• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ১১৩)

পর্ব – ১১৩

ভারাক্রান্ত মনে বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে শ‍্যামলী টের পেল বাড়িতে অনেকেই এসেছেন। জামাইবাবু অরুণদা, অরিন্দম , রমানাথ। কিন্তু কেন?
বাবার ঘরে সবাই বসে আছেন। অভ‍্যাস মতো দরজার চৌকাঠে বসে আছে সবিতাপিসি। তাকে দেখেই ঝঙ্কার দিয়ে উঠল পিসি, মহারাণীর এতক্ষণে সময় হল? বাবা জিজ্ঞাসা করলেন, কারখানায় তো ছিলি না, গেছিলি কোথায়? জামাইবাবু বললেন, দিনকে দিন তোমার দায় দায়িত্বের বোধ লোপাট হয়ে যাচ্ছে।
শ‍্যামলী ঠিক করল বাবার প্রশ্নের উত্তরটা আগে দেবে। সে বলল, বাবা, আমাদের কলেজের একটা মেয়ে পঞ্জাবি। ওদের কি অবস্থা তা জানতে ওদের গুরুদ্বারে গিয়েছিলাম।
অরুণ কড়া গলায় বললেন, বুদ্ধিশুদ্ধি কতটা নষ্ট হয়ে গেলে একটা মানুষ আজকের দিনে এইরকম একটা বিপজ্জনক কাজ করতে পারে!
শ‍্যামলী ঠিক করল, সকলের সামনে অরুণদাকে কিছুই বলবে না।
অরিন্দমের দিকে তাকিয়ে সে মিষ্টি করে হেসে বলল, আমার জন্য অনেকক্ষণ হা পিত‍্যেশ করে বসে আছেন তাই না?
অরিন্দম বললেন, দুপুরে ঘটনাটা শুনেই আমি অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ি। আর তার আগেই তোমার কারখানায় ফোন করি। তোমার মিস্ত্রি বলল, তুমি নেই। আমি ভাবলাম, অন‍্য কোথাও না গিয়ে বাড়িতে চলে এসেছ। তারপর এ বাড়িতে ফোন করে যখন শুনলাম তুমি ফেরো নি, বেশ দুশ্চিন্তা হচ্ছিল।
শ‍্যামলী বলল, ঠিক আছে, আমি তো ভাল ভাবে ফিরে এসেছি, এবার আমার হাতে এক কাপ চা হয়ে যাক্, রমানাথ, কি বলেন আপনি?
অরুণ মুখটা গোমড়া করে বললেন, তুমি ভাবছ তোমার একার‌ই সামাজিক দায়িত্ব আছে, আমাদের তা নেই। তোমার বাবা হার্টের পেশেন্ট, সেটা যে কি করে তুমি ভুলে যাও, বুঝে পাই না।
শ‍্যামলী বলল, আহহা অরুণদা, আমি যে একটু দুষ্টুমি করি, সে তো আপনি জানেনই। এখন বলুন তো, আমার হাতে চা খাবেন কি না?
সবিতাপিসি দাঁত খিঁচিয়ে বলল, একটা গুরুজন একটা দরকারি কথা বলছে, সেটা পর্যন্ত মন দিয়ে শোনার প্রয়োজন ভাবে না। দিব‍্যি দুটো প‍্যাখনা গজিয়েছে তোমার।
এমন সময় কোথা থেকে ছুটে এসে শান্তু শ‍্যামলীর পিঠে একটা কিল মারতে যেতেই তার কবজিটা চেপে ধরে আটকে দিল রমানাথ।
শান্তু তাকে চোখ পাকিয়ে বলল, কি হচ্ছে কি? আমার বোনকে আমি শাসন করব, তাতে আপনার কি?
রমানাথ শান্তুর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে রেখেই বলল, কিছু যে এসে যায়, তা এখনো বুঝতে পারছেন না?
শান্তু যন্ত্রণায় ছটফট করে বলল, আপনি কোন্ সাহসে আমাদের ফ‍্যামিলি ম‍্যাটারে নাক গলাচ্ছেন?
শ‍্যামলী দুহাতে মুখ আড়াল করে মাটিতে বসে পড়ল। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো মেয়ে। আজ দাদার ঘুঁষি তার গায়ে না লাগলেও প্রাণে লেগেছে।
অরিন্দম বললেন, শান্তু আপনি যা করলেন আমাদের চোখের সামনে, এতে আপনার লজ্জা হ‌ওয়া উচিত।
বেগতিক দেখে অরুণ বললেন, শান্তু আমি জানি বোনকে তুমি খুব ভালবাসো। বোন ফিরছে না বলে তোমার উদ্বেগ হচ্ছিল। তবু নিজের আবেগ তোমার সংযত করা উচিত।
নিঃসীম লজ্জায় শ‍্যামলী মাটির মধ‍্যে মিশে যেতে চাইছিল। তাকে তুলে ধরে চোখ মুছিয়ে দিয়ে রমানাথ বলল, যে ভদ্রলোক বোনের গায়ে হাত তোলার অভ‍্যাস করে ফেলেছেন, তাঁকে আজ বুঝিয়ে দিয়েছি, অ্যায়সা দিন নেহি রহেগা।
অরুণ বললেন, যাক্ শ‍্যামলী ফিরে এসেছে। আমরা চলুন এবার ফিরে যাই।
রমানাথ বললেন, অরুণদা, আমাদের উচিত ছিল শ‍্যামলীকে উৎসাহ দেওয়া। ভয়কে জয় করে যে মেয়েটা বিপদের দিনে বন্ধুর পাশে দাঁড়াতে গেছিল, তাকে আজ নিজের বাড়িতে আপনজনেদের কাছে এতটা হেনস্থা হতে হবে, ভাবতে পারিনি।
অরুণ বললেন, ভায়া, তোমার সাথে একদিন জমিয়ে আড্ডা হবে, কিন্তু আজ আর নয়, চলো ব্রাদার্স, আমরা বেরিয়ে পড়ি।
অরিন্দম বললেন, শ‍্যামলী লজ্জায় দরজা দিয়েছে। ওর হাসি মুখটি দেখে না গেলে শান্তি পাব না।
রমানাথ সবিতাকে বললেন, আপনি একটু তাকে ডেকে দিন্ না?
নিচ থেকে বাসন্তীবালা উঠে এসে বললেন, আমি তার মা, আমি বলছি, তাকে আমি সামলে রাখব। তোমরা এবার নিশ্চিন্তে বাড়ি যাও।
রমানাথ আর অরিন্দম দুজনেই শশাঙ্ক পালকে বললেন, কাকাবাবু, আমরা তা হলে আসি?
শশাঙ্কবাবু কোনো উত্তর করলেন না। দুহাতের মধ‍্যে মাথাটা নিয়ে যেমন ঝুঁকে বসেছিলেন, তেমনই র‌ইলেন। রমানাথ আর অরিন্দম ধীরে ধীরে নিচে নেমে গেলেন। কেউ বিদায় সম্ভাষণ জানালেন না।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।