দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ১০৯)
by
·
Published
· Updated
পর্ব – ১০৯
পথে চলতে চলতে কানে এল কলকাতায় পঞ্জাবি শিখদের দোকান আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণের ভয়ে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ দোকান ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছে। টিভির দোকানগুলি বেমালুম লুঠ হয়ে গিয়েছে। অনেক সাধারণ লোক, যারা অন্যদিন ভদ্রলোকের মতোই ঘোরে ফেরে অফিস করে, তেমন লোকেও শিখদের দোকান খোলা পেয়ে টিভি রেডিও, রেকর্ড প্লেয়ার তুলে নিয়ে খুশি খুশি মুখে বাড়ির দিকে চলে গিয়েছে। কি অদ্ভুত ব্যাপার!
ইন্দিরা কংগ্রেসের নেতারা মস্তান বাহিনী নিয়ে শিখদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে যুবকদের বৃদ্ধদের হত্যা করতে শুরু করেছে। সারাদেশে অভূতপূর্ব অরাজকতা। গুরশরণের পাশে আজ তাকে দাঁড়াতেই হবে। এই বিপদের সময়েই নিজের মনুষ্যত্বের পরিচয় তুলে ধরতে হয়। কিন্তু কি করে জানবে গুরশরণ কোথায় থাকে?
শ্যামলীর কানে এল, গোটা দেশে কংগ্রেসের উদ্যোগে শিখ হত্যালীলার থেকে বাঁচতে শিখজনতা নিজেদের গুরুদ্বারে আশ্রয় নিচ্ছে। শ্যামলী ঠিক করল শহরের গুরুদ্বারটিতে গিয়ে সে সহপাঠিনীর খোঁজ করবে। আজ তীব্র সংকটের সময়ে যদি নিজের শুভবোধকে উচ্চে তুলে ধরতে সে না পারে, সারা জীবন নিজের কাছে নিজেকে ছোট মনে হবে। এতখানি ক্ষতি সইবে না শ্যামলীর। গুরুদ্বারে পুলিশ প্রহরা রয়েছে। ভীত সন্ত্রস্ত শিখ পরিবার গুলি দলে দলে গুরুদ্বারে ঢুকছে। তাদের সাথেই মিশে উপাসনালয়ে ঢুকে পড়তে চাইল শ্যামলী। কিন্তু তাকে ঠিক লক্ষ্য করল প্রহরারত শিখ যুবক।
যুবকটি তাকে উদ্ধতভাবে বলল, আপনি ঢুকবেন না। চলে যান।
শ্যামলী বিনীতভাবে বলল, আমার সাথে একসাথে পড়ে একটি মেয়ে, আমি তাকে খুঁজতে এসেছি।
যুবকটি নিজের সিদ্ধান্তে অনড় হয়ে বলল, আপনার ভিতরে যাবার কোনো দরকার নেই। বাড়ি চলে যান।
শ্যামলী ভিতরে ঢুকতে পাবার জন্য কাকুতি মিনতি করতে লাগল।
শ্যামলী যুবকটির পরিস্থিতি বুঝতে পারছিল। এই দমবন্ধ অস্থির পরিবেশে শিখ ধর্মস্থানে অন্য ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিকে প্রবেশ করতে দেবার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাই যুবকের সিদ্ধান্ত বদলের কোনো সম্ভাবনা না থাকলেও শ্যামলী কাকুতি মিনতি করে যেতে থাকল।
এমন সময় ঘটনাটি চোখে পড়ে গেল এক প্রবীণ শিখ ব্যক্তির। তিনি এগিয়ে এসে শ্যামলীকে ঢুকতে নিষেধ করলেন। শ্যামলী বলল গুরশরণের খোঁজ পেলে আর সে ভাল আছে জানলেই সে বাড়ি চলে যাবে।
বারংবার মিনতি করতে নরম হলেন নেতৃস্থানীয় প্রবীণ শিখ ভদ্রলোক। বললেন শিখেরা আতঙ্কে আছে। তাই দৈহিক খানাতল্লাসি না করে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। শ্যামলী বলল, আমি রাজি। যে করেই হোক আমি বন্ধুর খোঁজ পেতে চাই।
দুইজন বয়স্ক শিখ মহিলা তাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে তন্নতন্ন করে খানাতল্লাসি শুরু করলেন। তার নারীশরীরের প্রতিটি গোপনীয় স্থানে হাত দিয়ে তাঁরা বিপজ্জনক কোনো কিছু আছে কিনা দেখলেন। সমস্তটুকু শ্যামলী নীরবে সহ্য করে গেল। দারোয়ানের ঘরে ব্যাগটা রেখে একজন বয়স্ক মহিলার পরিচালনায় শ্যামলী ভিতরে যাবার অনুমতি পেল।