• Uncategorized
  • 0

কবিতায় শুভদীপ নায়েক

প্রশ্নহীন, একা

আমি তো লক্ষ্মৌ চলে গেলাম পেটের ডানদিকে একটা যন্ত্রণা নিয়ে,
তোমার কী হল ? পুনরায় বিয়ে করলে ? আমাদের ভেঙে পড়া জলযান
ডুবে যাচ্ছিল, হঠাৎ তলিয়ে গেলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াত আজকের এই কাহিনি ?
আবারও হোটেলের ঘরে আয়নায় ভেসে উঠল মুখ, সন্ধের স্ট্রিটলাইট,
কাগজকীটের মতো কুরে কুরে খাওয়া সব স্মৃতিদের আলোচ্য অ্যালবাম ।
সরু পাড়ের কালো শাড়ি পরে চূড়ো করে চুল বেঁধে এসেছিলে, মনে পড়ে ?
অরুণিতা আলো তোমার মুখের ওপরে, পালকছায়ার মতো একঝাঁক অন্ধকার
পিঠের পথে নেমে গেছে, কোথায় গিয়েছে তারা ? কতখানি দিন গেছে ঝরে ?
কাল থেকে হাসপাতালে ওষুধ শুরু হবে, স্যালাইন চলবে হাতের চ্যানেলে ।
স্বামীর কোট হাতে নিয়ে টেলিফোনে তুমি যদি ফের জিজ্ঞেস করো, ‘কী বলছে ডাক্তার ?’
ভয় হবে, খুব ভয় হবে, পাছে বারান্দা থেকে উড়ে যায় প্রথাগত রেলিংয়ে বসা পাখি ।
আমাদের দেখা হবে ফের,— এ আশা ভবিষ্যতে নেই,  তার চেয়ে চিঠিতেই লিখো,
কী করে কাটছে শীতের এই অলস দুপুর ? স্বপ্নের ভিতরে শুনেছিলাম পারিবারিক
বিবাহসম্বন্ধ তুমি মেনে নিয়েছ, জড়িত কাঠের বীণা তোমার বাসর ঘরের পাশে
সারারাত সাক্ষী হয়ে পড়েছিল, তুমি গাওনি !

আমাকে পুড়তে দাও বিশ্রি অন্ধকারে লেপ কাঁথা আর বালিশের কলঙ্কিত আগুনে এই ঘূর্ণিটানে নষ্ট হয়েছে বিষয়-সম্পত্তি পাক খাই নিয়তির ধাক্কায় ভাঙি অবশেষে আসনে আসনে ছড়িয়ে পড়েছে ধুলো আর্তনাদ ব্রততীবাগানে দুর্গলিত ক্ষত এই যে অ্যালার্মঘড়ি দীর্ঘজীবন ধরে বেজে আসছে এর স্তব্ধতা আজ মুখরিত করবে কিনা সেই কথা বলো লতাপাতায় জন্ম নিয়েছে যেসব পোকারা তাদের দেশের কোন পতাকা আছে কিনা খোঁজ নাও ভাঙাগাড়ির টায়ার সম্পূর্ণ বসে গিয়েছে প্রচণ্ড অবহেলা পেয়ে ঘাস হয়ে ফুটে থাকো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ুক ডগাগুলো মেটিয়াবুরুজ থেকে যে টাইপরাইটার মেয়েটা আসত শুনেছি আজ মাস ছয়েক হল সে বিয়ে করেছে তার বাবার এক বন্ধুকে অন্যের রেখে যাওয়া স্পর্শসুখ হাতে নিয়ে বসে আছি দেনা নিয়ে ক্ষুধার ছুরি আজ হানা দিয়েছে মাংসে স্বপ্নে আরোগ্যে সেইমতো চিকিৎসাহীন হয়ে অপেক্ষায় আছি বাইরে থেকে চাবি খুলে কবে তুমি আসবে কাঁধের ব্যাগ ও কেনাকাটা নতুনবস্ত্রের প্লাস্টিক নামিয়ে রাখবে বইপত্রের সোফায় ব্লাউজ ভিজেছে ভাদ্রের ভ্যাপসা গরমে নাভির অনেক নিচে শাড়ি তবু সেসবে ভ্রূক্ষেপ নেই তোমার সুগন্ধ ভর্তি শরীর নিয়ে এসে বসলে আমার অর্ধমৃত পোড়া শরীরটার পাশে দেখলে জ্বর আছে পত্রস্নানে বুকের ওপর খোলা বইটা নামিয়ে রাখলে করুণা হল অন্যত্র দৃষ্টি ফিরিয়ে শতরঞ্চি পাতলে মেঝেতে ভাঁজ করা পা নিয়ে নিজেকে বিছিয়ে বসলে আজ তোমার মনে হল খোলা চুল বড় বিরক্ত করছে খোঁপায় জড়িয়ে নিলে তাকে ঋজু আঙুল ও মসৃণ বগলের আভায় ঘর ভরে উঠল ঠাণ্ডা মেঘের জলকণা আরও পুষ্ট হয়েছে আমন্ত্রণী হয়েছে আবরণকে আজ সামান্য সরতে হল নতুন সাহিত্যপত্রে নতুন লেখাদের সংসার এল পুরনো চিঠির মতো আমিও পড়েছি আমার আগেকার কবিতাগুলোর তলায় নেই অব্যয় নেই পংক্তির শেষে মিল ও অমিলের দ্বন্দ্ব বহুরাত্রি আগে একটি বইয়ের পৃষ্ঠা অকারণ ছিঁড়ে গিয়ে প্রশ্নের মুখে ফেলেছিল আমাকে একটা তৈলচিত্রও রঙের ব্যবহার জানত না বলে তোমাকে পিছন থেকে ডেকে পালিয়ে গিয়েছিল আমার খিদের বন শরবিদ্ধ মৌচাক বস্তুকণার ফাটল সবটা নিয়ে আমায় পুড়তে দাও বিষাদ থেকে ফুটে উঠছে যে গ্রন্থ তা ছাপার পরেই সামনে আনবে অনেক ঝড় অনেক বজ্রপাত আর শূন্যগর্ভ বাঁকা শিক গরুর গাড়ির চাকায় লাগানো লোহার জং ধরা বেড় এই নিয়তিঘনিষ্ট নক্ষত্রের আগুনে পুড়তে দাও হীন ও জন্মপরম্পরায়

আমাকে আলোচনার গভীরে বসিয়ে আজ তুমি চেয়ে আছ বিষয়বস্তুর দিক থেকে
এভাবে পুনরায় নতুন কোনও কবিতা কি শুরু করা যায় ? পায়রাদের দুঃসাহস আছে,
আছে ঘাসের উঠোনে ছড়ানো ধানবীজ, ঐ তারা খুঁটে খাবে সমস্ত সকাল ধরে ।
এই অপরাহ্ন তাড়াতাড়ি ম্লান হবে এবারের শীতে, জ্বলে উঠবে সন্ধে-বাজারের আলো,
রাতের খাবারটুকু মিটে গেলে মনে পড়ে এ জীবন বড়ই সাজানো, যদিও অগোছালো,
মসৃণ হতে হতে একপাশে চাওড়া ফাটল, কিনারা ভাঙা  ।  যে হাতে ভুলগুলো ভেঙেছিল,
সেই ভুল অন্যহাতে কতটা সারানো ? কতটা অতিষ্ট করে আমাকে তোমাদের ক্ষমা ?
মণ্ড ভাঙে, যেন আগুনের সামান্য পরিখা বেয়ে নেমে এল আলোতরল । জাঁতির কামড়ে
সুপারি হয়েছে শতটুকরো, সেকথা রাতের শেষে স্বীকার করে যাই ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।