• Uncategorized
  • 0

“নারী-দি-বস” উদযাপনে বিতস্তা ঘোষাল

নারী দিবস ও তারপর..

ঘটনা – ১

সকাল থেকেই বাড়িতে উৎসবের রেশ।আক আমাকে নারীর অধিকার সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে নারী ও বাইরের পৃথিবী এই নিয়ে বলতে হবে।আমি কতটা ভালো বক্তা তা জানি না,কিন্তু কোথাও কোনো বক্তব্য রাখতে গেলে হোম ওয়ার্ক ভালোভাবে করে নিয়েই যাই।ওই যে মেধা থাকলে হবে না, টিকে থাকার জন্য লেবোরিয়াস হতেই হয়।এ কথাটা ছোটো থেকেই শুনে এসেছি। শুধু মেধা আর বুদ্ধি দিয়ে বেশি দূর যাওয়া যায় না।চাই কঠোর অনুশীলন, লেগে থাকা আর নিয়মানুবর্তিতা।
যাহোক,আমিও তাই গত দুদিন ধরে পেপার তৈরিতে ব্যস্ত।
বেরবার আগে শাশুড়ি মা জানতে চাইলেন,আজ কি বলতে যাচ্ছিস?
আমি বললাম, নারী ও বাইরের পৃথিবী।
শাশুড়ি মা অনেক ক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,মেয়েদের আবার বাইরের জগত হয় নাকি!অফিস, কোর্ট কাছাড়ি, হিল্লি দিল্লি যাই করে না কেন ফিরে এসে তার পৃথিবী তো সেই বাড়ির চার দেওয়াল,আর রান্নাঘর। একটু এদিক ওদিক হলেই সংসারে গেল গেল রব।আসলে নারীর পৃথিবী একটাই।সেটা সে কল্পনায় রচনা করে।বাকিটা সব এক।
বেরবার আগে থমকে গেলাম।যুক্তি তর্ক পরিসংখ্যান যাই দিই না কেন এখনো নারীর প্রধান ভূমিকা ঘরেই।সংসারের খুঁটিনাটি থেকে যাবতীয় দায় সে তুমি বাইরে যত বড়ই সেলিব্রিটি হও…
অবশ্য নারী নিজেও কি এর থেকে বেরতে চায়!
শাশুড়ি মার কথাটা মাথার মধ্যে ঘুরতেই থাকল।

ঘটনা – ২

গাড়িতে ওঠা মাত্র শেফালির ফোন এল।শেফালি আমার বাড়ির পরিচারিকা।হ্যালো বলতেই বলল,বৌদি আজ যেতে পারব না।
মাথাটা গরম হয়ে গেল।জানে আজ আমার ভীষণ কাজের চাপ।বাড়িতে নেই। তবু…
একটু রাগত ভঙ্গিতে বললাম,আগে বলিস নি কেন?এখন বাড়ির কী হবে?মা একা আছেন।তোর ভরসায় রেখে আসি।আগে বললে একটা ব্যবস্থা করা যায়।
সে বলল,আমি কি করব!আমার বর বলল,আজ নারী দিবস, তুমি কাজে যাবে না।
তা তোর বর কি আজ তোকে রেঁধে খাওয়াবে নাকি হোটেলে খেতে যাবি?
সে বলল,আজ আমার বর বাড়িতে লোক নিমন্ত্রণ করেছে।আমি এখন চিকেন আর ভাত রাঁধব।আমার বর ওসব পারে নাকি!
শুনে গা পিত্তি জ্বলে গেল।নারী দিবস বলে কাজে পাঠাবো না,এদিকে বউকে দিয়েই রান্না করাব নারী দিবস বলে!
এরপর শেফালি কাজে এল না।কারন তার বর আর তার বন্ধুরা এত মদ খেয়েছে এই আনন্দে যে তার সারা শরীরে অজস্র জান্তব কামনার ছাপ।

ঘটনা – ৩

রান্নার মাসি অষ্টমী।আজ দু বছর ধরে আমাদের বাড়িতে রান্না করছে।অনুষ্ঠান শেষ করে বাড়ি ফেরা মাত্র শাশুড়ি মা বলল,বাড়িতে পুলিশ এসেছিল।
আমি বললাম,কেন?
অষ্টমী কোন ক্লাবের ছেলেদের বেধাড়ক মেরে এসেছে।তারা কমপ্লেন করেছে থানায়।
সে নিজেই আমাদের বাড়ির ঠিকানা দিয়ে এসেছিল ক্লাবে।আজ নাকি নারী দিবস উপলক্ষ্যে কাজের মাসিদের সেই ক্লাব থেকে মিষ্টিমুখ করানো ছিল।
তা তো ভালোই ছিল।তাতে মারপিটের কী হল!
অত জানি না।আমি একা আছি বলে পুলিশকে বললাম, বৌমা ফিরলে তাকে নিয়ে থানায় যাবে।আমি বয়স্ক মানুষ,একা থাকব কী করে!
অষ্টমী মাসিকে ডাকলাম।কি হয়েছে মাসি?ঝামেলা কেন?
মাসি বলল,থানায় নিয়ে যাবে তো,চলো।আমি কোনো অন্যায় করিনি।
অগত্যা বিরক্তি নিয়েই থানায় গেলাম।থানার ওসি মাসিকে দেখে একটা গাল দিতে গিয়েও আমার দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেলেন।
আমাকে বললেন,ম্যাডাম,এসব লোক রাখার আগে ভালো করে দেখেশুনে নিয়েছিলেন?যা মেয়ে মানুষ খুন করেও পালাতে পারে।
আমি নিরুত্তাপ গলায় বললাম,কেন বলুন তো এমন মনে হচ্ছে আপনার?
এতগুলো ছেলেকে লাঠি দিয়ে যা মার মেরেছে, এর মধ্যে দেখে বোঝা যাচ্ছে না,আসুরিক শক্তি আছে।
মাসি এতক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল।হঠাৎ করেই নিজের রোগা, ক্ষয়াটে শরীরের কাপড় খুলে ফেলল।
করো কি করো কি করে ওসি চেঁচিয়ে মহিলা কর্মীদের ডাক দিলেন।
সেই মুহূর্তে মাসি বলল,এই চিহ্ন গুলো কিসের?আমি মেরেছি বেশ করেছি।মিষ্টি দেবার লোভ দেখিয়ে বাচ্চাগুলোর শরীরে হাত বুলানো আর বুক টিপে দেওয়া!প্রতিবাদ করেছি বলে ওরা আগে আমাকে মেরেছে।
তাকিয়ে দেখলাম সত্যি মাসির গায়ে মারের দাগ।
ওসি বলল,তা বলে তুমি এভাবে মারবে ওদের?
মাসি বলল,কেন মারার অধিকার একা তোমাদেরই আছে?আমি শিক্ষিত নই বাবু।কিন্তু মর্যাদা বোধ আছে।এমন ঘটনা ঘটলে আবারও পেটাবো।তাতে ফাঁসি হবে কি?হলে হোক।
সেই মুহূর্তে আমার প্রচন্ড রাগ হল।চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লাম।ইচ্ছে করছিল, পাশে রাখা লাঠিটা তুলে দিই মাথায় মেরে ওসির।নিজেকে সংযত রাখলাম।ঠান্ডা গলায় বললাম,আজ নারী দিবস।পৃথিবীর মেয়েরা ক্রমশ জাগছে অফিসার।মেয়েদের একচেটিয়া মারার অধিকার বন্ধ না হলে কোনদিন দেখবেন আপনিও এভাবেই কোথাও মার খেয়ে পড়ে থাকবেন।
উনি উত্তেজিত গলায় বললেন, একটা নিচু শ্রেণির কাজের লোকের জন্য ম্যাডাম আপনি আমাকে অপমান করছেন?
আমি ততোধিক শান্ত গলায় বললাম,
ভুলে যাবেন না আপনিও একজন কাজেরই লোক।আমার বাড়িতে হয়তো কাজ করেন না।কিন্তু আপনার মাইনের পিছনে আমার রোজগারেরও অবদান আছে।
তারপর মাসিকে বললাম,মাসি বেশ করেছ।প্রয়োজনে আরো পেটাবে এসব মানুষকে। আইন আমি বুঝে নেব।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *