দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ২০)
by
·
Published
· Updated
পর্ব – ২০
১১৯
ডি এস পি সাহেবের চেম্বার থেকে বেরোতেই একটা লোক বলল – “ম্যাডাম, সাহেব বলেছেন আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে।” লোকটির পোশাক দেখে ড্রাইভার বলে মনে হল । শ্যামলী চাইল না গাড়ি নিতে। একটু হাসি মুখ করে মাথা নেড়ে বোঝাল যে সে গাড়িতে করে যেতে চায় না। ড্রাইভারটি বলল – “সাহেব বার বার করে বলে দিয়েছেন।” একটু সতর্ক হল শ্যামলী। বলল – ” না, সাহেবকে আমার ধন্যবাদ। আমি একটা অন্য জায়গায় যাব।” ড্রাইভারটি নাছোড়। বলল – “যেখানে যাবেন চলুন, সেখানেই পৌঁছে দিয়ে আসব।” শ্যামলী একটু শক্ত হল। বলল, “না, আমি এমনিই চলে যাব।” বলে আর বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করে জোরে হাঁটা লাগাল। সে বেশ বুঝতে পারছিল ডি এস পি সাহেব যে তাকে নিজের চেম্বারে বসিয়ে চা খাওয়াতে চেয়েছেন, তার কারখানার ক্ষতিপূরণ আদায়ে লোহা মাফিয়াকে চাপ দিয়েছেন, সব কিছুর নিজস্ব ব্যাখ্যা পুলিশের লোকেরা করে নিয়েছে। গাড়ি চড়ে বাড়ি যাবার অনুনয়টি উপেক্ষা করে শ্যামলী তাদের অঙ্কটা একটু জটিল করে দিল। রাস্তায় রোদ্দুর ছিল। শ্যামলী খেয়াল করলো যে নিজের হাত ব্যাগটা নিয়ে যাতে সমস্যা না হয়, তাই সেটা সে কারখানায় নিজের আলমারির ভেতরে রেখে এসেছে। অর্থাৎ হাতে কোনো পয়সা নেই। তার মানে বাড়ি যেতে গেলেও হেঁটে যেতে হবে। লাইব্রেরী যেতে গেলেও তাই। রোদ্দুর চড়া হয়ে উঠেছিল বলে শাড়ির আঁচলটা টেনে মাথা ঢাকল সে। সেটা করেই একটু হাসি পেয়ে গেল তার। প্রকৃতি কি রকম বুদ্ধি দিয়েছে দ্যাখো। রোদের মধ্যে ছায়া খুঁজে নিতে ভেতর থেকে বুদ্ধি যোগায় প্রকৃতি।
“আচ্ছা শ্যামলী, তুমি কি গোটা অবস্থাটা ছকে নিয়েছিলে ? কার পরে কি হবে, কখন কি করতে হবে? ”
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে। নিজেই উত্তর যোগায় শ্যামলী।
“আচ্ছা, মাফিয়ার পোষা গুণ্ডা বাহিনী তোমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারত। তুমি কি করতে? ”
“কি জানি, কি করতাম। দু একটা লোকের সাথে একটা মেয়ে খানিকক্ষণ হাতাহাতি করতে পারে। কিন্তু অনেকগুলি লোকে মিলে একটা মানুষকে টার্গেট করলে রেহাই মেলা শক্ত। ”
“শ্যামলী, তুমি কি জান, আমাদের দেশে প্রভাবশালী লোকে বন্দুক ঘরে রাখে, আর সরকার সেই বন্দুক রাখার জন্যে লাইসেন্স দেয় ? তুমি গায়ে পড়ে গোলমাল পাকাচ্ছো অভিযোগে তোমাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে কি করতে ?”
“কি আর করতাম! সেভাবে দক্ষ বন্দুকবাজ গুলি করলে তার হাত থেকে বাঁচা শক্ত।”
“তাহলে শ্যামলী, তুমি কি রকম একটা ঝুঁকি নিয়েছিলে ! কি না হতে পারত।”
” কি হতে পারত, কি হবে, সবটা আগে থেকে গণনা করা যায়!”