• Uncategorized
  • 0

টেকটাচ টক – ১০০দিন: বিশেষ সংখ্যায় শাপলা সপর্যিতা

হৃদয় থেকে বলছি

সেবার কলকাতার আত্মজা পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত আমার বড় গল্পের বই টাইমমেশিনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম প্রকাশক অরুণাভ চট্টপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে। সাথে পারমিতা চক্রবর্ত্তীর সৃজন অনলাইন পোর্টালটির প্রিন্ট মিডিয়ার আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানটিতেও আমন্ত্রিত হয়েছিলাম আগেই। ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭. রবীন্দ্রসদনে কবি ভজন দত্তের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল পারমিতা। পারমিতার সৃজনে ধারাবাহিক লিখছি তাই নামে আর ছবিতে সবাই মোটামুটি আমাকে চিনে গেছেন আগেই। অবনীন্দ্র সভাকক্ষে চলতে থাকা অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে আমি বিতস্তা ঘোষাল, পারমিতা, চিত্রশিল্পী মুক্তিরাম মাইতিসহ আরো অনেকে চায়ের স্টলে আড্ডা দিতে বের হই। ভজনদার সাথেও আড্ডা জমে ওঠে। সেদিনই ভজনদা আমাকে বাঁকুড়া যাবার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কথার কথা ভেবেছিলাম সেদিন। ২০১৮ তে কোলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় গিয়ে ভজন দত্তের আন্তরিক আমন্ত্রণে সাড়া দিতে বাধ্য হই। তিনি আমাকে বাঁকুড়া নিয়ে যাবেনই। বাইরে দারুণ আধুনিক দেখতে হলেও ভেতরে ভেতরে আমি আসলে একজন খুব আটপৌরে মানুষ। এখানে সেখানে একা ঘুরে বেড়াতে দিক হারানোর ভয় আমার বাংলাদেশেও লেগে থাকে। আর এ তো কেলকাতা। তার ‍ওপর কলেজস্ট্রিট থেকে হাওড়া রেলস্টেশনে গিয়ে রেলে চড়ে পাঁচ-ছ ঘ্ন্টার জার্নি করে বাঁকুড়া যাওয়া! এ আমার মতো সেকেলে আর অনাধুনিক লেখকের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ভাবলাম এ কথা বলে এবারের মতো বাঁচা গেছে বুঝি।কিন্তু কোন লাভই হলোনা।কবি বিশ্বজিৎ লায়েককে তিনি ফিট করে দিলেন আমাকে কলকাতা থেকে বাঁকুড়া নিয়ে যাওয়ার জন্য। কলকাতায় আমার অভিভাবক সুরঞ্জন দত্ত রায় চৌধুরী। তাকে বিশ্বজিতের সব ঠিকানা ফেসবুক আইডি দেওয়া হলো। তিনি বিশ্বজিতের সাথে কথা বললেন। তারপর কলকাতা বইমেলা থেকে রাত আটটায় আমাকে তুলে নিয়ে এলেন সুরঞ্জন দত্ত রায় চৌধুরী আর বিশ্বজিৎ। কলেজ স্ট্রিটে হোটেলে নেমে একটা শাওয়ার নিয়েই দে ছুট। রাত প্রায় ১১ টায় আমি আর বিশ্বজিৎ চড়ে বসি বাঁকুড়ার উদ্দেশে। পুরোটা জার্নি আমি ঘুমাই। আর বিশ্বজিৎ ভজনদত্তের বকা খায়। ‘ওকে এভাবে নিয়ে এলে কেন! ওই গাড়িতে আননি কেন? ট্রেনে না এনে বাসে চড়ালে কেন?’ তিনিতো আর জানেন না নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন ধরার ভয়ে আমি বিশ্বজিৎকে বুঝিয়ে বাসে যাবার প্ল্যান করেছি। তাই এমনি অজস্র বকা খেতে খেতে আমাকে নিয়ে বিশ্বজিৎ ভোর পাঁচটায় যখন বাঁকুড়া নামলো তখন প্রচণ্ড ঠান্ডায় আমার গায়ে বিশ্বজিতের জ্যাকেট।ভাস্কর সেন দাদা আমাকে নিতে এলেন। তার বাড়িতে দুঘন্টা ঘুমিয়ে বৌদির হাতে বানানো হরেক পদের নাস্তা খেয়ে বাঁকুড়া লিটল ম্যাগাজিন মেলায় উপস্থিত হই। অভুতপূর্ব ভালোবাসায় আর সম্মানে বিভুষিত হয়ে সেদিন ভেসে চলেছি। ঠিক এমনি সময় মিঃ কমল ঘোষ (অ্যাসিস্টেন্ট ইন্সপেকটর অব স্কুল, বাঁকুড়া) আমার খোঁজ করতে চলে এলেন। আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম সেদিন শহর থেকে দূরের ওই উষর লালমাটির মানুষের ভালোবাসায়। সুরঞ্জনদার অনুরোধে তিনি চলে এলেন আমার খোঁজ খবর জানতে। বাঁকুড়ার মানুষের আন্তরিকতা এতটা হৃদয়লগ্ন যা ভুলবার নয়। ভুলতেও পারি নি। সেই থেকে ভজনদার সাথে আমার কাজ শুরু। তিনি যখন টেকটাচ টকে শুরু করতে যাচ্ছেন জানালেন আর এর সাথে যুক্ত হয়ে একদিন সম্পাদনার কাজ করতে বললেন, আমি সঙ্গত কারণেই নিতে পারলাম না কাজটা। একই ভাবে ২০১৬ সালে যখন তীরন্দাজ অনলাইন পোর্টালের সম্পাদনার সাথে যুক্ত হতে অনুরোধ করা হয়েছিল আমি সসম্মানে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। ব্যক্তিগত জীবনযুদ্ধ আর দুই কন্যার দায়িত্ব পালন করে সংসার চাকরি এসব সামলে সম্পাদনার জন্য যতটা সময় দেওয়া দরকার তা আমি পুরোপুরি দিতে পারবো না, এটা নিশ্চিত জেনে। আমি লেখক। আমি লিখে যেতে চাই। আসলে ভজন দত্ত এমন একজন মানুষ যাকে এড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি টেকটাচ টকের সাথে ‍যুক্ত হলাম। বললাম ‘কবিতা নয়, গদ্য লিখবো আর একটানাই আমার লেখা পাবেন এখানে।’ আজও তাই চলছে। অসাধারণ গেটআপ মেকআপের সাথে যোগ্যতার উচ্চতর মার্গ ছুঁয়ে চমৎকারভাবে ১০০ টি দিন কখন যেন কিভাবে পার করে দিল টেকটাচ টক! প্রতিদিনের জন্য লেখা, পড়া, বাছাই, সম্পাদনা তারপর প্রকাশ করা – এ যে কতবড় ঝক্কি তা লেখক সম্পাদক মাত্রই জানেন। চাকরি-সংসার করেও ১০০ টি দিন এ কাজে কাজে পার করে দেওয়া আমার কাছে খুব সাধারণ কোনো কথা নয়। টেক টাচ টকের ১০০ তম দিনে আমি তাই এর সাথে যুক্ত সকল লেখক, সম্পাদক আর মঙ্গলকামিদের অন্তর থেকে প্রচুর ভালোবাসা জানাই। এভাবেই টেকটাচ টক পরবর্বতী ১০০ বছর পার করুক হৃদয় থেকে এই কামনা রইলো।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।