• Uncategorized
  • 0

কবিতায় শুভদীপ নায়েক

প্রশ্নহীন, একা

                                                                   দুঃসাহসে কিনে ফেলি বর্ষার ভাঙামেঘ,

                                                  ছত্রছায়া, এবং কবিতার বইগুলো ।

                                                                       বাতাস রয়েছে, তবু—

শূন্য পাকদণ্ডী ও আলের ওপর দিয়ে ভেসে যায় নিরালোক কথা ।

এই গ্রাম,

               এই গ্রাম তপতীর ছিল,

                সমস্ত জীবনভর যে আমাকে বোঝাতে চেয়েছে,

                                                  ‘এইবার অন্তত আমাদের কথা ভেবে ফিরে আসো, কতকাল

                পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে বেড়াবে ! তুমি তো কিছুই করোনি ।’

ছায়াসুদ্ধু গাছ কিনে ফেলি,

                          অন্ধকার পুকুর, পানার আড়াল থেকে একবৃত্ত ঠাণ্ডা জল,

                                                                                          সবই কিনেছি ।

                                                              যদুদের বাড়ির ছোট বউ, গলিত লোহার শরীর নিয়ে

                                                                                                                              ডুব দিয়ে ওঠে ।

ভিজে শাড়ি, সিঁদুরের রঙটুকু কপালে মিশেছে,

                                মেঠোপথ কিনেছি আজ বহুদিন হল, সেই পথে ফেরার মুখে

একদিন তাকেও দেখেছি যুবাপুরুষের ঠোঁটে তৃষ্ণা ছড়াতে ।

এই চিঠিপত্র আর দলিল রাখার সিন্দুকটা কিনেছিল ঠাকুর্দা । সেটার শরীর এখন জং লেগে পুড়ে গেছে । স্মৃতিগুলো কিছুকাল ভাল লেগেছিল সুলেখার, বিয়ের পরের কিছু যৎসামান্য দিন এ ঘরে সে ফিরে ফিরে আসত । মায়ের শাড়ি আর গয়না কখনো সে বের করে দ্যাখেনি, সেসব সবই ছিল এই সিন্দুকে । ছিল দুধের সন্তানকে লিখে দিয়ে যাওয়া পৈত্রিক সম্পত্তির হিসেব । মেয়ের দ্বিতীয় বিয়ের খরচ, মাসে মাসে চারঘাটের বাগানবাড়িতে বেনামে মাসোহারা পাঠানোর কথাও লেখা ছিল । বংশের এসব কাহিনি শুনে সুলেখা বলেছিল, ‘আলাদা ঘর ভাড়া নিলে হয় না ? বহুদিন শরিকেরা অপমান করে, ভাইয়েরা বাড়ির ভাগ নিতে চায়, ভাই-বৌ ছোটবড় কথা শোনায় । তুমি কি এভাবে রাখবে বলে আমায় এনেছিলে ?’ গত বুধবার, সিন্দুক খুলেছি । নিশ্চেতনা ঘিরে ছিল আমাকে । মায়ের শাড়ির নিচে লুকানো পিস্তলটি তুলে নিয়ে দেখি বারুদের গন্ধ আজ আর নেই । বাবা আত্মহত্যা করেছিল এটা দিয়েই । সেইমতো আছে ভয়, মেঘের সারল্য খেলা করে মেয়েদের সমস্ত কিনারায় । হরিতকী ফল, সরখেল-বাটি, কাঁসার বাসনপত্র, সবই তো পড়ে আছে সিন্দুকে, শুধু প্রজন্ম পেরিয়ে গেছে । যারা এতকাল ভালবাসত পরস্পরকে, তাদের সন্তান এসেছে । দুধ ও কাপড়চোপড়ে বড় হয়ে তারাও মিশেছে নারী-পুরুষের সঙ্গে । আছে নাম, আছে গোত্র, আছে সম্বন্ধ লেখার ফিতে বাঁধা খাতা । কিন্তু পৃষ্ঠায় নেই শোক, জ্বলছে বিরাট নক্ষত্র,  জড়িয়ে ধরার পরে দাবি মেটানোর সুখ, লোভের পাওনাটুকু আছে, পুকুর কেনার খতিয়ান, আছে মামলার কাগজপত্র, জন্ম-মৃত্যুর অসংখ্য বিভাজন, অস্তিত্বের বহু ফাঁক, আছে ভাসুর ও ভাই-বৌয়ের মেলামেশার চালচিত্র ।

গোল, তেপায়া, অথচ ভাঙন ধরে আছে একপাশে,

পুরনো কাঠামো বলে আজ আর তেমন চাহিদা নেই,

কেবল যারা সাজানো, খোলসাকার, ডাক পায়, গিয়ে বসে

সামনের সারিতে, উপস্থাপনা করে, ফিরে যায়, হতাশ, নিরাশ,

সর্বনাশের চেয়ে সামান্য নিচে, এত দুষ্প্রাপ্য নয়, তবু–

মাছের ঝাঁকের মতো জালে ওঠে বর্ষাকালে, বাতাস হঠাৎ যদি

পাক দিয়ে খুব জোরে প্রবাহিত হয়, নিভে গিয়ে তারা পরিণত হয় আঁধারে ।

ফাটল অপেক্ষা করে আছে, চিনামাটির প্রতিটা পাত্র তারই প্রমাণ দেয় ।

মনোরম জল ফুলের পাপড়ি আর পতঙ্গদের মৃতদেহে ভরে আছে, সেই জল

সূর্যের আভা পেয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে বসল, কীটেরও সমর্থক আছে,

পাথরের ফাঁকে ফাঁকে জমে আছে সামুদ্রিক বালি, কবেকার সহবাস,

পাতার শিরায় আজ শুরুতেই বৃষ্টি নেমেছে, সর্বত্রই শাসন, চেয়ে দেখি

একহাতে অবক্ষয়ী আমি, সামনে ক্লান্ত ভিক্ষার টিন, বজ্রথলি নিয়ে

বসে আছি সবার পিছনে, খাতাভর্তি হাড় ও কঙ্কালের লেখা ।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।