• Uncategorized
  • 0

টেকটাচ টক – ১০০দিন: বিশেষ সংখ্যায় হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

অভিমানের গন্ধ ভরা বিষন্ন পথ

অনেকটা পথ হেঁটে এসে যেখানে দাঁড়ালাম সেখানে শুধু আমি একা নই। আমার হেঁটে আসা পথের যাবতীয় দৃশ্যও আমার সঙ্গে। সেই সঙ্গে রয়েছে সমস্ত কথাবার্তা। হাঁটতে হাঁটতে আমার কানে এসেছে পথ সম্পর্কে নানান মন্তব্য। এই মন্তব্যই আমাকে দেখিয়ে দিয়েছে পথের হাজার রঙ। অন্য কোন চরিত্র বিশ্লেষণের কাছে পথের চরিত্র একেবারেই মেলে না। সব পথই তার নিজের মতো করে সত্য। কোনোটাই খারাপ কিছু নয়। পথের চরিত্র অনুযায়ী বদলে যেতেই হবে নিজেকে। তাই অকৃতকার্যতার নামমাত্র দোষও আমরা পথের ওপর চাপাতে পারি না। আসলে পথকেই আমরা ব্যবহার করতে পারি নি।
পাঁচমাথায় দাঁড়িয়ে দেখি আমার সামনে দাঁড়িয়ে পাঁচ পথ। সকলেরই পরিচয় আমি হাঁটতে হাঁটতে জেনে নিয়েছি। শুধু তাই নয়, পথের ওপর শুয়ে আছে পথ —— আমি দুজনকেই চিনি। অন্তত পৃথিবীর প্রথম পথ যার ওপরে আমি শুয়ে আছি আমি তাকে পাখি বলি। চিনি বলাটা অবশ্য ঠিক নয়। চিনি বললে গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে সাপ। মেঘের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে মেঘ। পথের মনের ওপর চেপে বসে অভিমানের মেঘ। আমি যখন তাকে চিনি বলি তখন কেন সে অবহেলার চাদরে মোড়া। কেন তাকে কেউ দেখেও দেখে না। অথচ আমি যখন তাকে চিনি বলি তখন তার যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যে বলে প্রমাণিত হয়ে যায়। তাই পথ আমাকে ঘিরে ধরে, কী পথ চেনো ? আমি তো পথ হতে চাই নি। উড়ে যেতে চেয়েছিলাম। তোমরা বলেছিলে, এভাবেও উড়ে যাওয়া যায়। আজ বুঝি, এটা উড়ে যাওয়া নয়, জোর করে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া।
পথের কাছে এসে অনেকটাই গুটিয়ে যাই। আর সত্যিই তো পথকে আজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে উড়ে যেতে হয়। দ্বিতীয় পথকে দেখেছি অনেক কাছ থেকে। তাকে চেনার ওপর অনেক জোর আছে আমার। আসলে ওটা আমারই মনের একটা আস্তরণ। আমার গায়ের আস্তরণ থেকেই পাখি পেয়েছিল তার খোঁটার ধান। আমাকে দেখেই তার ডানাদুটো কিছুটা হলেও গতি কমিয়েছিল। কতদিন সে কথা বলে নি। উড়ে যায় নি কতকাল। কতকাল তার হৃদয় জুড়ে বেজে ওঠে নি বাঁশি। তবুও সে চুপ, যেন সে চিরকালের মতো মাটি। দিগন্ত পর্যন্ত নিজেকে ছুটিয়ে দিয়েছে পাখি। অথচ আমরা পাখি হই নি। বৃষ্টির হাত ধরে আকাশে তাকাই নি কখনও। দরজা খুলে একদিনের জন্যেও বাইরে বেরিয়ে এসে সময় ভুলে যাই নি। পাখি আমাদের কথা মতোই দিগন্ত পর্যন্ত উড়ে গেছে।
অথচ আজ আমাদের একটাও চড়ুই নেই। এসো আমরা গাছে জল দিই। ছাগলগুলোর জন্য সবুজ ঘাস দেখে দিই। কাটা ঘুড়িটা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার হাতে দিয়ে আসি। ফিরে আসবে না জেনেও পাখি উড়ে যাক।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *