সাপ্তাহিক ধারাবাহিক সিরিজ কবিতায় সৌরাংশু সিনহা (পর্ব – ৪)

সব মরণ নয় সমান (৭)

হাঁটতে হাঁটতে পায়ের নিচটা শক্ত হয়ে যায়
গোড়ালির কাছটা খুলে খুলে আসে
এভাবেই তো হেঁটে যেতাম, চোখে চোখ
হাতে হাত। এসব ছেঁদো কথা ছিল না তখন
উঁচুবাড়ির জানলা দিয়ে গাছগুলোও আর দেখা যায় না
পথের উপর দিয়ে ঘোর কৃষ্ণবর্ণের পিচ, এখন ধুলোয় ধূসর
ঘোলাটে চোখে তাকিয়ে আছে তোমার, আমার পায়ের দিকে
আমিও তাকিয়ে দেখি, পিচ গলে মাংস বেরিয়ে পড়েছে
মাংস গলে রক্ত হাড় আর যত কিছু পুরনো খবর ছিল সব
এ ঘর ও ঘর থেকে মুখ বাড়িয়ে তুমি বলবে, বলেছিলে যেন
এই সব পথ যদি ফুরোয় না কখনও! পথ ফুরোয় না, চলা
চলে যেতে যেতে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখি, পথ ফুরোয়নি কখনও
যতটা এসেছিলাম, ঠিক ততটাই ফিরে যেতে হবে
কিছু কিছু কথা এভাবেই শেষ হয়ে যাবে।
ফুলের মালা, বুনো হাসনুহানার সুবাস, ছেঁড়া স্ট্র্যাপ,
অথবা সাধারণ ফেলে যাওয়া ভাঙা চুড়ি, ক্লিপ আরও টুকিটাকি
এই সব নেড়ে ঘেঁটে, দেখেশুনে বলবে তুমি
পথ শেষ হয়নি এখনও, শুধু চলা থেমে যায় কারও কারও
কোনও কোনও দিন!

সব মরণ নয় সমান (৮)

জোড়া লাগানো অসম্ভব নয়।
ভেঙে দেওয়াও।
কাল যে ফুলদানিটা অসাবধানে ভেঙে চুরমার হয়েছিল
আজ দেখি প্রথম আলোয় জোড়া লেগে গেছে কেমন
ফুলগুলো কুঁড়ি হয়ে আছে চোখ মেললেই ফুটবে বলে।
কাল রাতে ঘুম ভেঙে উঠে দেখি পাশেই আমি ঘুমিয়ে আছি, অঘোরে।
আসলে ভাঙতে ভাঙতে কখন জুড়ে ফেলতে পারি আমরা
নিজেরাই জানি না।
এক মাস আগে একদল দিনমজুরকে কয়লাখনিতে খাবারের টুকরো ভাঙতে দেখেছিলাম।
আজ গিয়ে দেখি, সারি সারি কালো কালো দেওয়াল পড়ে আছে।
মানুষগুলো কেমন যেন হারিয়ে গিয়েছে অন্ধকারে।
তারও বেশ কিছুদিন আগে, ফুলের মালা একটানে ছিঁড়ে ফেলেছিলাম।
টুকরো টুকরো গোলাপ, রজনীগন্ধা ছড়িয়ে পড়েছিল পায়ের কাছে।
ঘুম এসেছিল, ক্লান্ত, নিস্তেজ পায়ে পায়ে।
উঠে দেখি, ছোট ছোট বুনোফুলে আমার ক্লান্তি ঢেকে গেছে।
মালা নেই
কিন্তু এক বুক ফুল বাগান আমার হৃদয় আলো করে আছে।
ভেঙে দেওয়া অসম্ভব নয়।
জোড়া লাগানও।
প্রখর রোদ্দুরে পথ ভাঙতে ভাঙতে কখন দেখি
খোসা ছাড়ানো শুকনো বাসি সম্পর্কগুলোও একে একে জোড়া লেগে গেছে।
হাতে হাত রেখে, অথবা না রেখেই!

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।