হঠাৎ যেন আমার মাথায় বৈদ্যুতিক তরঙ্গ খেলে গেল। উত্তেজিত হয়ে শ্রেয়ানকে বললাম, “শ্রেয়ান আমার বুক সেলফের একেবারে ওপরের তাকের বাঁদিকে একটা বই খোঁজ তো। স্টিফেন হকিংস -এর ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম “। শ্রেয়ান হঠাৎ করে এমন আদেশে কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েই উঠে বই খুঁজতে গেল। শ্রেয়ান বইটা পেয়েই আমার কাছে নিয়ে এল। বইটা অনেক পুরোনো, পাতা হলদে হয়ে গেছে। আমেরিকান এডিশন। তাড়াতাড়ি খুলে প্রথমেই ফ্লাই লিফ পেজটা দেখেই “ইয়েস” বলে লাফিয়ে উঠলাম। শ্রেয়ান জিজ্ঞাসা করল, “কি হল?” আমি খুলে সাদা পেজে হাতে লেখা কথা গুলো ওকে দেখলাম। শ্রেয়ান উৎসাহ নিয়ে জোরে জোরে পড়তে লাগল, “কংগ্রাচুলেশন রুডি। বেস্ট উইশেস অন কোয়ালিফাইয়িং মেনসা। ওয়েলকাম টু মেনসা, মাই সান। কথা গুলোর শেষে একটা সিগনেচার আছে অর্কদা। ডঃ কান চোঙদার “।
কি যেন ভেবে শ্রেয়ান আবার উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল, “ইয়েস আমি পড়লাম তো ওনার ব্যাপারে। ওনাকে সবাই ডঃ কান বলেই ডাকত
বিদেশে। বাট হু ইজ দিস রুডি”? আমি শ্রেয়ানকে আমার পূর্ব জীবনের কথা সবই বলেছি আগে। তাই বিনা দ্বিধায় বললাম, আমিই রে। বাবা যখন আমায় ব্যাপটাইসড করালেন আই ওয়াজ ক্রিশ্চিয়ানেড এজ রুডলফ বা সংক্ষেপে রুডি। আমার তখন নামকরণ হয়েছিল রুডলফ এ. চৌধুরী।” শ্রেয়ান আরও উত্তেজিত হয়ে বলল, “আই ডোন্ট বিলিভ দিজ। অর্কদা, তুমি মেনসার মেম্বার?” এবার আমি বেশ অস্বস্তিতেই পড়লাম। কারণ আমি এইসব কথা কাউকে বলিনা। তাই কথা ঘোরানোর জন্য বললাম, “ধুর! বোকা, ছার তো ওসব কথা “। শ্রেয়ান কিন্তু নাছোড়বান্দা “অর্কদা স্লিপ কেটো না। বল ইয়েস ওর নো “। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “তুই মেনসার ব্যাপারে কি জানিস? “শ্রেয়ান অবিশ্বাসের সঙ্গে আমায় মাপতে মাপতে বলল, “ওটা একটা সোসাইটি। পৃথিবীর সর্বোচ্চ বুদ্ধিমানদের সোসাইটি। একটা পার্টিকুলার হাই লিমিটের ওপর যাদের আই. কিউ. হয় তারাই শুধু জয়েন করতে পারে”। আমি বললাম, “হ্যাঁ রে, ওই বিদেশে স্কুলে পড়ার সময় কোয়ালিফাইং পরীক্ষাটায় বসেছিলাম। পাশ করে গিয়েছিলাম আর কি দু তিনবার সোসাইটির গেট টুগেদার মিটিং -এও গেছিলাম। এর কিছুদিন পড়েই বাবার মৃত্যু হয় আর আমি দেশে ফিরে আসি। কিন্তু তারপর আর যোগাযোগ রাখিনি। সে সব এখন ইতিহাস। আমি মনে করতেও চাইনা এখন”। শ্রেয়ানের বিস্ময়ের ঘোর যেন কাটতেই চায়না। আমার দিকে কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল যেন আমায় নতুন করে চিনল। তারপর হঠাৎ এক কান্ড করে বসল। একেবারে সটান আমার পায়ের কাছে বসে পড়ে পায়ে মাথা ঠেকিয়ে বলল, “পায়ের ধুলো দাও গুরুদেব। আমি গোমুখ্যু। কার চরণে ঠাই পেয়েছি এতদিন জানতেই পারিনি।” আমি লজ্জা পেয়ে বললাম, “শ্রেয়ান তোর ফাজলামি থামা। যে কারণে বইটা নামালাম সেটা বলি শোন্।”শ্রেয়ান সিরিয়াস হয়ে খাটে উঠে এল। আমি বললাম, “আমার এতক্ষন ধরে শুধুই মনে হচ্ছিল যে এই নামটা আমার চেনা। আমি কোথাও নামটা দেখেছি। এই বইটা আমাকে বাবার এক বন্ধু গিফট করেছিলেন। আমি তাকে চিনতাম না। বাবার হাত দিয়েই আমায় পাঠিয়েছিলেন আমার জন্য”। শ্রেয়ান বলল, “তার মানে এটা কনফার্মড যে চোঙা, ও সরি ! চোঙদার কাকা তোমার বাবার বন্ধু ছিলেন। তাই যদি হয় তাহলে তো হিসেব পরিষ্কার”। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “কিসের হিসেব”? শ্রেয়ান বিজ্ঞের মতো বলতে শুরু করল, “তোমায় কিডন্যাপ, ব্যাংক ডাকাতি, চোঙদার কাকার মার্ডার আর এই ধাঁধার সি. ডি., সবই একই সূত্রে বাঁধা যা কিনা তোমার পূর্ব জীবনের সঙ্গে যুক্ত। মানে সাম হাউ রিলেটেড টু ইউ ভায়া জার্মানি, তোমার বাবা এবং তোমার শৈশব”। আমি সিডি -র ফোল্ডারগুলো আবার খুলে দেখলাম। না, জার্মানি বা হামবার্গ নামের কোনো ফোল্ডার নেই।