• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৪৬)

পর্ব – ৪৬

৪৫
রাত বেড়েছে দেখে সবিতা পিসি গিয়েছে তনুশ্রী আর জামাইয়ের শোবার ঘরে মশারি টাঙ্গিয়ে দিতে । একবার বাবার ঘরে উঁকি মারল শ্যামলী। বাবা তাকে দেখতে পেয়ে বললেন, “একবার খবর নে না মা, ওরা ঠিকমতো পৌঁছালেন কি না।“ শ্যামলী বললো “বাবা, চিন্তা কোরো না রমানাথবাবু ঠিক সামলে নেবেন।“
শশাঙ্ক পাল বললেন, “ শ্যামলী , রমানাথ বেশ ভাল ছেলে তাই না?”
শ্যামলী বললো “বাবা, একটা লোককে ভাল বা মন্দ সার্টিফিকেট দিতে হলে আর একটু সময় নাও।”
শশাঙ্ক পালের মনে পড়ে গেল তিনি কিভাবে বীরুকে নির্ভর করতেন, আর সেই বিশ্বাসের উপর ভর করে, গোটা কারবারের নাড়ি নক্ষত্র বীরুর উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন।
সেই কথা মনে করে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস লুকোলেন তিনি। তার পর বললেন “মা, রাত হয়েছে, শুতে যাবি না?”
শ্যামলী বললো “যাবো বাবা, কিন্তু গ্যারেজের লোকেদের একটু পুজোর হাত খরচ দেব বাবা। তুমি কাল চেক লিখে দিও ।“
শশাঙ্ক পাল বললেন, “ পুজোর বোনাস দিবি বলছিস? কিন্তু কি করে দিবি? টাকা পয়সার অবস্থা কেমন?”
শান্ত স্বরে শ্যামলী বললো “বাবা, টাকা পয়সা যে খুব বেশি আছে, তা কিন্তু নয় বাবা। তবে বাজারে আর কোনো দেনা নেই। পাওনা টাকাও পড়ে নেই ।“
শশাঙ্ক পাল বললেন, “বেশি টাকা না থাকলে ওদের কি করে কি দিবি? আমাদের নিজেদের পুজো তো আছে। তনুশ্রীকে তত্ত্ব পাঠাতে হবে। আত্মীয়রা মুখ চেয়ে থাকে। তাদের ফেলবি কি করে?”
তনুশ্রীকে তত্ত্ব ? ! শ্যামলীর ঠোঁটের ডগায় একবার এসে গেল – বাবা, তোমার যখন শরীর খারাপ করেছিল, সে দিনের কথাটা ভেবো । কাকে কাকে পাশে দেখেছিলে, স্মরণ করে নিও । কিন্তু কথা যদি মুখ ফসকে একবার বেরিয়ে গেল, তার ফল অনেক সময় সুদূরপ্রসারী হয়। সে সব ভেবে সে নিজেকে সংযত, সংহত করল। তার পর বললো “বাবা, বোনাস পাওয়া শ্রমিকের অধিকার। আমি একটা ফান্ড করে রেখেছি। ওই ফান্ড থেকেই দেব। আর তোমাকেও পুজো অল্প বাজেটে সারতে হবে বাবা।“
শশাঙ্ক পাল বললেন “অল্প হোক মা, কিছু টাকা মাকে দিস। দিয়ে থুয়ে ওর আনন্দ।“
বাবার দিকে তাকায় শ্যামলী । “হ্যাঁ বাবা, আমাকে তো সবার কথাটাই ভাবতে হবে। “
নিজের ঘরে ফিরে যাবে শ্যামলী, এমন সময় শশাঙ্ক পাল বললেন, মা রে, তোর কি মনে হয় নন্দীমশায় গুরুদেবের উকিল খরচ বাবদে টাকা পয়সা দিতে বলবে?
শ্যামলী বললো “বাবা, একটা লোক শিষ্যাকে ধর্ষণের দায়ে ধরা পড়েছে। লোকের সোনা ডবল করে দেবার নামে যজ্ঞ হোম এসব প্রতারণায় জড়িয়ে ধরা পড়েছে। তাকে তুমি অর্থ সাহায্য করার আগে ভেবে দেখো কার টাকা কাকে দিচ্ছ ?”
শশাঙ্ক পাল বললেন, “না, সেটা আমি জানি। কিন্তু নন্দীমশায় চাইলে কি বলবো?”
শ্যামলী বললো “বাবা, তুমি নিজে আগে ভাবো, তলিয়ে দ্যাখো। গুরুগিরির নামে শিষ্যাকে ধর্ষণ করতো লোকটা । অনেক মেয়েকেই হয়তো করেছে। সবার তো সাহস থাকে না প্রতিবাদ করার। পরিস্থিতি থাকে না। কাউকে পাশে পায় না। সব মেয়ে এটাকে অপরাধ বলে বুঝে উঠতেও পারে না। তোমাদের হিন্দু মতে গুরু পিতৃতুল্য । বাবা হয়ে কন্যাগমন কি এমন ভাল কাজ, তুমি নিজেই ভেবে দেখো বাবা। ”
মাথা নিচু করে বসে থাকেন শশাঙ্ক পাল। বাবার ঘরের দরোজা আস্তে করে ভেজিয়ে বের হয়ে আসে শ্যামলী ।
কলেজের ক্লাস শেষে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে এনে কারখানায় ঢুকল শ্যামলী।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *