কবিতায় সুধীর দত্ত

তবু যুদ্ধ হয়
কেউই চায়নি যুদ্ধ ,এমনকী যুদ্ধে গেছে যারা। তবু যুদ্ধ হয়েছিল,
তবু যুদ্ধ হয়।
যখন উত্তুরে হাওয়া
কোনোও ফুলকি থেকে বনতলে পাতার মর্মর
নিমেষে আগুন হয়, হা হা গ্রাসে ধেয়ে আসে,
গাঁ-বুড়োরা আগুন লাগিয়ে দ্যায় সন্তর্পনে আর
পুড়ে যাওয়া পাতাগুলি ডিঙিয়ে আগুন
তাদের ঘরের দিকে আদৌ পা বাড়াতে পারে না, ফিরে আসে,
যেন সেই বিচক্ষণ বুড়ো সেনানীরা
পোড়াক্ষেত, বিষকূপ, পুষ্করিণী অতিক্রম করে
আগুনের লোল জিভ, জেনেছিল, এগোতে পারে না।
দাউদাউ জ্বলেছে আগুন।
আর এক বিশ্বরূপদর্শন
বুঝতেই পারছি না, ঠিক কোন বাঁকে দাঁড়িয়ে রয়েছি, সনাতন !
বাঁ’দিকে তো লালগড়,
মাকড়া পাথর ভেঙে মায় কোনো শুঁড়িপথ
দেখাই যাচ্ছে না।
দশ দিক গেরুয়াজল আসমুদ্র হিমাচল, এমনকী পাদদেশে চা-বাগানগুলি।
তৃণহীন পাহাড় ও জংগল।
এবার কি মেঘ ভেঙে রোদ উঠবে খুব? কমলালেবুর আভা মুখে মেখে বিনয় তামাং
শুধুই আকাশ দ্যাখে ; বলো সনাতন—
ওই যে খেজুরগাছে কাকে বেঁধে পেটাচ্ছে ক’জন?
হায় ঋষিগণ, আপনারা তো গোঘ্নই ছিলেন !
চুপ করে থাকবেন না ,কিছু বলুন !
বুঝতেই পারছি না
কোন সমাপতনের দিকে বাঁক নিচ্ছে এই দেশ বহুত্ববাদীর !
আব্রহ্ম শুনেছি স্তম্ব তাঁর আবেশ, ক্রমাগত দ্বন্দ্বের ভিতর দিয়ে এই চলা একদিন সম্পূর্ণতার দিকে নিয়ে যাবে, মানুষেরা দেবকাম হবে?
তবে এই কিশোরটিকে হত্যা করে কারা-বা ঝুলিয়ে গেল গাছে?
চেতাবনি লিখে রেখে গিয়েছিল পিঠে?
আর এই যে পাঁজর নিঙড়ানো হা-হা
সারা ভাঙিপাড়া জুড়ে,
একেই কি দ্বান্দ্বিকতা বলো?
মাও সে তুং একদিন পৃথিবীর শেষ পয়গম্বর ছিলেন।
এবং হ্রদের তীরে বক তাঁকে জিগ্যাস করলেন : বার্তা কী ?
নিঃশঙ্ক উত্তর ছিল : বন্দুকের নল।
এবং বসন্তকাল। চমকাল বিদ্যুৎ।
জমানো ধুলো ও বালি, মেঘে মেঘে গর্জে উঠল বাজ।
সকল কদলিগাছ বুক পেতে ধারণ করল বজ্রসুঁই ৷
বাকিটুকু ইতিহাস, আমাদের কাবা আর ফাঁসিদেওয়া গ্রাম।
আমরা বুঝিনি সেই হাতের তালু ও তার পাঁচ-আঙুল নীতি,
বুঝিনি ফেরেব্বাজ সুচতুর হাসি।
তারও আগে স্তালিনের বুট প’রে আমাদের লিকলিকে পা,
হাভানা চুরুট থেকে ছড়িয়েছে বিস্তর ধোঁয়া।
সত্যিই রেশমপথ আমাদের কোনো দিন ছিল?
অতিকায় বাদুড়ের মতো অন্ধকার ঝুলে আছে মাথার উপর।
আমরা রোদ্দুর হতে চেয়ে অবিমৃষ্যকারিতায়
আরও ঢের অন্ধকারে আত্মহা হয়েছি।
তবু বলো, যুদ্ধ করো, ঘরের ভিতর ঘর, ভাঙো !
বুঝতেই পারছি না সনাতন,
তোমার দাঁতের খাঁজে কার কার চূর্ণিত মাথা, মাংস লেগে আছে?