• Uncategorized
  • 0

ডাউন-সিন্ড্রোমে শুভ আঢ্য – ৩

কলকাতায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা। লেখালিখি মূলত প্রিন্টেড ও ওয়েব ম্যাগে। প্রকাশিত বই তিনটি, ব্লেড রানার, আওকিগাহারা ও জোকিং – আ – পার্ট। বিষণ্ণতা ছাড়া আর ভালবাসা কিছু নেই

ডাউন-সিন্ড্রোম

বেড়ালটা দেকতে পাচ্চে, রাস্তায় সার দিয়ে দাঁড়ানো লাইন। চোক তুলতেই সে এ’ও দেকতে পাচ্চে যে সামনে রয়েচে একটি মিষ্টির দোকান। সে ঘড়ি দেকতে জানে নে কো, যদি জানত, তাহলে জানতে পারত একন ঘড়িতে পৌনে একটা। আর এ দিশ্য সে ককনও দেকেনি যে ভাইফোঁটার আগের দিন ছাড়া বেলা একটার সময় লোকে মিষ্টির দোকানে লাইন দিয়েচে। এমনকি বোশেকের পয়লা আসতেও বেশ দেরি আচে যকন। এদিকে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং এর দফা রফা হয়েচে কয়েক জায়গায়। লোকজন চান করে, বগলে পাউডার দিয়ে বাজারের থলি হাতে মিষ্টির দোকানের দিকে এগিয়েচে। কারও কারও ঘাড় থেকে ঘামে পাউডার গলে সাদা দুধের মতো গড়িয়ে পড়চে। সে সব দুধ নষ্ট হওয়া নিয়ে কারো মাতাব্যতা নেই কো। যে সমস্ত মাসিমারা ডাঁটা চচ্চড়িটা কড়াইতে চাপিয়েচিল তারা কোনোমতে তার আঁচ কমিয়ে, কড়াইয়ের ওপর একটা থালা চাপা দিয়ে পড়ি কি মরি করে দোকানে এয়েচে। তাদের আসার একটা কারণ আচে। কারণটা খোলসা করা যাক। মিষ্টি না পেয়ে ঢ্যামনা মিনসেগুলো বাজার থেকে কাঁচা আম, জলপাই, টমেটো, কামরাঙ্গা এসব কিনে আনচিল। আনচিল কেজি খানেক করে চিনি বা বাতাসা। সে দিয়ে মা-ঠাকরুণদের চাটনি করতে হচ্চিল, আবার তা খাবার পরে বেড়ে দিতে হচ্চিল, তুলতে হচ্চিল। এ নিয়ে সেয়ানা মাসিমারা তো ফেসবুকে খুব করে লিকচিলও। তাদের মনের গোপনে এমনও ইচ্চে ছিল না কি, যে এই ইস্যু ধরে তারা নতুন কোনো নারীবাদ চালু করবে এই পুরুষতান্ত্রিক বা মিসোজিনিস্ট লোকেদের বিরুদ্দে? 
তা যাকগে যাক, একন মিষ্টির দোকান খুলেচে। সক্কালে উটে হাগার মতো, মিষ্টিও যে বাঙালির এত্তটা প্রয়োজনীয়, তা বোজা যেত নে কো এই লকডাউন না এলে। সকালে জলখাবারের পর একটা, বিকেলের টিপিনের পরে একটা আর রাতে খাবারের পর একটা করে মিষ্টি না হলে বাঙালির সুগার যে ফল করবে এমন ধারণা থেকেই কিচু মামুণিরা নিজেদের জন্যে ও তাদের বাপিদের জন্যে দোকান থেকে কিচু না পেয়ে ক্যাডবেরিও কিনে রেকেচিল। তবে ফ্রিজ বেশী পরিমাণে খোলার জন্যে তা কোথায়, কোন গুহ্যদ্বারে ঢুকে গেচে তা নিয়ে একন চিরুনীতল্লাশি চালালেও বাল ছাড়া কিচুই বেরুবে নে কো। এই তল্লাশি থেকেই সন্দেহের কতা আসে। মোবাইল লুকোনোর ব্যাপারটাও আঁশটে গন্দের মতো করে চলেই আসে। যেমন লকডাউন না এলে কি বেশ কিচু বৌদি নিজের হোয়াটস অ্যাপ থেকে নিজের ছপি তুলে নিত? এই যে একন ছেলে মানুষেরা আর মেয়ে মানুষেরা বেলার দিকে বা সন্দের দিকে নিজের নিজের সোয়ামীর সাতে ছাতে উটে চাঁদ দেকার অচিলায় প্রেম করচে, বিয়ের প্রায় ছ’বচর পরেও তা আর যাই হোক মদ্দবিত্ত বাঙালির অভ্যেসের বাইরে। অভ্যেসের বাইরে অনেক কিচুই গেচে। ঢেঁকিও যেমন স্বর্গে গেলে ধান ভাংচে নে কো, তেমন যারা আপিস থেকে ফিরে মুক গুঁজে চ্যাট করত, তারাও তা করার সুযোগ পাচ্চে নে কো। লকডাউনে পরকীয়ার বাজার খারাপ। ফেসবুকে তো এমনও দেকা ও শোনা যাচ্চে যে, অনেকে না কি তার গার্লফ্রেণ্ডকে ছেড়ে আবার বিয়ে করা বউকে ভালবেসে ফেলেচে। এসব দেকে ও শুনে আমোদ পাওয়া বাঙালি যারপরনাই বোরিং দিনের মদ্দে সামান্য হ্যা হ্যা করে উটচে। আর কে না জানে, লোকেদের এই হ্যা হ্যা করার ব্যাপারটা করোনার চেয়েও সংক্রামক! না হলে, শুদু চা খেতে এয়েচিল বলে গোটা তিনেক লোক এভাবে ফেমাস হয়ে যায়! বাঙালি পারে। এককালে কুখ্যাত কারণে হলেও উত্তর কলকাতার মস্তানদের নিয়ে রসালো গপ্পো ছড়াতো, একন এসব নিয়ে ফেসবুক পাড়া সরগরম হয়ে থাকে। 
