• Uncategorized
  • 0

গল্পে অঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়

নরসুন্দর

আয়নার সামনে দাঁড়াতেই মনটা বিরক্তিতে ভরে গেল অভীকের। চুলগুলোর কি হাল হয়েছে; ঠিক যেন কাকের বাসা। মাথা ভরা ঢেউ খেলানো চুলগুলো ওর বড়ই প্রিয়। নির্দিষ্ট সময় অন্তর নামী সেলুনের দামী নাপিতকে দিয়ে চুল সেট করায় অভীক; মানে সেলিব্রিটিদের মতো স্টাইলে কাটাকাটি, নতুন নতুন হেয়ারকালার, মাঝে মাঝে হেয়ার স্পা। কিন্তু যবে থেকে লকডাউন চালু হয়েছে তবে থেকে ওর পছন্দের সেলুনেও ঝুলে গিয়েছে একখানা মস্ত বড় তালা।
অভীক সাধারণত ফিল্মি হিরোদের স্টাইলেই চুল কাটে তবে গতবার ওর প্রিয় ক্রিকেটারের মতো করে হেয়ারকাট করেছিল; মাথার মাঝখানে বড় বড় চুল আর তার চারপাশ প্রায় ন্যাড়া। অফিসের কলিগেরা সবাই খুব প্রশংসা করেছিল ওর হেয়ারকাটের, গার্লফ্রেন্ডরা বলেছিল ওর পার্সোনালিটির সাথে বেশ ম্যাচ করেছে এই নতুন হেয়ারকাট। কিন্তু এখন সেটাই কাল হয়েছে; চারপাশের ছোট ছোট চুলগুলো বড় হয়ে কেমন বিদিকিচ্ছিরি দেখাচ্ছে। এবার একটা ব্যাবস্থা না করলেই নয়।
অভীকের পরিচিতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সোশ্যাল মিডিয়াতে আপডেট দিয়েছে, বউয়ের কাছে চুল কাটছে। তাদের সবার মুখেই একগাল হাসি। তবে কুন্তল কর্তন শেষে আয়না দেখার পর হাসিটা কতক্ষণ স্থায়ী হয়েছে সেটা ওরাই জানে। অভীকের অবশ্য এখনও বিয়ে হয়নি। সবে গত বছর চাকরি পেয়েছে, এবার দু’একটা প্রমোশন পেলেই মা পাত্রী দেখা শুরু করবে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ একটা জবরদস্ত আইডিয়া ক্লিক করে গেল অভীকের মাথায়। ও চটপট আলমারি খুলে একটা চকচকে কাগজে মোড়া বাক্স বের করে আনলো। চাকরি পাওয়ার পর ওর গার্লফ্রেন্ড রোমা গিফট করেছিল এটা; বিয়ার্ড ট্রিমার। রোমা যদিও এখন এক্স হয়ে গিয়েছে কিন্তু ট্রিমারটা এখনও এক্সপায়ার করেনি নিশ্চয় ?? অভীকের যদিও ক্লিন শেভই পছন্দ ছিল, ওতে ঝামেলা কম কিন্তু রোমার পাল্লায় পড়ে কিছুদিন দাড়ি রাখতে হয়েছিল। তবে ট্রিমারের প্রয়োজন পড়ার আগেই খুচরো অশান্তির ঠেলায় রোমার সাথে ব্রেক-আপ। তারপর একদিনও দেরী না করে দাড়িটা বিসর্জন দিয়ে শান্তি পেয়েছিল অভীক। সেই থেকে ট্রিমারটা তোলাই আছে।
বাক্স থেকে যন্ত্রটা বের করে ভালোভাবে চেক করলো অভীক। কলকব্জা সব ঠিকই আছে, এমনকি ব্যাটারিটাও। এবার কাজে লেগে পড়ার পালা। ও ট্রিমারটাকে অতি সন্তর্পনে মাথার কাছে ধরে কাঙ্ক্ষিত স্থানগুলোতে একটু একটু করে ছোঁয়াতে লাগলো। প্রথমে মনে হল ব্যাপারটা খুব সহজ, কিন্তু তারপর ?
অভীককে দেখে ওর মা প্রথমে আঁতকে উঠল তারপর প্রায় কেঁদেই ফেলল। মা ও ছেলের করুণ অবস্থা দেখে বাবা বিরক্তমুখে নাপিতের ফোন নম্বর ডায়াল করলেন। বাবার অবশ্য আর কিছুদিন পর নাপিতকে ডাকার ইচ্ছা ছিল, ওঁর চুলগুলো তো এখনও সেভাবে বড় হয়নি। ভাগ্যিস লকডাউন হওয়ার আগেই বুদ্ধি করে পাড়ার ‘বিউটি সেলুন’-এর চূড়ামণিদার নম্বর জোগাড় করে রেখেছিলেন; না হলে আর কিছুক্ষনের মধ্যেই বাড়িতে একটা লঙ্কাকান্ড ঘটতো।
চূড়ামণি দাস অভিজ্ঞ নাপিত। অভীকের মাথাটাকে বেশ কয়েকবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে মুখ বেঁকিয়ে বললেন,”একে তো ন্যাড়া করতে হবে।”
শুনে দুঃখে-শোকে চোখে জল এসে গেল অভীকের। কিন্তু যা ক্ষতি হওয়ার তা তো আগেই হয়ে গিয়েছে এখন আর ভেবে কি লাভ ? অগত্যা, চূড়ামণিদার কাছে মাথা পেতে দিল অভীক। বেঁড়ে-ওস্তাদির সব চিহ্ন চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল।
মা সাহস জুগিয়ে বলল,”চিন্তা করিস না বাবা, লকডাউন উঠতে উঠতে তোর মাথায় চুলও উঠে যাবে।”
পরদিন বেশ ভয়ে ভয়েই সোশ্যাল মিডিয়াতে স্ট্যাটাস আপডেট দিল অভীক; হ্যাশট্যাগ নিউ হেয়ারকাট, সাথে কান এঁটো করা হাসি নিয়ে ন্যাড়ামাথার সেলফি।
না যতটা খারাপ ভেবেছিল ততটাও খারাপ কিছু হয়নি। বন্ধুদের অনেকেই অভীকের ফটোতে লাইক, লাভ, ওয়াও দিয়েছে। বেশ কয়েকজন তো আবার একগোছা ফুলের সাথে কমেন্ট করেছে “দিস স্টাইল স্যুটস ইয়োর পার্সোনালিটি”
তার মানে কি বলতে চাইছে ওরা ? অভীককে ন্যাড়া হলেই ভালো মানায় ???
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।