• Uncategorized
  • 0

গল্পে ঋভু চট্টোপাধ্যায়

জামাইষষ্ঠী স্পেশাল

বাসস্ট্যাণ্ডে ভিড় দেখে পলাশের মাথা খারাপ হয়ে যাবার জোগাড়।বাপরে বাপ এত্তো লোক জামাইষষ্ঠী করতে যাবে! পলাশের প্রথমে কিরকম লজ্জা করছিল।অবশ্য চারদিকটা একবার তাকিয়ে দেখে নেওয়ার পর কিছু ক্ষণের মধ্যেই লজ্জাটা কেটে গেল।এটা অবশ্য নতুন নয়, যখন সব কিছু স্বাভাবিক ছিল তখনও এই জামাইষষ্ঠীর দিন শ্বশুর বাড়ি যেতে পলাশের কেমন একটা লাগত।আশেপাশের সবাই একটা মজার চোখে তাকিয়ে দেখত।পলাশের তখনও নিজেকে একটা অপরাধী বলে মনে হত।আগে অবশ্য ব্যাপারটা সেরকম ছিল না।এই কয়েকবছর জামাইষষ্ঠীর দিন সরকার হাফ ছুটি দেবার পর সব হিসাব কেমন যেন গণ্ডগোল হতে আরম্ভ করল।অফিসের কলিগরা ঠেস মেরে কথা বলতে আরম্ভ করল।নতুন জয়েনিং করিমুল নামের সেদিন ছোকড়াটাও বলে কিনা,‘চক্রবর্তীদা একটু মেপে খাবেন, না পারলে আমাদের কথা একটু ভাববেন।’ ওদিকে বিজয় রাউত ব্যাটা বাঙাল চিবিয়ে বলে ওঠে,‘এই বয়সে শ্বশুরের ঘাড় খান নাই বা ভাইঙ্গলেন, ছাড়ান দেন।’
–শ্বশুরের ঘাড় ভাঙি! মর্কট। তোদের নেই বলে বেশি হিংসা।
এবছর অবশ্য বলবার কেউ নেই।এই ভয়ানক অবস্থাতে অফিস বন্ধ।প্রথম দিকে কয়েকজনকে রোটেশেনে কাজ করতে বলা হলেও শেষ পর্যন্ত হল না।সবাই যাবে কিভাবে? বাস ট্রেন তো কিছুই চলছে না। দুদিন অফিস গাড়ি দিলেও তারপর বলে দিল,‘অসুবিধা হচ্ছে, গাড়ির ড্রাইভার আর নিয়ে যাবে না বলছে।কোথায় নাকি একটা ড্রাইভার ডেডবডি নিয়ে যাবার সময় রাস্তার মাঝেই স্ট্রোকে মারা যায়।তারপর ভয়ে এই বেচারার আত্মারাম খাঁচা। তাছাড়া সবাই তো কাছাকাছি থাকে না।দু’শ আড়াইশো কিলোমিটার দূর থেকে আসবে কিভাবে?’সব ভেবে অফিসই বন্ধ। ঘর থেকে যতটা সম্ভব কাজ করা যায় পলাশ করবার চেষ্টা করছে।কিন্তু তারপর!
ঘরে বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গেলেও কিছু করবার নেই।অন্যবার শাশুড়িমা মোটামুটি পনেরো কুড়ি দিন আগে জামাইষষ্ঠীর নিমন্ত্রণ করে দেন।এবছর বউ অনিমা বারবার করে সে কথা শোনানোর সঙ্গে শ্বশুর শাশুড়ির দুঃখের কথাও বলছে। পলাশের এসব শুনলেও কিছু করবার নেই। মনে মনেই গত বছরের খাওয়া খাসির মাংস, ফ্রায়েড রাইস, আম, লিচুর স্বপ্ন দেখে জাবর কাটতে আরম্ভ করে দিয়েছে। কষ্ট হলেও কিছু করবার নেই।এবছর ঐ সময় ট্রেন বাস কিছু চলবারই কোন সম্ভাবনা নেই।কিন্তু দিন কয়েক আগেই সন্ধে বেলায় টিভিতে খবরটা দেখেই শ্বশুর মশাই খুব উত্তেজিত হয়ে পলাশকে ফোনে বলে ওঠেন,‘আরে এক্ষুণি খবর দেখ। সরকার থেকে জামাইদের জন্য বাস দিচ্ছে।’
–বাস দিচ্ছে!
প্রথমে কথাগুলো বিশ্বাস করতে না পারলেও কিছু ক্ষণ পরেই নিউস চালাতেই পলাশ বিশ্বাস করতে বাধ্য হল।সব নিউস চ্যানেলে ব্রেকিং নিউস দেখাচ্ছে।
‘জামাইষ্ঠীতে যাবার জন্য জামাইদের জন্য বাস দিচ্ছে সরকার।’ পলাশ ভালো করে দেখল, শুনল।অনিমা সব কিছু দেখে প্রাথমিক ভাবে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল,‘যাক বাবা, একদিনের জন্যে হলেও যেতে পাবো।কতদিন মা বাবাকে দেখিনি বলতো!’
কিন্তু কিছু পরেই আরেকটা ব্রেকিং নিউস দেখে মনটা ভেঙে গেল।এই বাস পরিষেবা শুধু মাত্র জামাইদের জন্য দেওয়া হবে।কোন মহিলাকে মানে মেয়েদের বাসে উঠতে দেওয়া হবে না।এই খবরটাতে আবার পলাশ আনন্দিত হয়ে বলল,‘যাক, এতদিনে সরকার আমাদের দিকে মুখ তুলেছে।দিন রাত চারদিকে শুধু মেয়েদেরই সব কিছু দিতে আরম্ভ করেছিল। আরে বাবা ছেলেদেরকেউ কিছু দে, ওরাও তো সমাজের অঙ্গ।’
পলাশের কথাগুলো শুনে আবার অনিমা ঝগড়া করতে আরম্ভ করে।ঝগড়াতে বারবার করে এই সমাজে মেয়েদের অবস্থা উঠে আসবার পাশে অর্থনীতি, বাম ডান সব পন্থার হাতে নারীরা কিভাবে শোষিত নির্যাতিত হয়েছ বা হচ্ছে তার কথাও উঠে আসতে আরম্ভ করল।পাশে পলাশও কিভাবে মেয়েরা আইনের একটা ধারার অপপ্রয়োগ ও অপব্যবহার করে তার উদাহরণ দিতে আরম্ভ করল।অফিসের কয়েকজন কলিগের পাশে কয়েকজন আত্মীয়ও কিভাবে এই আইনের জন্য পাগল হয়ে যেতে বসেছে সেকথাও জানালো।শেষে পলাশের মা এসে দুজনকে শান্ত করেন।তবে প্রথম দিকে রেগে গেলেও জামাইষষ্ঠীর আগের দিন অবশ্য অনিমাই পলাশের ব্যাগ গুছিয়ে দেয়। পলাশের আবার তখন একা একা যেতে ভালো লাগছিল না।আসলে শ্বশুর বাড়ি সব সময় দু’জন যায় তো, একজন কমে গেলে সব দিকে কিরকম একটা হয়ে যায়।শেষ পর্যন্ত আনিমাই পলাশকে বুঝিয়ে রাজি করে।
নিউস চ্যানেলগুলোই সরকারের সব নির্দেশ গুলো বারবার করে দেখাতে আরম্ভ করেছিল।সরকারের নির্দেশ ছিল, প্রত্যেক জামাইকেই তিনস্তরের মুখবন্ধনী ব্যবহার করতে হবে,সঙ্গে একটা স্যানিটাইজারের বোতল রাখতে হবে। মাঝ রাস্তায় বেশ কয়েকবার বাসের যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে, এবং কোন অসঙ্গতি পেলে সোজা হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া হবে।বাস ছাড়বার অন্তত দুঘন্টা আগে সব জামাইকে স্ট্যাণ্ডে পৌঁছে যেতে হবে।সরকার প্রত্যেকে জামাইএর শ্বশুর বাড়ির কাছের বড় শহরের বাস স্ট্যাণ্ডে পৌঁছে দেবে,ওখান থেকে নিজের ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে জামাইদের পৌঁছে যেতে হবে।আনিমার বাবা অবশ্য সব কিছু শুনে প্রথমেই আনন্দে বলে ওঠেন,‘তোমাকে কিছু চিন্তা করতে হবে না পলাশ।ওরা যেখানে নামাচ্ছে নামাক, তারপর বাকিটা আমি গাড়ি করে নিয়ে আসবো।এর জন্য আমাকেও একটা ই’পাশ দিয়ে দেবে বলেছে।’
কিন্তু বাস স্ট্যাণ্ডে এসে ভিড় দেখে তো পলাশের মাথা খারাপ হয়ে যাবার জোগাড়।প্রশাসন থেকে চারদিকে বড় বড় ফেস্টুনে নোটিশ ঝুলিয়ে জামাইরা কি করবে আর কি করবে না তার একটা লম্বা লিস্ট করে দিয়েছে। তাও সবাই মানছে না।পুলিশ তাদেরকে বুঝিয়ে বলবার চেষ্টা করছে।তবে লাইনটা এত্তো বড় যে সবাই হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে।তাও যদি একটা লাইন হত তবে বলার থাকত।এক একটা জেলার এক একটা মহকুমার জন্য এক একটা বাসের লাইন।পলাশ তার শ্বশুর বাড়ির জেলাও মহকুমার নামটা খুঁজে লাইনে দাঁড়াল। লাইনের মধ্যেই দুবার থার্মাল স্ক্রিনিং হয়ে গেল।প্রথমটাতে অবশ্য পলাশ একটু অবাক হয়ে গেছিল।খুঁজে খুঁজে লাইনে দাঁড়াতেই সামনে দাঁড়ানো একজন ভদ্রলোক হঠাৎ করে নিজের ব্যাগ থেকে একটা ইনফ্রা ফোরহিড থার্মোমিটার বের করে টুক করে পলাশের বড়ি টেম্পারেচার চেক করে বলে উঠলেন,‘যাক আপনার টেম্পারেচার নেই।তারমানে আপনি আমার কাছাকাছি কোন সিটে বসতে পারেন।’ পলাশ একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,‘না হলে কি বাসে উঠতে দিতেন না?’
-না ঠিক তা নয়, তবে আমাকে এই ব্যাগটা খুলতে হত।
পলাশ এতক্ষণ খেয়াল করেনি।এবার করতেই দেখে ভদ্রলোকে সামনে একটা বড় ব্যাগ নামানো আছে।একটু ঘাবড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,‘কি আছে ঐ ব্যাগে?’
–সেরকম কিছু না।দুটো পিপিই।বাসে কার পাশে বসতে পাবো, এই ভয়ে ব্যবস্থা করে নিয়ে এসেছি।সেরকম হলে একটা পরে বাসে চাপবো, তারপর বাস থেকে নেমে আরেকটা পরে শ্বশুর বাড়ি যাবো।তাছাড়া এটা তো আছেই।
শেষের কথাগুলো বলবার সময় ভদ্রলোক নিজের সামনে ঝোলানো আরেকটা বড় বোতলের দিকে আঙুল দেখালো। পলাশ জিজ্ঞেস করতেই জানল,‘ওটা একটা এক লিটারের হ্যাণ্ড স্যানিটাইজার।’ পলাশ একটা লম্বা শ্বাস ফেলে নিজের বাঁ’পকেটে অনা ছোট্ট স্যানিটাইজারের বোতলটাতে হাত দিয়ে ভাবে,‘তাহলে কি খুব ভুল হয়ে গেল? আমার কি আরেকটা বড় স্যানিটাইজার আনা উচিৎ ছিল?’ হঠাৎ সামনের থেকে একটা চিৎকারের আওয়াজ শুনে একটু থতমত খেয়ে গেল।কয়েকজন পুলিশ কর্মীকে ওদিকে ছুটতে দেখে একটু ভয়ই পেল।কিছু ক্ষণ পর একজন পুলিশ কর্মী কাছে এলে পলাশ তাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে,‘কয়েকটা কম বয়সি ছেলে ঝামেলা করতে এসেছিল। তারা বলছে, ‘সরকার জামাইদের দেখলেও হবু জামাইদের দেখছে না।’কয়েকজন নাকি অনশন করবার কথাও বলে।পুলিশ লাঠি পিটিয়ে তাদের তাড়িয়ে দেয়।
পলাশ ও ভদ্রলোক দুজনা সবার সাথে বাসে উঠল।ভদ্রলোক অবশ্য এরমাঝেই বার দশেক নিজের ও পলাশের হাতে স্যানিটাইজার দিয়ে দিলেন।বাসের ভিতরের ব্যবস্থাও খুব ভালো। তিনটে সিটের মাঝেরটাতে কেউ বসতে পারবে না।ভদ্রলোকের ও পলাশের শ্বশুর বাড়ি একই মহকুমায়।বাসে ওঠার পরে পুলিশ বা স্বাস্থ্যকর্মীদের আগেই ঐ ভদ্রলোক সবার জ্বর দেখতে আরম্ভ করবার জন্য থামোর্মিটারটা বের করতে যাবার আগেই পলাশ বলল,‘বাসের কেউ এই সময় প্যারসিটামল জাতীয় কোন ওষুধ খেলে তার তো শরীরে কোন টেম্পারেচার পাবেন না।তখন কি করবেন?’
