সল্টলেকের সিজে ব্লকের মেসবাড়ি বা পেয়িং গেস্টে আমাদের দিনগুলো কাটতো ওরাং ওটাং এর মতোন !একদিন লাল জলের প্রকোপ পেটে পড়ে সব্বার মাথা ঘুরে গেছে তিনতলার ঘর থেকে ছয় জনা ঠিক করলাম আজ রাত্রিবেলায় ছাদে শোবো ব্যাস মাদুর আর ঘেমো নোংরা বালিশ নিয়ে খালি গায়ে হাফ প্যান্ট পড়ে সব্বাই চলে এলাম ছাদে |সেদিন খোলা আকাশের নিচে শুয়ে তারা গোনা আর ভুলভাল বকার সঙ্গে ছিলো আমাদের ইঞ্জিনিয়ার ভাই মনের মধ্যে যার ইচ্ছে আইএএস হওয়ার তার পেছনে লাগা !হঠাৎ সব্বার বাই উঠলো নাকি রাত্রি দুটোয় গাড়ি ডাকো বলবন্ত সিং এর ধাবাতে গিয়ে লস্যি খাবো ! যেই ভাবা সেই কাজ সব্বাই মিলে বেরিয়ে পড়লাম প্রথমে ধাবা,তারপর গঙ্গার পাড়,শোভাবাজারের রাস্তা মানে ওই আর কি মেন রাস্তা দিয়ে হেঁটে হাতিবাগান হয়ে বাড়ি !তার মধ্যে পুলিশ এসে জিজ্ঞাসা করলো “এতো রাতে এখানে,পাশেই লাল রঙ্গের দুনিয়া,বাড়ি কোথায়?” ঝটপট উত্তর দিলাম কাছেই ওই জয়পুরিয়া কলেজের উল্টো দিকে,ব্যাস কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা হাঁটা…..ভোর যখন হলো আমরা ছয় মূর্তি বসে আছি হাফ প্যান্ট পড়ে রবীন্দ্র তীর্থের কাছে নিউ টাউনে…ওদিকে পিজি থেকে আন্টির ফোন কল “আয় তোদের হচ্ছে…সবকটাকে ঠেঙিয়ে বাড়ি পাঠাবো না হয় কেষ্টপুর…”
কচুরির সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে মেসের কর্তৃপক্ষের সাথে আপৎকালীন বৈঠক বসেছিলো আর সৌরভ দার সেই কি ভীষণ রেগে যাওয়া ওপরে এসে দেখা বাকিদের ডাকা হলেও কিছুজন তখনও কাউন্টার স্ট্রাইক খেলছে আর চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছে বার বার “ফায়ার ইন দ্য হোল” !এদের দলনেতা ছিলো সুমিত দা যার লাল জলের নেশা না থাকলেও খাবার বলতে চিকেন ছিলো প্রাণ সুতরাং নিচে আন্টি ভালোমন্দ রান্না করলে ওপরে কার পাতে লেগ পিস পড়বে না মেটে সেই নিয়ে হতো বিস্তর আলোচনা শেষে আলো কমে গিয়ে সবটাই চোনাতে পর্যবসিত হতো !আমাদের মেসের ব্যালকনি খুললেই উল্টোদিকের বাড়িতে এক বৌদি থাকতেন আর আমরা মাঝে মাঝে কারণে অকারণে ওখানে গিয়ে দাড়াতাম বিশেষ করে দুপুর বেলা যখন স্নানের পর বৌদি চুল শুকোতে শুকোতে আনন্দলোক পড়তো!
তখন হাত খরচার জন্য অনেক কম টাকা পেতাম তাই অনেক সময় হেঁটেই চলে আসতাম কলেজ থেকে বাড়ি !মানে ধরুন বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে করুণাময়ী!একদিন বাসে কলেজে যে মেয়েটির সাথে চোখাচোখি হতো তাকেই দেখলাম বসে আছে !যেচে কথা বললাম ,ও হাসলো,আমরা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলাম !ভিড় বাস ,গতিও বেশ ,মৌড়ীগ্রাম সল্টলেক,হ্যাঁচকা টান মাড়লো বাস,মেয়েটি আমার ওপর হেলে পড়লো আর শক্ত করে জামাটা খামচে ধরলো ব্যাস বোতাম আর খানিকটা অংশ ছিঁড়ে গেলো,ওই অবস্থায় বাড়ি এসে জামাটা রেখে দিয়েছিলাম আর পড়িনি কখনো,চলন্ত বাসের দুরন্ত টানে ছিঁড়ে যাওয়া জামা বলে কথা তার একটা দাম তো দিতে হয়!
মেসে যেদিন যেদিন পাঁঠার মাংস হতো সেদিন আমাদের সব্বার আদেখলামোপনা দেখলে স্বয়ং শারমেয়ও লজ্জা পাবে !আলবাৎ বলছি সেই দিনগুলোতে রাজুর সাথে গোপন আঁতাত করে কর্তৃপক্ষের চোখে ধুলো দিয়ে যদি আর কয়েক পিস বেশি আদায় করা যায় বা ম্যানেজ করা যার তাতে আর ক্ষতি কি!আমি মাংসাশী ভীষণভাবে তা সব্বাই জানতো তাই কিছু না হোক ঝোল আলু আর চর্বি একটু বেশী বরাদ্ধ থাকতো আমার জন্য যার বিনিময়ে বিকেলের ভান্ডারীর দোকানের চা আমি সক্কলকে খাওয়াতাম! আঙ্কেলকে আমরা ভালোবেসে বাবুরাও বলতাম ,সেই “রাজনীতি” সিনেমার এক চরিত্র ! আমি যেদিন প্রথম দিন এলাম বললেন ওপরে কিন্তু সব্বাই দারুণ মানে যুবক বয়সের বেলাল্লাপোনা নেই আমি তো দারুণ খুশি তা আমার গ্রাম্য সরলতা নিয়ে ওপরে উঠে সেই রাত্রির আহা হুম দারুণ অনুভূতি হয়েছিলো !সারাঘর ধোঁয়া ধোঁয়া আর ধোঁয়া সঙ্গে তারস্বরে বিদেশী মিউজিক আমিও ব্যোম ভোলে বলে ঘুমিয়ে পড়লাম !
শনিবার দুপুর বেলা কি মনে হলো আমি আর সৌম্যদীপ দা ঠিক করলাম আজ কলেজ স্ট্রীটে স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেলে খাবো ব্যাশ যেই ভাবা সেই কাজ !পকেটে নামমাত্র কিছু পয়সা নিয়ে আমরা দুপুরে স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম !ওখানে খেয়ে তারপর কি মনে হলো চলো একটু বেহালার দিকটা ঘুরে আসি সেই ঘুরে আসা কোথায় গিয়ে ঠেকেছিলো জানেন?সে এক কান্ড!রাত্রিবাস ডায়মন্ডহারবারে তারপরদিন আবার স্কুটি নিয়ে সোজা বকখালি দুপুরে ভাত,মাছভাজা,টকডাল আর হলুদ জল ব্যাস!ফিরে এসে যাস্ট ভাবিছিলাম এরেই কয় বাই ওঠা!শনিবার দুপুরে খেতে গিয়ে রোববার শুয়ে আছি কোথায় নাহ বকখালির বালির ওপর আর সামনে , কে আবার বঙ্গপোসাগর!
আমাদের কাছে সরকারী বাসে চেপে করুণাময়ী থেকে বাঁকুড়া,দুর্গাপুর বা ধরুন আসানসোল যেতে হলে পথিমধ্যে পড়তো শক্তিগড় তা পেটের জোড় থাকুক ছাই না থাকুক সেই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে কচুরী ,তরকারি আর পরে চা টা খেতেই হবে!সারাবচ্ছর এই চেনা রাস্তাগুলো দিয়ে যখন কোলকাতা থেকে বাড়ি ফিরতাম তখন এই রাস্তাগুলো প্রতিবার নিজের কাছে নতুন লাগতো!নিজেকে অপু ভাবার বিলাসিতা কোনদিনও দেখাই নি!বরঞ্চ সেইদিনটার কথা খুব মনে পড়ে বাড়িতে ঢপ দিয়ে কোলকাতা যাবো বলে বর্ধমানে নেমে পড়ি আর কাঞ্চণকন্যা ধরে সেই সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ বোলপুর আর রাত্রিবাস সায়নীদের ওখানে শ্যামবাটি!কখনও কখনও কিচ্ছু মিথ্যে বলার মধ্যেও একটা ভালোমানুষি আর ভালোলাগা লুকিয়ে থাকে দিনের শেষে ছাদে শুয়ে ওই তারা গোনার মতোই একটা ছেলেমানুষি সারল্য আর কি!