরাং হয়ে যাই কিছু অকপট কথার কাছে তাইতো ;যে নদী আমার জীবন।ধরুন,আমার প্রেয়সী  !যদিও নেই,তাই নদীই আমার সব। মানসাই আমার সব।আমার যাপন চিত্রের অকপট কথার কিছু কথা ব্যক্তিগত, কিছু “জীবননদী” একাই বয়ে বেড়াই;অভিমান হয় য্খন উত্তর অধরাই থাকে –
“অন্ধকারএ পাশ ফিরতে থাকা নদী কি শুনবে
 ব্যক্তিগত হাহাকারের কথা ‘
কিংবা ;
“ইশারায় ইশারায় কথা বলি
ফন্দি থেকে সরে যাচ্ছে ফিকির “
উত্তরের সবুজ বনানী, মাঠ-ঘাট, নদী- নালা যখন সুবীর দাদার কবিতার উপকরণ হয় ;তখন সত্যিই গর্ববোধ হয়।কি অবলীলায়  সহজ কথায় ফুটিয়ে তুলেন জলদাপাড়া ,ডানকান  সাহেব  কিংবা চিলাপাতা বা আমাদের উত্তরের বাইসন, মাকনা হাতি ,করাতকল কিংবা হারিয়া  খাওয়া  –
“এসো দিকদিগন্তের কথা বলি
করাতকলের সামনে থেকে শুরু করি দীর্ঘ পদযাত্রা “
মায়ায় আবদ্ধ  জগৎ সংসারের   কিছু স্মৃতি, কিছু কথা জীবনের কোলাজ হয়;কবি লিখে ফেলেন –
“মায়ার ভিতরেই থাকি /আর ঝিঁঝিরা গান হয়ে বাজে “
থমকে যেতেই হয় ;আমরা আত্মগোপন  করে থাকি কিংবা ইথার তরঙ্গে ভেসে আসে মশা ও মাছিদের গান…
             “কবিতা একধরণের গেরিলা  যুদ্ধ “
কখনও  কখনো   প্রেমও চোরাবালি খেলে ;প্রেম কর্পূর হয়ত !বায়বীয়ও  বুঝি ! বাতায়ন কিংবা জীবন যাপনের মধুরতার  মাঝে বিষ ছোঁয়া, বিশ্বাসে অবিশ্বাসের প্রেতাত্মা হুমড়ি খায় :
“আমাদের সম্পর্কের মাঝে দূরপাল্লার গাড়ি এসে ঢোকে “
কেমন যেন কবি কবিতাকে আপন ভঙ্গিমাতে আপন করে নিলেন,জানিনা কতটা বুঝতে পেরেছি? তবে মনে হয়েছে খুবই প্রাসঙ্গিক
“প্রণাম লিখতে গিয়ে প্রনাম লিখে ফেলি
প্রতিটা সেমিনার আদতে অসুখ ও আরোগ্য বিষয়ক “
অতর্কিত  হামলা!না এ হামলা সেই হামলা না, কলমের হামলা !কবির কবিতার ধরন সত্যিই  অন্যমাত্রার।কখনো প্রেম,কিংবা সমাজ আবার বা প্রকৃতি –
             “প্রতিটি দৃশ্যের ভাঁজে নিঃসঙ্গতা “
কেন জানিনা বুকটা মোচড়  দিয়ে উঠলো !আমার জীবনের সাথে এরকম ঘটেছে  বলেই কি? -রবি ঠাকুরের প্রতি নিবেদন করে সুবীর দাদার কি সুন্দর কবিতা।বুকে হাত দিয়ে দেখি হার্ট বিট সত্যিই বেড়ে গেছে।এই না সুবীর দা!গ্রেট দাদা!!
বিরহ বরারব আমার প্রিয় ;লোকসংগীতে  জীবন গাঁথা,  বিরহ কথা আরও মধুর করে তোলে। স্মৃতির গন্ডীতে উচাটন মনে মেদুর হাওয়ায়  দোলায়।
“একজোড়া চোখের তাপে আজ পুড়ে যাচ্ছি আমি
সব কিছু তো আর মুখে বলা যায়না “
প্রাণের সাথে মিশে যাওয়া লোকসংগীত  প্রতিটা কবিতায়।কেমন শিরায় টান, মাটির টান, গানের টানে, শব্দের টানে বিভোর হতে হয়।
“আমাদের দেখা হবার কথা একটা বাঁশবনের ভিতর “
কিংবা ;
      “শোকযাত্রার প্রতিবেদন” নামক কবিতায় –
          “স্তব্ধতা ঝুকে পড়ে নিস্তব্ধতার ওপর
 `  গোপন করার মত আমার কিছুই নেই “
          শেষ কবিতা যার নামে কবিতার নামকরণ “লোকসংগীত শুনি” পুরো বইটার মাষ্টার  মাইন্ড ।
    ” কি আর করার আছে আমাদের বলো
      চারপাশে মৃতদের হাড়/এসো লোকসংগীত  শুনি “
যাইহোক শেষ করলাম।বাকিটা সুবীরদা, ভুল হলে ক্ষমা করো।আমি সামান্য শিক্ষানবিশ মাত্র। তোমরা আমাদের অনুপ্রেরণা।স্বপ্নেও  ভাবতে পারিনি তোমার সান্নিধ্যে এভাবে পাবো।পাঠকদের বলব স্বল্প জ্ঞানে এই সামান্য  ব্যক্ত করলাম ;তবে এ আমার ব্যক্তিগত অভিমত।কারণ যার জ্ঞান যতদূর। আসলে কিছুটা  ভয় পাচ্ছি।
সর্বোপরি প্রচ্ছদ শিল্পী শ্রীহরি দাদার কালো সাদার সুনিপুন শিল্প রীতি বইটিকে  প্রাণময় করে তুলেছে। আলোপৃথিবী প্রকাশনকে ধন্যবাদ  মাত্র চল্লিশ  টাকায় লোকসংগীত,লোকজীবনের  অপূর্ব এই  বইটি  পাঠকদের কাছে তুলে ধরেছেন।অবশ্যই বইটি পড়তেই পারেন।  সুবীরদা জানিও কিন্তু..
[ওঃ মা !ভোর হয়ে গেল.. মানসাইয়ে ভাটিয়ালি গান শোনা যাচ্ছে।হ্যাঁ লোকসংগীত।]
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *