• Uncategorized
  • 0

টেকটাচ টক – ১০০দিন: বিশেষ সংখ্যায় তৃষ্ণা বসাক

শত শরতের আয়ু

বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, এই গত একশ দিনে আমার জীবন আমূল বদলে গেছে। এমন যে সিংহহৃদয় আমি, আজকাল কেমন ভয়ে ভয়ে থাকি। এই বুঝি টুং করে মেসেজ ঢুকল হোয়াটস্যাপে কিংবা ফোনটা গেয়ে উঠল ‘রং দে মুঝে গেরুয়া’ (হ্যাঁ এটাই আমার রিংটোন। যদি সভা সমিতিতে সাইলেন্ট করতে ভুলে যাই, তবে গেরেম্ভারি সব বক্তিমের মাঝে , সে এন আর সি হোক, বা হনুলুলুর হত্যারহস্য বা পোস্টমডার্ন কবিতা, অতি বিষণ্ণ একদল মানুষের মাঝে, যাঁদের ধারণা, তাত্ত্বিক আলোচনা খুব বিষণ্ণ মুখে না করলে কোরান মহাভারত সব অশুদ্ধ হয়, সেখানে কাজল আর শাররুখ সহসা বেজে ওঠেন -রং দে মুঝে গেরুয়া! অমনি সবাই আমার দিকে এমন ভাবে তাকান আমি যেন একটা নরকের কীট! আমার কিন্তু হেব্বি মজা লাগে )। না, আপনারা যা ভাবছেন তা নয়, আমি কারো টাকা ধার করে ঘাপটি মেরে বসে নেই, কিংবা দাউদ আমাকে ফোন করতে পারেন এমন কোন মহৎ কাজও আমি করিনি, তবু বিশেষ বিশেষ নাম্বার থেকে ফোন বা বার্তা এলে আমি ভয় পাই, প্রায় থ্রেট কলের মতোই মনে হয় আমার। ভজন, ঋষি বা তুষ্টি-নামগুলো খুব নিরীহ, এমনকি ঈশ্বরীয় ধরনের হলেও, বন্ধুগণ, নাম দেখে বিভ্রান্ত হবেন না।এঁরা  নিউ ক্যাসলে কয়লা বেচার ক্ষমতা ধরেন।এঁদের কাছে  একটা লম্বা লিস্টি থাকে, সারা বছর কী কী হিজিবিজি দিবস, সব লেখা সেখানে। আর পাপারাতজি স্টাইলে এঁরা হঠাত হঠাত গহন গোপন এবং দুর্বল মুহূর্তে  নিরীহ পেটরোগা লেখকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন আর বিচ্ছিরি বিচ্ছিরি আবদার করেন। পুরূষ দিবস, চাচা নেহরুর জন্মদিন- অফুরান এঁদের তালিকা। এই হারে চললে এঁরা আমাকে দিয়ে সচিত্র বাঘ শিকার কিংবা  সহজে বেলি ড্যান্সিং  কিংবা নেতাজি ফিরিয়া আসিলেন অব্দি যাচ্ছেতাই সব জিনিস লিখিয়ে নেবেন আর অবাক কাণ্ড, পাবলিক সেই সব পড়েও ফেলবে!
আর লজ্জার কথা কি বলব, পাবলিক পড়ছেও। কে যেন বলেছিল এই পাবলিক মশাই বড় গোলমেলে। সেই গোলমেলে পাবলিককেও এঁরা পকেটে পুরে ফেলেছেন, অক্লেশে। নাহ, অক্লেশে শব্দটা ঠিক নয়, আমি তো দেখতে পাচ্ছি, এঁরা এই কাজের জন্যে নিজেরা যথেষ্ট ক্লেশ স্বীকার করেন, আর বলাই বাহুল্য লেখকদেরও যথেষ্ট ক্লেশ দিয়ে থাকেন। আর ওই যে রবিবাবু বলেছেন না, ‘একাকী গায়কের নহে কো গান, গাহিতে হবে দোঁহে মিলে’ আমি আরও একধাপ এগিয়ে বলি, লেখক, প্রকাশক/সম্পাদক আর পাঠক – এই ত্রহ্যস্পর্শ হলেই সাহিত্য দাঁড়ায়। কারণ খেয়াল করে দেখবেন সাহিত্য মানে হচ্ছে সহিতের ভাব। তাই পারস্পরিক মত বিনিময়ের জায়গা তৈরি না হলে শিল্প-সাহিত্য করে লাভ নেই।  বেশ কয়েক বছর আগে কলকাতা বইমেলায় প্রথম স্টল দিয়েছিল বাংলালাইভ ডট কম বলে একটি বৈদ্যুতিন পত্রিকা। সেই স্টলে যারা যাচ্ছিল, সবাইকে দেওয়া হচ্ছিল একটা করে সুন্দর পেজমার্ক। ভারি ধন্দ লেগেছিল দেখে। ই-পত্রিকা বা ই-বইয়ের স্পাইন বা মেরুদণ্ড কোথায় যে পেজমার্ক লাগবে? তারপর তো দীর্ঘদিন চলল বই আর ই-বই এর তরজা। কে থাকবে আর কে যাবে। শেষে দেখা গেল ঝোড়ো  হাওয়া আর পোড়ো বাড়ির মত সব মিলে গেছে। যুগটা যে কনভারজেন্সের। প্রতিটি মাধ্যম বেঁচে থাকে নিজের শক্তিতে। টেকটাচটকের তরুণ তুর্কীরা সেটাই চেষ্টা করছেন, আর পেরিয়েও এলেন একশো দিন।  সাড়ে বত্রিশ ভাজা এঁরা বেচে চলেছেন দারুণ সব মোড়কে।আর এই একশ দিনেই বিষয় নির্বাচনে, পরিবেশনে, আঙ্গিকে এঁরা একটা সিগনেচার তৈরি করে ফেলেছেন।
বহু শতাব্দী আগে নাকি এদেশে বছর শুরু হত গ্রীষ্ম নয়, শরত থেকে। বড়রা আশীর্বাদ করে বলতেন শত শরতের আয়ু পাও। আমি বন্ধু হিসেবে সেই শুভেচ্ছাটুকু পাঠালাম টেকটাচটককে। চাইব আরও একশ দিন পেরবার আগেই এঁরা এদের ঘর গেরস্তালি এমন গুছিয়ে নিতে পারবেন যাতে অতিথি লেখককে সাম্মানিক দেওয়া যায়।
এই রে আবার ফোন বাজছে। উহ, ভজন দত্ত!  এ বছর আর কটা দিবস বাকি আছে, বলতে পারেন?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।