কবিতায় লক্ষীকান্ত পণ্ডা
ভয়
অবুঝ স্বপ্নেরা ইলশেগুড়ি
বুকের ভেতর ইচ্ছে হামাগুড়ি
হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে
বেহিসেবী জীবনের ছবি এঁকে
ভয় হয়-
পাছে পিছে ফেলে যায় অবাধ্য সময়।
দু’চোখে কাজল স্বপ্ন নিয়ে
এলোমেলো দু’কূল ছাপিয়ে
তুই যদি হতে চাস নদী
আবার হারিয়ে যাস যদি
ভয় হয়-
আমি শুধু হেরে যাবো; নিঃস্ব হৃদয়।
#
হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে,ইদানিং
আমি কারো সাথে যেতে চাই না।
কখন হারিয়ে ফেলি,ভেবে সঙ্গে নিই না কিছুই;
ওয়ালেট,চাবি,ছাতা,তামাক বা পানের ডিব্বাটিও
একা একা যেতে যেতে,-অলি গলি ফুটপাতে-
চায়ের দোকানে,বাসে,চলন্ত ট্রেনে যদি দেখা হয়
কোন চেনা মুখ,কিছু গাঢ় অনুভব!
হঠাৎ শুধায় যদি সত্যি ভালো আছো?
আমি নেমে পড়ি পরের স্টেশনেই!
ত্রস্ত বাড়ি ফিরে; এইসব ভালো-মন্দ লাগা-টাগা
সবকিছু ধুয়ে মুছে সাফ-সুতরো রাখি
ইদানিং বড্ড ভয় করে-
পাছে এই ভালো লাগা,চেনা মুখ স্মৃতি হয়ে; অচিরে-
ক্ষত-চিহ্ন,রক্ত হয়ে ঝরে!
#
সবই হারাবে,একদিন; সময়ের স্রোতে
ভেসে যেতে যেতে; কাদামাটি,কিছু কচুরিপানার
আঁশটে গন্ধ আপাদমস্তক গায়ে মেখে
খাল-বিল-জলাশয়-নালা নদী; পাড় বরাবর
ইতস্তত পদচিহ্ন,কিছু ছোঁয়া মেখে
কাঁপা কাঁপা হাত রেখে সন্তানের মাথায়
সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা,প্রিয়-জন-সঙ্গ-সুখে।
যেন আমি বেঁচে থাকবো অনন্ত সময়!
এইসব সন্তান-সন্ততিরা একদিন পিতা-মাতা হবে
আধো-কথা,আঁকিবুকি দেয়ালে,বইয়ের মলাটে
রূপ-রং-চেনা গন্ধ ফিকে হয়ে হাওয়ায় মিলাবে
হলদে পাতা,ধুলো,মেঘ,ধূ-ধূ করা মাঠে।
ইদানিং বড্ড ভয় করে!
এই আলো-ঝলমল,এই স্নিগ্ধ বাতাসের ওম
কি জানি কখন যেন কোন সীমানায়,অগোচরে-
কখন হারায়! শুধু এ কবিতাগুলি,অন্তর-পরম;
এই ক’টি পঙক্তি যেন অফুরান সময়ের ঢেউ
ভেঙে ভেঙে; বানভাসি উঠোনের কোন একখানে
সযত্নে বাঁচিয়ে রাখবে আমার হৃদয়। যেন কেউ
বেঁচে থাকতে চেয়েছিল অন্তর গোপনে!