তবে একটা ব্যাপার বেড়ালটা বুজতে পারচে। আসচে বচর বইমেলায় বিক্কিরিবাট্টা আরও বাড়বে। একন লকডাউনে যে ভাবে অর্ত্তনীতি ধসে পড়েচে তা ঘুরে দাঁড়াবে বাংলার বই বিক্কিরিকে কেন্দ করে। সে বুজতে পারচে, সেই নকশাল আমলে যেভাবে এক একজন নকশাল বাড়ির ভেতরে বোমা বাঁধত, অতচ বাইরে থেকে বোজা যেত নে, ঠিক তেমনই একন কবিরা নিজেদের ভেতরে ঘোঁট পাকাচ্চে। এই ঘোঁট সব সরেস হয়ে আসচে বইমেলায় বেরিয়ে পড়বে। রাস্তার বন্দ করা ম্যানহোলের তলায় ন্যাকড়া পোড়ার ধোঁয়া দিলে যেভাবে আরশোলা বেরিয়ে আসে ভকভক করে, তেমন কলকাতা বইমেলায় আসচে বচর বইগুলো বেরিয়ে পড়বে। প্রকাশকের সংক্যা সাড়ে সাতাশ পারসেন্ট বেড়েও যে যাবে নে এমন কতা আগে থেকে বলা যায় নে কো। 
এরই মদ্দে কানাঘুষো শোনা যাচ্চে সরকার চিন থেকেই চিকিচ্চের ব্যাপারে কিচু সাহায্য নিচ্চে। সে ব্যাপারে শোনামাত্তরই কিচু বাঙালি যেমন চিনের চেয়ার, আমাদের কমোড, চিনের খেলনা, আমাদের সেক্স টয় বলে মনে মনে লাপিয়ে উটচে, তেমন কেউ কেউ তা নিতে অস্বীকার ভি করচে। তবে কেউ ভাবচে, সে একবার ভারতে এয়ে পড়লে সে তো ভারতীয়ই হয়ে পড়ে। যেমন আর যাই হোক মিষ্টির অরিজিনও তো একানে নয় কো বলে শোনা যায়। তবে তা বাঙালি একন নিজের বলেই দাবি করে। ডেসার্ট কিন্তু বাংলা মিষ্টির বহু আগে হয়েচিল সে কতা বেড়ালটা কারও মুকে শুনে থাকবে। লোকের মুকের ঝাল বেশি খাওয়া উচিত নয় কো বলেই, এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করার পরে পরেই তার নটেগাচ মুচড়ে দেওয়া হল। 
একন হরবখত দুকুরের দিকে বারান্দায় রঞ্জনাদের দেকতে পাওয়া যাচ্চে। কিন্তু তাদের দেকার জন্যে কোনো অঞ্জন একন রাস্তায় নেই কো। পাড়ার এমন কেউও সেকানে নেই কো যে ঠ্যাং খোঁড়া করে দেবে। একটা একুইলিব্রিয়াম চলচে। কোত্তাও কোনো ঝামেলা দেকা যাচ্চে নে। এই মামুণিরা বুকে বালিশ চেপে একন তাদের নাগরদের সাতে ভিডিও ভ্যাট করচে। আর ককনও ককনও কোনো কিচু যে চ্যাটচ্যাট করেও উটচে নে এমন নয় কো। তবে নিজেদের জামাকাপড় একন নিজেদেরই ধুতে ও কাচতে হচ্চে। নিজেদেরই শুকোতে দিতে হচ্চে। এতে অনেকে যারা কোনোকালে ছাতে ওটে নে, তাদেরও ছাতের পতটা চেনা হয়ে যাচ্চে। লোকে একন ঘুরতে বেরোতে গড়িয়াহাট তো দূর, কোত্তাও যাচ্চে নে। যারা বাড়িতে থাকে, তা একতলা দোতলা করে বেড়াচ্চে, আর যারা ফ্ল্যাটে থাকে তারা একঘর থেকে অন্যঘরে ঘুরে আসচে। এরই মদ্দে ঘতে যাদের সামান্য বুদ্দি আচে, তারা ল্যাপটপ খুলে বসেচে। গুগুল ম্যাপের ভেতর ওই পুতুলটাকে নামিয়ে দিয়ে নামিবিয়া থেকে মরোক্কোর পতেঘাটে ঘুরে আসচে। এর জন্যে সরকার থেকে একনও পাসপোর্ট ভিসা চাওয়া শুরু করে নি কো। যদিও এ রাজ্য থেকে সে রাজ্যে যাবার বর্ডার সিল করে দেওয়া হয়েচে। তবে বেড়ালটার যেতে তেমন বাদা হতে পারে বলে মনে হয় নে, যদিও সেই চেষ্টাও সে করে নি কো। এমনিতেই যে সারাদিন শুয়ে বসে ন্যাজ জুলিয়ে থাকে, তার কাচে তো রোববার সবদিনই। তার কাচে লকডাউনই বা কী বা লক আপই বা কি! তবে বিবাহত পুরুষ মনিষ্যেদের কাচে এই লকডাউন লক আপের সমান। এই যে একতা মাতায় এসে পড়ল, তার মানে বোজাই যাচ্চে যে এ নিয়ে এর পরের এপিসোডে খানিক কতাবাত্তা হয়ে থাকবে। 
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।