• Uncategorized
  • 0

চিন্তার স্বাধীনতা মাথায় রাখুন

জন্ম- ১৯৬৭, বরানগর। বর্তমানে দার্জিলিং জেলার মিরিক মহকুমার উপশাসক ও উপসমাহর্তা পদে আসীন। চাকরীসূত্রে ও দৈনন্দিন কাজের অভিজ্ঞতায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের সমস্যা সমাধানে তাঁর লেখনী সোচ্চার।
লিখেছেন – মৃদুল শ্রীমানী
সেই যে জোব চার্ণকের শহরে পাতাল রেলে চেপে এক যুগল ঘনিষ্ঠ হয়েছিল। হ‍্যাঁ, ঊনবিংশ শতকে নয়, এ একেবারে একবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকের শেষ দিকেই। মেট্রো রেলে নবীন যুগলের প্রেম প্রকাশ আন্দোলনে কেউ কেউ খুব রেগেছেন। তাঁরা বলছেন, অতোই যদি আদেখলেপনা করবি, তাহলে তোদের মারধোর খেতেই হবে।
আর আরেক দল বলছে, কে কি করে ভালবাসবে, সে নিয়ে আর পাঁচজনের এত কিসের মাথা ব্যথা? আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়াই বা কেন?
বলা বাহুল্য, কলকাতা মেট্রো কাণ্ডে আমি স্পষ্টতঃ গণধোলাইয়ের বিরুদ্ধতা করছি। আমি গণধোলাইয়ের বিরুদ্ধে। প্রেমিক যুগলের বিরুদ্ধে যদি কিছু করতে হয়, পুলিশ আদালতের কাছে কেস দেবে। অপরাধ প্রমাণ হলে আদালতে ফৌজদারি বিধিমতে শাস্তি হবে। কিন্তু ক্যাঙ্গারু কোর্ট চলবে না। এমন কি পুলিশও পিটাবে না। কান ধরে উঠবোস ? না, তাও হবে না। পুলিশ কিন্তু বিচারক নয়। শাস্তির রকম আর পরিমাণ সে ঠিক করবে না। সে একতিয়ার একমাত্র আদালতের হাতে।
আমার এই সব বক্তব্য জেনে, এক দিদিমণি ভারি চটেছেন । রাগী রাগী মুখ করে কেবলই আমায় গাল দিয়ে চলেছেন। আমি তাঁর এই বকুনি খুব উপভোগ করছি।
গোড়ার কথাটা বলেছিলেন কবি জন মিল্টন ( ১৬০৮ – ১৬৭৪)। সেই যে বিখ্যাত কবি, যিনি “প্যারাডাইস লস্ট” লিখে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ওই কবি তিন তিনটি বিয়ে করেছিলেন। হ্যাঁ গো দিদিমণি, তিন তিনটে। প্রথমার নাম মেরী পাওয়েল, দ্বিতীয়া ক্যাথারিণ উডকক এর পাণিগ্রহণ করেন ১৬৫৬ তে। ওই ক্যাথারিণ ১৬৫৮ তে মারা পড়লে তৃতীয়া এলিজাবেথ মিনশুলকে ঘরে আনেন ১৬৬৩ তে। মিলটনের বয়স তখন ৫৫ ।
তো প্রথমা মেরী পাওয়েলের সাথে কবির ভারি একটা বনিবনা হত না। খিটিমিটি অশান্তি দিনরাত । কবি কিনা সৃষ্টিশীল মানুষ। দিনরাত যদি দম্পতির মধ্যে ঝগড়া করে টেনশন নিয়েই কাটবে, কবি লিখবেন কখন?
কবির মাথায় ঘোরে ঝগড়াটে খাণ্ডারনী বউ মেরীর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা । কিন্তু পাবেন কি করে। সেই যুগে তো মানুষ ভাবত ম্যারেজেস আর মেড ইন হেভেন, বিয়ে না কি জন্ম জন্মান্তরের সম্পর্ক । কবি ডিভোর্সের কথা কল্পনা করেন, আহা, ডিভোর্সের মতো একটা ব্যাপার হলে এই দজ্জাল মহিলার হাত থেকে রেহাই মেলে। ব্যক্তিগত জ্বালায় জ্বলতে জ্বলতে মিল্টন ডিভোর্সের সপক্ষে কলম ধরলেন। তাতে অবশ্য মহাকবির কলমের ঐশ্বর্য ছিল না। বড়ো সাধারণ, সাদামাটা, দুঃখ বাণী ।
কিন্তু সেই ভগবৎ বিরচিত বিবাহ সম্পর্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণায় ইংলন্ডের চার্চ ও প্রশাসন কবির পরে খুব ক্রুদ্ধ আর ক্ষুব্ধ হন। মিলটনের এই লেখাকে যারপরনাই অসভ্যতা জ্ঞান করেন তাঁরা। নিষিদ্ধ করেন ডিভোর্সের সপক্ষে জন মিল্টনের লেখা। এই গাজোয়ারি ব্যান করার বিরুদ্ধে মহাকবির কলম গর্জে ওঠে । জন্ম নেয় আরিওপ্যাগিটিকা , সে গ্রন্থ চিরকালের মানব মুক্তির কথা বলে, চিন্তার স্বাধীনতার কথা বলে।
চিন্তার স্বাধীনতা মাথায় রাখলে ব্যাপারগুলো অন্য রকম হয়।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।