• Uncategorized
  • 0

গদ্যে আলোক মণ্ডল

কবিতা মগ্ন প্রাণ।অবসরপ্রাপ্ত বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক । দশাধিক কাব্যগ্রন্থের স্রষ্টা।"কবিকর্ণিকা" -কবিতাপত্রের সম্পাদক। কবিতা

ভাষা প্রশ্ন

হর বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আর ১৯ মে এলেই বাংলা ভাষা প্রেম উথলে ওঠে!
যেন ঐ দু’দিন একটু ভাষা নিয়ে কথা না বললেই নয়,ইজ্জত থাকেনা বুদ্ধিমত্তার! তারপর যেই কে সেই, বাংলা যে তিমিরে সেই তিমিরেই। এই প্রেক্ষিতে দু’একটি ভাবনা কিংবা বলা ভালো আশঙ্কার কথা তুলে ধরি আত্মপ্রশ্নে দীর্ণ হয়ে।
দেখুন,আমরা আকছার দেখি বাংলা বানান দূরদর্শনের ব্রেকিং নিউজ লিখনে, সাইনবোর্ডে, লিফলেন্টে, মায় কিছু লিটল ম্যাগাজিনেও ভুল লেখা থাকে,কেউ ধরিয়ে দিই না বা
সংশোধনও করেও দিই না ফলে বাংলা ভাষার এই বিকৃতিটাই সহনীয় হয়ে ওঠে আর নতুন প্রজন্মের কাছে এটাই সঠিক বলে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়।এটা কি ভাষা প্রেম?
আবার দেখুন,রেল স্টেশনে কেমন অবলীলায় লেখা থাকে, কন্টাই, ঝাঁন্টিপাহাড়ি, চান্ডিপুর, চিনসুরিয়া, হারিপুর, আদরা ইত্যাদি। আমরা কি স্থানীয় রেল কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে সংশোধনের দাবী করতে পারি না?আমরা কি হাসপাতালে গিয়ে বলতে পারিনা অপারেশনের বাংলা “অস্তপাচার” নয়, বলতে পারিনা রেডিয়েশন কে “আলোদেওয়া” না বলে রেডিয়েশন কথাটাই বাংলা হরফে লেখা হোক!
নিজেদের স্মার্ট দেখানোর জন্য আমরা এমন কিছু শব্দ লিখি বা বলি যে গুলির কোন অর্থ নেই, নেই কোন মাধুর্য তবু ব্যবহার করি। যেমন,”সেই সকাল থেকে ল্যাদ খেয়ে পড়ে আছি” কিংবা টিশার্টে জ্বলজ্বল করে লেখা ,”হ্যাঁ, আমি ল্যাদ খেয়েছি,তো?” অথবা, হিন্দির অনুকরণে বলি, “এভাবে হবে না,কেন কি,,,” অথবা, “অর্ধেক খাওয়ালে,অর্ধেক পুষ্টি না!” সঞ্চালিকা গায়িকার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলেন তারপর গান গাইতে বললেন,”চল ” এই শব্দটি প্রয়োগ করে। কোথায় চলবে বুঝি না! কিংবা সহকর্মীকে সিগারেট অফার করে বললেন,”আসুন”- এভাবে ভুল প্রয়োগ করে বাংলাভাষা কে কতদিন আর বকচ্ছপ করব?
আমাদের ভাষা প্রেম দেখুন এতো গাঢ় যে বাংলার শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের কাছে বাংলায় ছুটির আবেদন পত্রও লিখতে পারেন না, পাছে ভুল বানান লিখে ফেলেন তাই বোর্ডওয়ার্ক পর্যন্ত করে না।মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে যে ভাবে বাংলা পড়ানো হয়,সিলেবাস যে ভাবে তৈরী করা হয় তাতে অদূর ভবিষ্যতে বাংলা শুধু মুখের ভাষাতেই পরিণত হবে, সাহিত্য বা ভাবনা প্রকাশের মাধ্যম ভাষা হিসাবে থাকবে না।
কেননা নতুন প্রজন্মের ইংলিশ মিডিয়ামে পাঠরত বাঙালীরা বাংলাভাষাটা পর্যন্ত ভুলতে বসেছে, ছোট বাচ্চাটি লিখতে গিয়ে বারবার হোঁচট খেয়ে অবিভাববকের সাহায্য চাইলে তারা তখন তাদের অপারগতার কথা কবুল করে বলেন,”লিব ইট্, বি সিরিয়াস ইন ইংলিশ অ্যান্ড ম্যাথ” তখন আমরা কি করে বলব,বাংলা আমার মাতৃভাষা,বাংলা আমার প্রাণ?
সম্প্রতি আন্দামান গিয়েছিলাম সেখানে দেখেছি বাংলাদেশ থেকে উৎখাত হয়ে আসা বাঙালীরাই ( জন বসতির ৯৯.৫ % বাঙালী) হ্যাভলক আর নেইল দ্বীপের একমাত্র বাসিন্দা অথচ সেখানের পাঠশালায় বাংলা পড়ানো হয় না, ওখানে প্রথমে আসা বাবা-মায়েরা ছাড়া পরবর্তী প্রজন্মের বাংলাভাষী মানুষজন বাংলায় কথা বলেন কিন্তু বাংলা পড়তে বা লিখতেও জানেন না।আচ্ছা দণ্ডকারণ্য যে অঞ্চলটি গড়ে উঠেছিল ওড়িশার কোরপুট ও কালাহাণ্ডি এবং মধ্যপ্রদেশের বস্তার জেলা নিয়ে শুধুমাত্র বাংলাদেশী উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য সেখানকার বাঙালীরা কি এখনও বাংলায় কথা বলেন না হিন্দিভাষী হয়ে গেছেন? -এসব ব্যাপারে ভাষাপ্রেমীরা কতটা ওয়াকিবহাল?
আসলে ভাষাপ্রেম একটি চেতনা সৃজন ও সংশোধনের মধ্য দিয়ে যা প্রতিনিয়ত এবং ধারাবাহিক ক্রিয়াশীল শুধু দু’দিনের গান-বাজনা আর বক্তৃতায় এ দায় সারলে নিয়তই আমাদের আত্মঘাতী হতে হবে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।