সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ২০)
কুড়ি
না, আমি ডঃ চোঙদার নামে কাউকে চিনি না। তাই ভদ্র মহিলার ভুল ভাঙানোর জন্য স্পষ্টই বললাম, “ম্যাডাম আপনার হাজব্যান্ডকে আমি চিনতাম না। উনি কি কখনো বলেছিলেন আপনাকে যে আমায় উনি চিনতেন?” ভদ্রমহিলা অবাক হয়ে বললেন, “আপনি ওনাকে চিনতেন না? তাহলে আপনার সঙ্গে হঠাৎ যোগাযোগ করতে বললেন কেন?” আমার মাথায়
কিছুই ঢুকছে না আমার হাবভাব দেখে উনি সেটা বুঝে বললেন, “উনি মারা যাওয়ার আগে আমাকে একটা এস.এম. এস পাঠান। বোধ হয় মৃত্যু আসন্ন বুঝেই লাস্ট এস.এম.এস-টা পাঠান। ওই মেসেজে বলা ছিল আপনার সঙ্গে দেখা করে আপনাকে একটা জিনিস দিতে।” আমি একটু অধৈর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “মেসেজে ঠিক কি লেখা ছিল বলুনতো? আমাকে কি দিতে বলেছিলেন খুলে বলুন প্লিজ।”
ভদ্রমহিলা খুবই শোকাহত, আকস্মিক শক থেকে এখনও বের হতে পারেননি। আমার অধৈর্য ভাব প্রকাশ করা উচিত হয়নি। তারাতারি স্বাভাবিক ভাবটা ফিরিয়ে আনার জন্য বললাম, “ম্যাডাম চা টা খেয়ে নিন প্লিজ, ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে”। কিন্তু উনি আমার কথায় কর্ণপাত না করে বলতে লাগলেন, “ওনার এস. এম. এসে লেখা ছিল ‘মাই মেডিসিন বক্স, সিডি, অর্ক চৌধুরী, 5/1 ষ্টুডিও লেন, কোল -78”
আমি মাথা মুন্ডু কিছু না বুঝে বলে ফেললাম “মানে?” ভদ্রমহিলা সে কথার কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের পার্স থেকে একটা সি. ডি.-র বাক্স বের করে আমার হাতে দিলেন। আমি হাতে নিয়ে দেখলাম সেটা একটা সাধারণ
সিঙ্গেল সি. ডি -র বাক্স। বাক্স খুলে একটা সি. ডি. দেখলাম। কিন্তু তার ওপর কিছু লেখা নেই। উল্টে দেখলাম সি. ডি.-টা বার্ন করা। মানে কিছু রাইট করা হয়েছে। ল্যাপটপে ঢোকালেই বোঝা যাবে। বাক্সর ভেতর কভার পেপারটার ভেতরের দিকে যেখানে গান বা ফাইলগুলোর লিস্ট লিখে রাখা যায়, সেখানে কিছু লেখা আছে দেখলাম। ভালো করে পড়ে দেখলাম সেটা একটা বাংলা কবিতা। কিন্তু অর্থ কিছু বুঝতে পারলাম না। ভদ্রমহিলাকে জিজ্ঞাসা করলাম, “এতে কি আছে?” ভদ্রমহিলা বললেন, “ওনার একটা মেডিসিন বাক্স ছিল। তার মধ্যে ওষুধপত্র রাখতেন আর সেটা আমাদের বেডের মাথার দিকের ক্যাবিনেটের মধ্যে থাকতো। উনি ছাড়া আমিই শুধু ওই বক্সের কথা জানতাম। তাই ওনার মেসেজ পেয়েই বুঝতে পারলাম যে উনি কিসের কথা বলছেন। উনি যখন মেসেজটা পাঠালেন আমি তখন বাড়িতেই ছিলাম। তাই সঙ্গে সঙ্গে বাক্সটা খুলে ওষুধ গুলো সরিয়ে দেখলাম নিচে সত্যি একটা সিডির বাক্স রাখা আছে। পেয়েই ওনাকে ফোন করলাম কিন্তু অনেকবার কল করা সত্ত্বেও উনি ফোন ধরলেন না। “কথা বলতে বলতে ওনার গলা ভারী হয়ে এল। রুমাল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে উনি বললেন, “সেই বিকেলেই খবর পেলাম উনি আর নেই।” আমি জলের গ্লাস টা ওনার দিকে এগিয়ে দিলাম। উনি জলের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বললেন, “এটা আপনি রাখুন। কিছু উদ্ধার করতে পারলে আমায় সিওর জানাবেন, প্লিজ।”