ঘুম যখন ভাঙলো তখন প্রায় আটটা বাজে। যোগব্যায়ামটা আর শুরুই করা হচ্ছে না। অফিসের তারা নেই কারণ ছুটিতে আছি। সাধারণত ছুটি নিইনা বলে আমার দশ দিনের ছুটি এক কথায় মঞ্জুর হয়ে গেছে। গত রাতে একটু বেশিই খাওয়া হয়ে গেছিল। মাথাটা এখনো ধরে আছে। সকাল আটটা বেজেছে। এটা অবশ্য যোগব্যায়াম বিয়োগের কারণ না। এই হ্যাং ওভারটাই কারণ।উঠে পেপার পড়ছিলাম বেডরুমে। হঠাৎ বাল্মীকি দরজা নক করে বলল, “এক সুন্দরী মেয়েছেলে এয়েচেন আপনার জন্য।”ওর কথার কোনো ছিরি ছাদ নেই। একজন আগন্তুক মহিলার সম্বন্ধে এরকম অরুচিকর কথা শুনে আমার ভুরুটা আপনা থেকেই কুঁচকে গেল। তাড়াতাড়ি করে গায়ে জামাটা চড়িয়ে ড্রইংরুমের দিকে চললাম। ড্রইংরুমে ঢোকার আগেই নাকে একটা সুন্দর মিষ্টি গন্ধ ভেসে এল। মনটা রাঙিয়ে উঠল। বুঝলাম বাল্মিকীর ‘সুন্দরী মেয়েছেলের সুগন্ধি আতর সারা ঘরটাকেই সুবাসিত করে তুলেছে। খোঁজ নিয়ে দেখেছি শ্রেয়ান এখনও নিথর। হবেই তো আমি যে পরিমান খাব ও অন্তত তার তিনগুন খেয়ে অন্য জগতে বিচরণ করার কথা। ও এখনও অন্য জগতেই বিচরণ করছে। ড্রয়ইংরুমে ঢুকে দেখি ভদ্রমহিলা বসে আছেন। আমি ভদ্রমহিলার উল্টো দিকের সোফায় গিয়ে বসলাম। না, সত্যি ভদ্রমহিলা অতীব সুন্দরী। আমার থেকে হয়তো বছর দশেকের বড়ই হবেন। কিন্তু এই বয়সেও উনি নারীত্বের মর্যাদা রেখেছেন এখনও। যে কোনো পুরুষের মন হরণ করতে পারেন। হাত জোর করে বললাম, “নমস্কার আমি অর্ক চৌধুরী।” ভদ্রমহিলা নিজের হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডসেক করে বললেন,”হ্যালো, আমি মিসেস তনিমা চোঙদার। একটি বিশেষ কারণে আপনার কাছে এসেছি”। আমি বাল্মিকী কে হাক পেরে চা আনতে বলতে যাচ্ছিলাম দেখি ও চা নিয়ে এসে হাজির। তার মানে ও আগে থেকেই চা তৈরি করতে চলে গেছিলো। এই জন্য ওকে আমার এতো ভালো লাগে। ভদ্রমহিলাকে চা অফার করে নিজে এক কাপ নিয়ে বললাম, “হ্যাঁ ম্যাডাম এবার বলুন প্লিজ।”ভদ্রমহিলা বললেন, ” মিঃ চৌধুরী আপনি বোধহয় শুনেছেন রিসেন্টলি একটা ব্যাংক লুট হয়েছে কসবায়?” আমি বললাম হ্যাঁ ম্যাডাম শুনেছি।” ভদ্রমহিলা বললেন, “ব্যাংকে যার ভল্টটা লুট হয়েছে তিনি আমার হাজব্যান্ড লেট ডঃ কানুপ্রিয় চোঙদার।”আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “লেট্ বললেন কেন? আই এম সরি টু আস্ক বাট হোয়াট হ্যাপেন্ড টু হিম?” উনি আবেগঘন গলায় বললেন, “উনি আর নেই! হি হ্যাজ বিন মাডার্ড।” এবার আমি বিস্মিত হলাম। আমার সন্দেহপ্রবণ মন ভাবতে শুরু করে দিয়েছে যে গত কয়েক দিনে যে সব ঘটনা ঘটেছে আমাকে নিয়ে, সেগুলির সঙ্গে ওনার মৃত্যুর কোনোভাবে যোগাযোগ আছে কি? আমি নিজে উদ্বেগ লুকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “ডঃ চোঙদার কিভাবে খুন হলেন একটু বিস্তারিত বলবেন”? উনি বললেন, “হ্যাঁ বলতে তো হবেই। আমাকে উনি শেষ মেসেজে তেমনি নির্দেশ দিয়ে গেছেন। সেই নির্দেশ পালন করতেই এসেছি।”
ভদ্রমহিলা বলে চললেন, “আমার স্বামী ছিলেন একজন বৈজ্ঞানিক। আপনি নিশ্চই ওনাকে চিনতেন! উনি গত সোমবার মারা গেছেন। নিজের গাড়ির পেছনের সিটে ওনাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। রক্তাক্ত অবস্থায়। সামনের সিটের পেছন দিকে শুধু নিজের রক্ত দিয়ে কিসব হাবিজাবি লিখে রেখেছিলেন।”