• Uncategorized
  • 0

কবিতায় অনির্বাণ মুখপাধ্যায়

আচার্য্যদেবের অপরাহ্ন

তারপর কবিতা শান্ত। ভাগীরথীতীরের বটবৃক্ষমূলে অপরাহ্ন ক্রমশ নিবিড় হয়ে আসছে। আচার্য্যদেবের দাড়ি, সামনে ঝুলে পড়া চুলের গুচ্ছ, মায়াক্লিষ্ট দু’টি চোখ— সব থেকে যেন নিসর্গলালা অতি ধীরে নামছে, অতি স্লো-মোশনে…

এই এক অনুপম ক্ষণ। এমন মুহূর্তে আচার্য্যদেব কল্পতরু, শুধুমাত্র ইচ্ছা করলেই দিয়ে দিতে পারেন সুরসৌন্দর্যের নকশাকাগজ। কোনোভাবে বিব্রত না করে চেয়ে থাকলাম। আচার্য্য বললেন— শোনো, গঙ্গার কলতান, শালিখের রুক্ষস্বর, অকালস্নানার্থীদের দীর্ঘশ্বাস ভেদ করে শোনো, যে গান বাজছে, তা যে কোনো কবিতার শেষ পