গদ্যে প্রকল্প ভট্টাচার্য
সমরবাবুর সমস্যা
সমরবাবু লোক ভালো। মিশুকে স্বভাব, মজাদার কথাবার্তা বলেন, আড্ডার সময় বন্ধুদের চা-মিষ্টি খাওয়াতেও কার্পণ্য করেন না। হঠাৎ সেদিন শুনলাম তাঁর দশ বছরের পুরোনো চাকরিটি চলে গেছে। প্রায় রাতারাতিই।
অচেনা কেউ হলে ভাবতাম নির্ঘাত কোনো ঘাপলা করেছেন। কিন্তু লোকটা সমরবাবু বলেই কৌতুহলটা বেড়ে গেছিল আমার। এতবছরের চাকরি থেকে তাঁকে এইভাবে ছাড়িয়ে দেওয়ার কী কারণ থাকতে পারে, ভাবতে ভাবতে আমার পেট ফুলে গেল, ঘুম উড়ে গেল, শেষে একদিন থাকতে না পেরে সোজা চড়াও হলাম সমরবাবুর বাড়ি।
চা পর্ব মিটতেই ভণিতা না করে জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা দাদা, আপনার চাকরিটা…”
সমরবাবু একটু চুপ করে থাকলেন, তারপর বললেন, “খুলেই বলি, আমার একটা সমস্যা আছে। বেশ ভালো রকম সমস্যা। তা নিয়েই এতদিন চাকরিটা বজায় যে ছিল, সেটাই আশ্চর্যের।”
আমি তো ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছি না। কী এমন সমস্যা থাকতে পারে দাদার!
-“ইয়ে, মানে, শারীরিক কিছু অসুবিধা ? তাহলে চিকিৎসা…”
-“আরে না না সে সব নয়। সমস্যাটা মনে। “
সেরেছে। মানসিক রুগী নাকি! ফিট-টিট হয়ে গেলে তাও ভালো, কিন্তু যদি কামড়ে দেন!
আমাকে জড়োসড়ো হয়ে বসতে দেখে সমরবাবু বুঝতে পারলেন আমার চিন্তাটা। হা-হা হেসে বললেন, “আরে ভয় পাচ্ছেন কেন, মাথা-টাথা খারাপ হয়নি আমার। দাঁড়ান, তাহলে আপনাকে গোড়া থেকেই বলি।”
“আমি চাকরি করতাম একটা বিজ্ঞাপন সংস্থায়। কাজ ছিল ক্যাচলাইন বানানো। ওই যে তরতাজা কোম্পানির মাখনের অ্যাডটা খুব জনপ্রিয় হয়েছিল, ‘এমন টেস্টি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি!’ সেটা আমারই বানানো ছিল। তারপর প্রিয়া জলের বোতলের ক্যাচ লাইন ‘কেবল প্রিয়ার পানি গ্রহণ’ সুপারহিট হলো। অসুবিধা শুরু হলো তারপর থেকে।”
-“অসুবিধা? কিসের অসুবিধা?” থাকতে না পেরে প্রশ্ন করলাম আমি।
“সেটাই তো বলছি! তারপর থেকে আমার বস আর সহকর্মীরা আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করলো। আমি নাকি সব কথাই পেঁচিয়ে বলতাম। আসলে যত কাজের চাপ বাড়তে লাগলো, আমাকে সারাক্ষণ নতুন নতুন ক্যাচলাইন চিন্তা করতে হতো।
দরজায় যেখানে ‘এক্সিট’ লেখা ছিল, আমি সেটা বদলে করে দিলাম ‘ওয়ে টু গো!’ যাতে আরো পসিটিভ লাগে। তারপর পার্কিং থেকে গাড়ি বেরোবার রাস্তায় লিখলাম ‘কার্গো’…