পর্ব – ৫১
১৫০
কি জানো শ্যামলী, তুমি আজকাল বড্ড কঠিন করে কথা বলে ফ্যালো। বুকে খুব বাজে। শান্তু আমায় অভিমান করে বলেছে, তুমি তাকে চোর বলেছ।
জামাইবাবু, আপনার বাক্যগঠনে একটু ত্রুটি থেকে যাচ্ছে। একটা “না কি” যোগ করা দরকার ছিল বোধ করি। নইলে মনে হয় যেন, আমি ঠিক কি বলেছি তার ডকুমেন্টারি এভিডেন্স আপনি হাতে পেয়ে বিচারের বাণী উচ্চারণ করছেন। বিচারপতির দায়িত্ব পালনের আগে অন্য পক্ষকে মতপ্রকাশের সুযোগ দিতে ভুলে গেলে, আর যাই হোক, সুবিচার হয় না।
অরুণ বিরক্ত হয়ে বললেন, তোমাদের ভাই বোনের ঝগড়ার মধ্যে আমার মাথা গলানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে করছে না। কিন্তু এই অশান্তি আমার বাড়িতে গিয়ে পৌঁছবে কেন বলতে পার?
অরুণদা, পৃথিবীতে সব কেন’র উত্তর চাইবেন না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, মেলে না উত্তর।
অরুণ মুখ গোঁজ করে বসে থাকেন।
শ্যামলী আরো বলে, জানেন অরুণদা, আজ সকাল থেকে একাধিকবার আমার কাছে আরজি পৌঁছেছে যে নারী ধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্ত এক মহাপুরুষের মামলা লড়ার উকিল খরচ না কি আমায় দিতে হবে। যতো বলি, ওরে বাবা, আমি তুচ্ছ একটা মজুর মাত্র, তাও শিক্ষানবীশ পর্যায়ের, তা কা কস্য পরিবেদনা। লোকজন কতো গালি দিয়ে যাচ্ছে!
সবিতা আবার ঝামরে উঠল, তা বঞ্চিত না করে কিঞ্চিৎ দিলেই হয়! সব কিছু আগলে রাখার তুই কে?
পিসি, আমার পয়েন্টটা অন্য। আমি কারবারের মালিক নই। সুতরাং কারবারের নির্দিষ্ট খাতের টাকা অন্যত্র খরচ করার এক্তিয়ারটাই আমার নেই।
শশাঙ্ক পাল শ্যামলীর কথায় কোনো রকম মন্তব্য না করে উঠে গেলেন। গলাখাঁকারি দিয়ে শুধু বললেন, সবিতা, তোর বৌদিকে বলে দিস, আমার আজ খিদে নেই।
সবিতা হাত উলটে বলল, ওই দ্যাখো, নাটকের আরেক অঙ্ক শুরু হল। তুমি না খেয়ে থাকলে আর দুটি প্রাণী খেতে পাবে না। এছাড়া বিশ্ব সংসারের আর কিচ্ছুটি এসে যাবে?
অরুণ বললেন, দ্যাখো, তোমার দাদা রাগ করে তার দিদির বাড়িতে বসে আছে। তোমরা মিটমাট করে নাও। আমি বেঁচে যাই।
খুব সহজ একটা সমাধান আছে অরুণদা। কিন্তু আপনার দ্বারা সেটা হতে পারবে বলে মনে হয় না। যে নরম ধাতের মানুষ আপনি!
অরুণ মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বললেন, শ্যালিকার কাছে গাল খেতে মন্দ লাগে না শ্যামলী। কিন্তু আজ আমি সত্যি সত্যি চাইছি, তোমরা ভাইবোনে মিলেজুলে থাকো।
অরুণদা, আমার পরামর্শ যদি নেন, তাহলে বলি দাদা র জন্য কাল থেকে বিশুদ্ধ শাকপাতার ভোগ বরাদ্দ করুন। নো মাছ মাংস দই মিষ্টি। তিনরাত্তির কাটবে না। বাপ বাপ বলে এই বাড়িতে এসে ঢুকবে। বাবা রুগ্ন, হার্টের পেশেন্ট, তবু এ বাড়িতে রোজ দুবেলা ওদের জন্য মাছ মাংস দই মিষ্টি আসে। সত্যি কথা বলতে মা রোজ রোজ আনাতে বাধ্য হয়। নইলে মারপিট বাধে।
সবিতা শ্যামলীকে ধমকে ওঠে,
ছিঃ, শ্যামলিমা, খাবার খোঁটা দিতে নেই।
সে মেয়ে দীপ্ত চোখে চেয়ে বলে, চুপ করো পিসি, নিজের বাপের ওষুধপত্র যোগাড়ের দায় যার মাথায় নেই, সে যখন একটা নারী ধর্ষণে অভিযুক্ত লোকের জন্য হন্যে হয়ে টাকার খোঁজখবর করে তার জন্যে আমার কোনো সহানুভূতি নেই। অরুণদার থাকতে পারে। আমার নেই। আমি পারছি না।
ক্রমশ…