দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ২৭)
by
·
Published
· Updated
পর্ব – ২৭
১২৬
আত্মজার কথা শুনে শশাঙ্ক পালের লজ্জা করতে থাকে। কিন্তু ও যা বলছে, সেটাকে অস্বীকার করতে পারছেন না।
“বাবা, আমি তোমাকে তিন রকম খরচা দিই। এক, তুমি গ্যারেজের জমি বাড়ির মালিক। ওটা অন্য কাউকে ভাড়া দিলে তুমি কিছু টাকা পেতে, সেটা বাবদে একটা এমাউন্ট দিই। কারখানার মেশিন তুমি কিনেছ। তোমার টাকা ঢুকে আছে। ব্যাঙ্কে থাকলে একটা সুদ পেতে, সে বাবদে কিছু দিই। আর মাথা খাটিয়ে এত বড় ব্যাপার ফেঁদেছ, ঝক্কি নিয়েছ, সে বাবদেও কিছু পাওনা হয়। কারবার থেকে তার বেশি কিছু নিও না বাবা। ওটা মজুরের। ওরা খাটে বলে কারখানাটা চলে। ওরা তেল কালি মাখে। ওদের ঠকাতে পারব না বাবা।”
শ্যামলীর কথা মন দিয়ে শুনে যেতে থাকেন শশাঙ্ক পাল। ” বাবা, ওর বেশি টাকা মালিক জোর করে নিজের পকেটে পুরলে, তাকে সুপার প্রফিট বলে। সেটা আসলে কাউকে বঞ্চিত করে নেওয়া ধন। হয় মজুরকে, নয় সাধারণ কাস্টমারকে, কাউকে না কাউকে ঠকাচ্ছো তুমি। তবে না সুপার প্রফিট। কার্ল মার্ক্স ওটাকে অর্গানাইজড রবারি বলেছেন। রবারি মানে ডাকাতি। দেশের আইন কানুনের প্রশ্রয় নিয়ে গরিবের গাঁট কাটা। তাই গরিবকে মালিকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে জোট বাঁধতেই হয়। নইলে মরো। এখন গরিব জোট বাঁধলেই মালিক প্রমাদ গণে। গরিব যদি মালিকের চালাকি ধরে ফেলল তাহলেই খেল খতম। তাই মালিক আইন কানুন খাটিয়ে গরিবের মাথা তোলাকে যে করে হোক বন্ধ করে। শ্রমিক সাজিয়ে একদলকে শ্রমিকের ভেতর সেঁধিয়ে দেয়। ওরা গরিব মানুষ সংগঠিত হবার আগেই গোলমাল পাকিয়ে দেয়। হয় পুলিশের দিকে ঢিল পাটকেল ছোঁড়ে, নইলে আগুন লাগায়। ব্যস, পুলিশ মওকা পেয়ে যায়। অশান্তির অভিযোগে গুলি করবার ছুতো জুটে যায় পুলিশের হাতে। তাই গরিব মানুষের পক্ষে অহিংস আন্দোলন ছাড়া কোনো পথ নেই। গায়ের জোরে সে পুলিশ মিলিটারির সঙ্গে টক্কর দিতে পারবে না। বেমক্কা প্রচণ্ড মার খেয়ে তার মাথা তোলা অনির্দিষ্ট দিনের জন্যে থমকে যাবে।” শশাঙ্ক পাল অবাক হয়ে শ্যামলীর কথা শুনে যেতে থাকেন।