“যেমন দাঁড়িয়েছিলাম আমি তোমায় জড়িয়ে নিয়ে গলায়
চিরকাল রইবো আমি দাঁড়িয়ে
কিন্তু তোমার মধ্যে তো সেগুলি আর পেলাম না
চিঠিগুলি ফেলেছ কি হারিয়ে?
এটা বা ওটা নাইবা ধরলাম কিন্তু সেই ইংলিশ চিঠি গুলি?
সেগুলি তোমার মাঝে আজও নেই।
কিন্তু জীবনের শেষ মিনিটে মেহনতের গান যেন গাইতে পারি আট সেকেন্ড হারিয়েই।”
আমি বার বার করে পড়লাম, এটা কি কবিতা? কিন্তু এটা যাই হয়ে থাক, বার বার পরেও কোনো কিছু এখনও আমার বোধগম্য হয়নি। ভদ্রমহিলা চলে গেছেন বহুক্ষণ আগে। ওনাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এসে, সোফায় বসে লেখাটা পড়েই চলেছি যে কতবার তার হিসেব নেই। বিভিন্ন ভঙ্গিতে পড়েছি, পড়তে পড়তে ভেবেছি কিন্তু তবুও লাভ হয়নি। এখনও যেন ভাবনার সাগরে ডুবে আছি এমন সময় ঘোর ভাঙলো শ্রেয়ান এর কর্কশ গলায় নোংরা কথায়।
ঘরের কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলছে, “কোনো মেয়েছেলে এসেছিল নাকি? একাই মস্তি নিলে, ছোটো ভাইটাকে একটু ডাকতে পারলে না?” গা গুলিয়ে উঠল বাসি মুখের পচা মদের গন্ধে। বিরক্তি ভরে আমি উঠে ঘরে চলে এলাম কোনো উত্তর না দিয়ে। সি. ডি -টা দেখতে হবে। ল্যাপটপটা আলমারির উপর থেকে নামালাম। শ্রেয়ান পেছন পেছন এসে দাঁড়িয়েছিল। ও বুঝেছে আমি কিছু একটা ভেবে চলেছি। হাতের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলল, “ওটা কি গো?” আমি শুধু বললাম, “যা দাঁত মেজে আয়। আর দু কাপ কফি বানাতে বল বাল্মীকিকে, খেতে খেতে বলবো।” শ্রেয়ান চলে গেল।
আধ ঘন্টার জন্য নিশ্চিন্ত। জানি আধঘন্টার মধ্যে ফ্রেশ হয়ে আসতে পারবে না। ল্যাপটপটা অন করে সি. ডি.-টা ঢুকিয়ে দিলাম। সি. ডি
ওপেন করে দেখা গেল অনেক গুলি পি.ডি.এফ. ফাইল। সবগুলো ডকুমেন্টের নাম কোনো না কোনো জায়গার নাম দিয়ে নামকরণ করা হয়েছে। যেমন অস্ট্রেলিয়া, ক্যালকাটা, বার্বিংহাম, ডাবলিন ইত্যাদি। নাম গুলোর মধ্যে যেমন দেশের নাম রয়েছে আবার বিখ্যাত শহরের নাম ও রয়েছে। একটা ফাইল খুলে দেখলাম ভেতরে অদ্ভুত এক প্যাটার্ন-এর ডিসাইন। হাতে পেন বা পেনসিল দিয়ে লিখে স্ক্যান করা হয়েছে। এই ধরণের প্যাটার্ন আমি আগে কোনোদিন দেখিনি। ক্রিপ্টোলজির সিলেবাসের বাইরে। তাই আমার অচেনা। আরেকটা ফাইল খুললাম। ওই একই ধরণের প্যাটার্ন। তার পর একে একে সবকটা ফাইল খুলেই দেখলাম একই ধরণের প্যাটার্ন দিয়ে নানারকম ডিসাইন বানানো। বিভিন্ন ধরণের স্কোয়্যার ও রেক্ট্যাংল, তার ভেতর ডিসাইনগুলি করা হয়েছে। বুঝলাম এগুলো নিশ্চই কোনো কিছুর সংকেত। হয়তো এই ডিসাইনগুলি কোনো অজানা হরফ এদের মাধ্যমে মাধ্যমে সংকেতে বিশেষ কোনো মেসেজ কোড করা হয়েছে। শ্রেয়ান ফিরে এল, সঙ্গে বাল্মীকি আর দু কাপ কফি। শ্রেয়ান বলল, “এবার বল বস কে এসেছিলো? ওই সি. ডি.-টা যেটা তখন তোমার হাতে দেখলাম সেটা কে দিলো? কি আছে ওটাতে?” আমি শ্রেয়ানকে খোলা পি ডি এফ ডকুমেন্টগুলো দেখলাম। তার পর সকাল থেকে ঘটনাগুলো সবিস্তারে বললাম। ভদ্রমহিলার পরিচয় দিলাম। ব্যাংকের ম্যানেজারের সঙ্গে আমার যা যা কথা হয়েছে, সিসি টিভির ফুটেজ, আর্জমার রিপোর্ট, সব কথাই ওকে একে একে বলে গেলাম।
এইসব কথা ওকে আগে জানানোর সুযোগ হয়নি। সব কিছু শ্রেয়ান মন দিয়ে শুনলো। তারপর সি. ডি. কভার এর কবিতাটা কয়েকবার পড়লো। ল্যাপটপের স্ক্রিনের কাছে গিয়ে ভালো করে ডিসাইনগুলো দেখলো। তারপর হতাশ হয়ে খাটে এসে ধপাস করে বসে পড়লো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “কিছু বুঝলি?”শ্রেয়ান মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে কফিতে একটা লম্বা চুমুক দিয়ে বলল, “জলের মতো পরিষ্কার। লোকটার নাম কি যেন একটা বললে, হ্যাঁ চোঙদার। ও ব্যাটা চোঙ্গায় গাঁজা ফুঁকে নেশার ঘোরে কাওতালি করে এসব লিখেছে!” ঘর ঝাঁট দিতে দিতে বাল্মীকি খিক খিক করে হেসে উঠল।