• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৯৮)

পর্ব – ৯৮

৯৭

ফেরার সময় গাড়িতে করবী মিত্র শ‍্যামলীকে বললেন, তুই বলছিলি, একটা অস্থির সময়ের মধ‍্য দিয়ে তুই যাচ্ছিস? শুনে শ‍্যামলী শুধু একটু হাসল। কিছু বলল না।
 করবী মিত্র বললেন, আমাকে বলতে তোর কোনো অসুবিধা আছে?
শ‍্যামলী বলল, না , অসুবিধার কি আছে! তবে, তা এত‌ই চেনাজানা ধাঁচের যে বলার কোনো মানেই হয় না।
করবী বললেন, তার মানে তোর কষ্টগুলো তুই একাই ব‌ইবি, তাই তো?
শ‍্যামলী বলল ম‍্যাম, আমার নিজের ব‍্যাপারে ভলতেয়ারকে খুব মনে পড়ছে।  যদি কোনো ব‍্যক্তির নিজস্ব ভাবনাচিন্তা থাকে, তাহলে নানা বিষয়ে সে মতামত দেবেই, অথচ, নিজের মত প্রকাশ করতে গেলে চারপাশের লোকজন খড়্গহস্ত হয়ে ওঠে। মত প্রকাশ ও মতপার্থক্যজনিত দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ সমাজে কী সংকট তৈরি করে বোঝাতে তিনি বলেন, ওপিনিয়ন হ‍্যাজ় কজড মোর ট্রাবল অন আর্থ দ‍্যান প্লেগ অর আর্থ কোয়েকস।
আর জানেন, জাঁ জ‍্যাক  রুশোর সেই কথাটাও খুব প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে, ম‍্যান ইজ় বর্ন ফ্রি, বাট এভরিহোয়‍্যার হি ইজ় ইন চেনস।
করবী মিত্র বেশ একটু মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বললেন, শ‍্যামলী, তুই যদি সব সময় এভাবে কথা বলতে থাকিস, তাহলে তো তোর পাশে দাঁড়ানোই শক্ত। তোর সাথে ভলতেয়ার আর রুশোর মাপের লোকজন কথা বললে, তুই আমাদের আর পাত্তা দিবি কেন?
শ‍্যামলী বলল, ম‍্যাম,  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা গান আছে না, শুধু তোমার বাণী নয় গো হে বন্ধু হে প্রিয়, মাঝে মাঝে প্রাণে তোমার পরশখানি দিও….
করবী বললেন, খুবই জনপ্রিয় গান এটা, আর এটা আমার‌ও অত‍্যন্ত পছন্দের গান। তো এই গানের সাথে ভলতেয়ার আর রুশোর সম্পর্ক কি?
শ‍্যামলী বলল, ওই গানে একটা কথা আমায় খুব ভাবায়, একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়…। রবীন্দ্রনাথ এভাবে শেখান, আমারে তুমি করিবে ত্রাণ, এ নহে মোর প্রার্থনা, বহিতে পারি শকতি যেন রয়।
করবী অবাক হয়ে ছাত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকেন। শ‍্যামলী বলে, ওই যে আজ সকালে আপনি শেলির কবিতা বলছিলেন, ওঁর আরেকটা কবিতায় পড়েছি, ইফ উ‌ইন্টার কামস, ক‍্যান স্প্রিং বী ফার বিহাইণ্ড?
করবী বললেন, হ‍্যাঁ, ওড টু এ স্কাইলার্ক। বিখ্যাত কবিতা।
শ‍্যামলী মৃদু হেসে বলল,
রবীন্দ্রনাথ আবার বলছেন, আপদ আছে, জানি আঘাত আছে, তাই জেনে তো বক্ষে পরাণ নাচে। একটা গানে বলছেন, সুখে আমায় রাখবে কেন, রাখো তোমার কোলে, যাক না গো সুখ জ্বলে..
করবী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন। শ‍্যামলী মৃদু স্বরে বলে, আশির্বাদ করুন, নিজের বোঝা যাতে নিজে অক্লেশে ব‌ইতে পারি।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।