ভদ্রলোক কথাগুলো মনে দিয়ে শুনে বললেন,‘এটা তো ঠিক বলেছেন।তখন কি করব। তার থেকে বসেই যাই। কি বলুন। নাকি পিপিই’টা পরে ফেলব?’
–কিচ্ছু করতে হবে না।মাঝে মাঝে হ্যাণ্ড স্যানিটাইজারটা ব্যবহার করলেই হবে।
অনেকটা রাস্তা।পলাশ পাশে বসা ভদ্রলোকের সাথে কথা বলছিল। বাসে ওঠার আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল মাঝে দু থেকে তিনবার সরকারি দল উঠে সমস্ত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবে।সেই মত বাস চলার দেড়ঘন্টার মধ্যেই একজায়গায় বাস দাঁড়িয়ে যায়।পুলিশের সাথে কয়েকজন ডাক্তার উঠে সব যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে।কারোর কিছু সমস্যা না পাওয়ার জন্য বাস আবার চলতে আবার করে।পলাশের পাশের ভদ্রলোক আবার হাতে স্যানিটাইজার দেন। আবার এক ঘন্টা পর আরেকটা টিম বাসে ওঠে। আবার একই ভাবে সবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। এবার কিন্তু কয়েকজনের শরীরে সমস্যা দেখা দেয়। কথা মত তাড়াতাড়ি তাদের বাস থেকে নামিয়ে সরকারি অ্যাব্মুলেন্সে তোলা হয়। বাসের মধ্যে বসা পলাশ ও বাকিরা ভয়ে কুঁকড়ে যায়। সেই সময় অবশ্য বাসের সব যাত্রীদের একটা পিপিই কিট দিয়ে বলা হয়,‘এবার সবাই এটা পরে নিন।ফেরার সময় ফেরৎ দিয়ে যাবেন।দয়া করে কেউ এটা নিয়ে বাড়ি পালিয়ে যাবার কথা ভাববেন না। আপনাদের সবার নাম ঠিকানা আমাদের কাছে আছে।’এর মাঝে একবার অনিমা ফোন করে বলে, ‘বাবা ফোনটা বাড়িতে ফেলে গেছে, তুমি বাসস্ট্যাণ্ডে একটু কষ্ট করে খুঁজে নিও।’
সবাই দেরি না করে চটপট করে পরে নেয়।এবার অন্য আরেক সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং সেটা বোঝা যায় শ্বশুরবাড়ির স্টপেজে পৌঁছানোর পর। নেমেও একবার সবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। বাসের সব যাত্রীই কারোর না কারোর জামাই। প্রায় প্রত্যেককেই কেউ না কেউ নিতে এসেছেন। বেশ কয়েকটা বাসও স্ট্যাণ্ডে ঢুকেছে। তারসঙ্গে শ্বশুর বাড়ির লোকজন, সে এক বিরাট ভিড়। পলাশ ভদ্রলোককে বিদায় জানিয়ে নেমে শ্বশুর মশাইকে খুঁজছেন এমন সময় পাশ থেকে একটা গলা শোনে,‘অরূপ নাকি?’
–না স্যার আমি অরূপ নয়।
এরপর প্রতি একদেড় মিনিট পরপর কেউ না কেউ এসে কারোর না কারোর নাম ধরে জিজ্ঞেস করতে থাকেন। সামনে কয়েকজনকে আবার বুকে নামের পোস্টার সেঁটেও ঘুরতে দেখেন।সবাই ঘুরছে আর খুঁজছে।এই বাস স্ট্যাণ্ডেও হবু জামাইদের একটা জমায়েত হয়েছে।ভিড় বাড়ছেই। শ্বশুর মশাইএর ফোন নিয়ে আসার ব্যাপারটাতে তখন ব্যাপারটাকে অতটা গুরুত্ব না দিলেও এখন বুঝছে এটা একটা বিরাট সমস্যার সামনে দাঁড়িয়ে গেছে এনকোয়ারি খুবই ব্যস্ত। পলাশের কথা শুনলই না।।সামনে বসে থাকা একজন পুলিশ কর্মীর কাছে থেকে একটা কাগজের টুকরো আর পেন নিয়ে নিজের নামটা লিখে বুকে সেঁটে নেয়। তারপর সঙ্গে আনা ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বুকে পোস্টারটা সেঁটে ভিড়ের মধ্যেই শ্বশুর মশাইকে খুঁজতে আরম্ভ করে। পিছনে পড়ে থাকে সব বাসগুলো। যাদের সামনে লেখা ‘জামাইষষ্ঠী স্পেশাল।’
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।