• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৬৪)

পর্ব – ৬

বাবার কাছে গিয়ে শ‍্যামলী বলল, বাবা, তোমার সঙ্গে ইনি দেখা করতে এসেছেন।
ইজিচেয়ারে আধশোয়া শশাঙ্ক পাল চোখ মেলে তাকালেন।
গোবিন্দ না? কেমন আছিস?
অনসূয়া চ‍্যাটার্জির গাড়ির চালক শশাঙ্ক পালের পা ছুঁয়ে প্রণাম করল। বলল, বৌদি কোথায়।
পুরোনো পরিচিত মানুষ এসেছেন শুনে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন বাসন্তীবালা।
গোবিন্দ তাঁকে প্রণাম করে বলল, বৌদি আপনার কতো চুল পেকে গেছে!
বাসন্তীবালা হেসে বললেন, কতদিন পর এলি বলতো? শ‍্যামলী যখন হাঁটতে শুরু করেছে, তখন এসেছিলি। তা এতদিনে পুরোনো বাড়িটাকে মনে পড়ল তোর?
শ‍্যামলী অবাক হয়ে তাকায়। সে যখন হাঁটতে শিখছে, সেই সময় থেকে এই মানুষটা এই বাড়ির আপনজন!
শ‍্যামলিমাকে আমি একঝলক দেখেই আন্দাজ করেছিলাম । মেয়ের চোখদুটো ঠিক তোমার মতো হয়েছে বৌদি। বড্ড মায়াভরা।
শ‍্যামলীর ভালোও লাগে, একটু অস্বস্তিও হয়। বাবা মা আঠারো ঊনিশ বছর পিছিয়ে গিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করছেন। আর তখন শ‍্যামলীর মনে রাখার ক্ষমতাটাই তৈরি হয় নি। দেড় দুই বছর বয়সের শিশুর মনে রাখার ক্ষমতা তৈরি হয় না। অথচ চৈতন‍্যের গভীর তলে কি কিছু বিক্রিয়া হতে থাকে? ন‌ইলে কেন প্রথমবার এঁর কণ্ঠ শুনে মনে হয়েছিল কবে কোথায় যেন শোনা?
শশাঙ্ক বলেন, ওকে কিছু খাবার দাও বাসন্তী।
বাসন্তী বলেন, সবিতা শুয়ে পড়েছে। এখন আর উঠতে বলি কি করে?
শ‍্যামলী বলল, তাতে কি, আমি তো আছি। বলে সে দরজা দিয়ে বের হতে গিয়ে টের পেল, বাইরে আবছায়ায় শান্তনু অতনু দুই ভাই দাঁড়িয়ে আছে।
ওদের বলা যেত, বাইরে এভাবে দাঁড়িয়ে আছ কেন, ঘরে গিয়ে বোসো। কিন্তু শ‍্যামলী কিছু বলে উঠতে পারল না এখুনি চা বানিয়ে নিতে হবে। আলগোছে ওদের পাশ কাটিয়ে সরে গেল সে।
চা আর বিস্কুট নিয়ে শ‍্যামলী যখন বাবার ঘরে ঢুকল, তখন নিজের গ্রামের খোঁজ খবর নিচ্ছেন শশাঙ্ক পাল। বলছেন তাঁর শৈশবে ঢাক বেজে উঠলেই বাচ্চারা সবাই মিলে দৌড়তো দুর্গা দালানে। তার আগে সেই রথের সময় থেকে একটু একটু করে গড়ে উঠতেন দেবী। পল্লীগ্রামে দুর্গাপুজো তখন বেশি হত না। বারোইয়ারি পুজোও গড়ে ওঠে নি। জমিদার বাড়ির পুজোই সকলের পুজো। কাউকে আলাদা করে নিমন্ত্রণ করতে হত না সবাই নিজের প্রাণের টানে এসে দাঁড়াত। সেই পল্লীগ্রামে মানুষ মানুষের আত্মীয় ছিল।
গোবিন্দ তার বাড়ির খবর বলতে থাকে। শ‍্যামলী কে সে অতো কেন ভালবাসত, তার একটা ব‍্যাখ‍্যা সে দেয়। আড়াই বছরের ভাইঝিকে গ্রামের বাড়িতে ফেলে রেখে সে এসে ছিল বছর ঊনিশের তরুণ। আশ্রয় নিয়েছিল শশাঙ্কর কাছে। আর সেই ভাইঝির প্রাপ্য সকল স্নেহ পেয়ে গিয়েছিল শ‍্যামলী।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *