• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৪)

চার

আমি নিজে এত হতবাক কোনদিন হইনি। চোখ বন্ধ করে সমস্ত ঘটনা গুলো রোমস্থন করেছিলাম। কিন্তু পুরোটা তো আমিও জানি না। ট্যাক্সিতে জ্ঞান হারানোর পর থেকে ধাপায় আবর্জনা ঢিপির ওপর জ্ঞান ফেরা পর্যন্ত এর মাঝে দুরাত ও একদিন কেটেছে। সেই সময়ের মধ্যে কি হয়েছে সেই বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ অন্ধকারে। খাবারের খলি পাত্র গুলি মিকি এসে নিয়ে গেল। শ্রেয়ানের মিকি অর্থাৎ আমাদের বাল্মীকির বয়স প্রায় পঞ্চাশ। কিন্তু খুব তৎপর। সব দিকে নজর আছে ওর। আমাদের এই অগোছালো সংসারটাকে ওই আগলে রেখেছে।
শ্রেয়ান ঘর থেকে লাফিয়ে চলে গেছিল। ছেলেটা বড্ড খামখেয়ালি। আবার সে হুস করে ঢুকল। সঙ্গে সিগারেটের কড়া গন্ধ। বাবু উত্তেজনায় ফুকে এলেন। আমি ঘরে সিগারেট খাওয়া পছন্দ করি না।, তাই নিজের ঘর থেকে খেয়ে এল। ঘরে এসে ধপাস করে আমার খাটে বসে পড়ে বলল, “অর্কদা, কিছু বুঝলে’? আমি বললাম “নারে, কিছুই মাথায় আসছে না। আচ্ছা ডাকাতির ঘটনা একটু সবিস্তারে বলত। আমার চশমাটাও হারিয়ে গেছে। তাই পেপার পড়তে পারছি না। আমার মোবাইল, মানিব্যাগ, চশমা সব খুলে ফেলে দিয়েছে হতচ্ছাড়াগুলো”। শ্রেয়ান বলল, “গতকাল বেলা ১২টা নাগাদ মানে তুমি যে রাতে কিডন্যাপ হলে তার পরের দিন দুপুরে একটা ট্যাক্সি এসে হালতুর হিন্দুস্থান ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়ায়। তার থেকে নেমে আসে তিঞ্জন মাংকি ক্যাপ পরা লোক। এমনই বিব্রন দিয়েছে ব্যাঙ্কের সিকিউরিটি গার্ড। আর্মড গার্ড হওয়ার সত্ত্বেও সিকিউরিটি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওর মুখ থেকে কিছু স্প্রে করা হয়। আর সে অজ্ঞান হয়ে যায়। তারপরে ম্যানেজারের বিব্রন অনুযায়ী ব্যাঙ্কের ভিতর তিনটি লোক হাতে অস্ত্র নিয়ে ঢোকে। একজনের হাতে একটা রিভলবার আর বাকি দুজনের হাতে অত্যাধুনিক বন্দুক। স্বচক্ষে দেখেছেন তাদের মতে সম্ভবতঃ একে ৪৭ ছিল দুজনের হাতে রিভলবারধারী তার বন্দুক উচিয়ে সিলিং-এর দিকে দুটি গুলি ছোঁড়ে। বিদ্যুৎবেগে সব কিছু ঘটতে থাকায় সবাই হকচকিত ও হতবুদ্ধি হয়ে যায়। ম্যানেজার নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। রিভলবারধারী তাকে গান পয়েন্টে নেয় এবং সকলকে বলে মাটিতে শুয়ে পড়তে। সেইসময় ব্যাঙ্কের দশ থেকে বারোজন কাস্টমার ও ব্যাঙ্কের আটজন কর্মচারী ছিল। ম্যানেজারের আবেদনে সকলে মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে। একে ৪৭ধারী লোক দুটি এম্নভাবে পজিশন নিয়ে দাঁড়ায় যাতে ব্যাঙ্কের সমস্ত ফ্লোরটা কভার হয়ে যায়। রিভলভারধারী ম্যানেজারকে একটি নির্দিষ্ট লকার খুলতে বলে। নিরুপায় ম্যানেজার তার চাবি ও তার ক্যাশিয়ারের চাবি দিয়ে লকারটি খুলে দেয়। তারপর ম্যনেজার আর ক্যাশিয়ারকে লকার রুমেই স্প্রে ছিটিয়ে অজ্ঞান করে দেয় রিভলভারধারী। তার পরের খবর তারা আর বলতে পারেনি। তারপর ওই তিঞ্জন আবার ট্যাক্সি চড়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে যে ওই নির্দিষ্ট লকারটি একেবারে খালি। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল গোটা ব্যাংক থেকে আর কিছু জিনিস বা টাকা পয়সা চুরি যায়নি। পুলিশ বা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ লকার নাম্বারটি এবং তার মালিকের নাম গোপন রেখেছে তদন্তের স্বার্থে।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।