দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ১৬)
by
·
Published
· Updated
পর্ব – ১৬
১১৪
মাথা নিচু করে শ্রমিকেরা চলে যায় । কেবল বাইরে একটি ছেলে বসে থাকে। রোজ ও শ্যামলীকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে তবে ঘরে যায় । শ্যামলী অপছন্দ করে । বলে – আমি একাই যেতে পারবো । তবু ও দূর থেকে পিছু পিছু আসে। শ্যামলী বাড়ির ভেতর ঢুকেছে দেখে নিয়ে সে ফিরে যায়। সে সময়টা তার চলন পথের দিকে শ্যামলী একবার তাকায় । বটগাছটার একটা শাখায় কাকের বাসায় একটা বাচ্চা কেঁদে ওঠে।
শ্যামলী দেখে বাইরের বেঞ্চিতে ছেলেটা বসে আছে। জানে ওকে চলে যেতে বলে লাভ নেই। ও যাবে না। মেয়ের ঠোঁটে একটা আলগা হাসি খেলা করে। তার পর ওকে ডেকে বলে রুটি তড়কা আনতে । ছেলেটি বলে – “ছোড়দি বাড়ি যাবি না?”
রাগ করে ওকে শ্যামলী বলে – “কবে থেকে বলেছি আমায় ‘তুই’ করে বলবি না? আবার তুই তোকারি করছিস আমায়?” মাথা নিচু করে থাকে ছেলেটি । ওর অবস্থা দেখে মনে মনে হাসে। টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে “দুজনের মতো খাবার আনবি।“
১১৫
অভ্যাস মতো ভোর ভোর ওঠে শ্যামলী । স্নান করে নিয়ে মায়ের সঙ্গে দেখা করে । মা জানতে চান – “কি রে, আজ পরীক্ষা আছে না কি?”
“না, নেই।“ ছোটো করে জবাব দেয় শ্যামলী । তার পর একটা রিকশা ডাকে । রিকশা ওলাকে বাড়িতে ডেকে এনে হারমোনিয়ামটা নিয়ে নামতে বলে । সবিতা পিসি বলে কি রে, আজ তোদের কলেজে ফেস্টো আছে না কি?
শ্যামলী পিসিকে বকে ওঠে – কতোদিন বলেছি ‘ফেস্টো’ বলে কোনো কথা হয় না। ফেস্টিভ্যাল বলবে।
পিসি তর্ক জোড়ে – “এই, তুই নিজেই সেদিন বলেছিস ‘ফেস্টো’। তোর কাছেই শুনেছি ।“
শ্যামলী বলে “হতে পারে না, বাজে বোকো না। আমি ফেস্টো বলবো কোন দুঃখে?”
সবিতা গোঁ ধরে বলে “বলেছিলি তুই। মনে করে দ্যাখ বেকারদের ফেস্টো বলেছিলি একদিন। আমি মিছে শুনি নি।“
শ্যামলীর মনে পড়ে যায় শিবপুর বি ই কলেজের আন্তঃ কলেজ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার নাম বেকাফেস্ট । সেই কথাটি পিসি ভুল উচ্চারণে বলছে। রেগে উঠে বলে “আরে ওটা কলেজের অনুষ্ঠান । বেকারদের কিছু নয়।“
পিসি জেদ করে বলে “আরে অই হল । তুই বুঝতে পেরেছিস তো, তাহলেই হল। আমার বাপ তো আর কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে তোমার মতো কলেজে পাঠায় নি ! আর আমার দুটো প্যাখনাও গজায় নি”
শ্যামলীর মা চেঁচিয়ে বলে “তোরা থামবি? একটু নিরিবিলে ঠাকুর নাম করবো তার উপায় নেই ।“
পিসিকে ভেংচি কেটে শ্যামলী রিকশায় উঠে পড়ে।