• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ২)

দুই

ঠান্ডা ঠান্ডা কি একটা মুখে লাগাতে ঘুমটা ভেঙে গেল। চোখ খুলতেই চোখটা ধাঁধিয়ে গেল আলোয়। দেখি একটা কুকুর আমার মুখ চাটছিল। তারই অযাচিত স্নেহের পরশে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে। মাথার উপর নীল আকাশ দেখে আমি ধড়মড় করে উঠে বসলাম। দেখি, আমি শুয়েছিলাম একটা আবর্জনার ঢিপিতে। চারিপাশে এরখম আরো অনেক আবর্জনার ঢিপি। চারিদিকে দুর্গন্ধময় পরিবেশ। এত দুর্গন্ধ যে সেই গন্ধ নাক দিয়ে প্রবেশ করে আমার দম বন্ধ করে দিচ্ছে। মাথাটা খুব ভারী হয়ে আছে। আর গা-টাও গোলাচ্ছে। আমি ঢিপি থেকে নেমে এলাম টলতে টলতে। আমি কোথায়, বুঝতে পারছি না। একেবারেই অচেনা, কোনদিন আসিনি এখানে। আগের দিন রাতের ঘটনা গুলো মনে করতে লাগলাম। বুঝলাম লোকগুলো আমায় অজ্ঞান করে এখানে ফেলে দিয়ে গেছে। কাঁধে একটা ঝোলা নিয়ে একটা বাচ্চাকে আসতে দেখলাম। আমি হাত নেড়ে কাছে ডাকলাম। ও কাছে এল, বুঝলাম বাচ্চাটা কাগজ কুড়োতে বেরিয়েছে। ওকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম এটা ধাপার মাঠ। মানে ধাপার ডাম্পিং ইয়ার্ড। বাইপাসটা কোনদিকে ওর কাছ থেকে জেনে নিয়ে সেইদিকে এগোতে লাগলাম। মাথাটা বেশ ঘোরাচ্ছে।
কোনোমতে একটা ট্যাক্সি ডেকে কসবা কথাটা বলে উঠে বসে সিটে মাথাটা এলিয়ে দিলাম। একবার দেখে নিলাম ড্রাইভারের সিটের পিছনের নাম্বারটা। না, স্বাভাবিকই আছে। পকেট হাতরে দেখি মানি ব্যাগ নেই। তার মানে আমাকে লুঠই করা হয়েছে। বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ড্রাইভার একটু গলা চড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল ‘বাবু আব্ কিস্ তরফ’? চোখ খুলে দেখলাম বিজন সেতু পৌঁছে গেছি। ড্রাইভারকে পথের নির্দেশ দিতে দিতে বাড়ীর কাছে এসে পৌঁছলাম। ট্যাক্সিকে দাঁড়াতে বলে আমার দোতলার ফ্ল্যাটে এসে বেল দিলাম দরজা খুলে বাল্মীকি জিজ্ঞাসা করল, “আরে দাদা দুদিন ধরে কোথায় ছিলেন”? আমার যা অবস্থা পৃথিবীর সমস্ত ব্যাপারই তখন আমার কাছে তুচ্ছ। আমার বিছানাটাই তখন আমার একমাত্র লক্ষ। শুধু বাল্মীকিকে বললাম “নীচে ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে, ট্যাক্সির ভাড়াটা মিটিয়ে দাও”। জামাকাপড় পাল্টানোর ক্ষমতা তখন আমার নেই। সটান শুয়ে পড়লাম বিছানায়। চোখে ঘুম নেমে এল। ঘুমিয়ে পড়ার আগে একটা কথায় মাথায় এল যে আমি, দুদিন ধরে অচৈতন্য ছিলাম। কিন্তু কোথায়? কেন? কারা আমাকে কিডন্যাপ করেছিল? শুধু লুঠ করার জন্য নয় সেটা তো বেশ বোঝা যাচ্ছে। তাহলে ব্যাপারটা কি? কিন্তু মাথা আর শরীর এতটাই অবসন্ন যে আবার জ্ঞান হারালাম। তবে এবার আর লুঠেরাদের হাতে নয় নিদ্রাদেবীর হাতে।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *