মেঘ সেদিন ল্যাপটপ অন করেই টেবিলের উপর মাথা রেখে নিজের অজান্তে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছে ৷ আজকাল কত বিষণ্ণ রাত এই ভাবে কেটে যায় ,একটা চেনা কন্ঠস্বরের অপেক্ষায় ৷
মেঘ ওরফে মেঘমতী সেন সারাদিনের কর্মব্যস্ততায় নিজের স্কুল সেরে ,ছোট্ট পরীর দায়িত্ব সামলে যখন ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফেরে তখন এক আকাশ তারা আর দোতলার গোল বারান্দা তার না বলা কথার সাক্ষী হয় ৷
মেঘ বড্ড অভিমানী ৷ তাই বজ্র ,অর্থাৎ মেঘের স্বামী মেঘের শরীরের অধিকার পেলেও মনের চোহদ্দি ছুঁতে পারে নি ৷ বজ্র ভীষণ উচ্চাকাঙ্খী , অর্থ আর যশ উর্পাজন জীবনের লক্ষ্য ৷ তাই হয়তো একদিন মেঘমতী আর পরীকে একা করে রেখে নিজের উচ্চাশায় পাড়ি জমায় কানাডায় ৷
মেঘ কখনো বাধা দেয় না ৷ সে চুপচাপ,স্তব্ধ ৷
কালের নিয়মে এই দুই মেরুর দুটি মানুষের মধ্যে দুরত্ব হয় এক পৃথিবী ৷
ইদানিং মেঘ টুকটাক লেখালিখি করে ৷ নিজেকে কর্মব্যস্ত রাখে সারাদিন ৷ মেঘের জীবনে এসময় বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ল আকাশ সেনগুপ্ত ৷ পেশায় একজন মেজর ৷ পাক ভারত সীমান্তের বুলেট উপত্যকার এই মানুষটির সাথে আলাপ ফেসবুকে ৷ তারপর টুকটাক মেসেঞ্জর চ্যাট৷ বছর দুয়েক হল মেঘ আর আকাশ একটুকু জেনেছে তারা একে অপরের পরিপূরক ৷ তাদের কখনো দেখা হয়নি ,তবু মানসিক wave length যেন একই দৈর্ঘ্যের ৷ হাসি কান্না ,ছোট ছোট দুঃখ ভাগ করে সমান ভাগে ৷
মেঘ জানে আকাশের দেশপ্রেমের কাছে অন্য প্রেম কখনো অসমাপ্ত প্রেমের গল্প হতে পারে ৷ তবু রাতভর অপেক্ষায় থাকে… কখন মাসখানেক পার হয়ে মেসেঞ্জারের সবুজ আলো জ্বলবে ,কখন ইথারে ভেসে আসবে ঘন বুনোট স্বর ” আমি ত রয়েছি পাশে “,এইটুকু আশ্বাস সম্বল করে প্রতিরাতে কবিতার পাতা ভরিয়ে তোলে মেঘ ৷ দুচোখে স্বপ্ন দেখার বিশ্বাস রেখে রাত পার করে ৷ প্রেমের সুবাস জড়িয়ে থাকে রাতের রজনীগন্ধার মত…
অপেক্ষা করে হয়তো ফিরবে সে কখনো! কোনদিন…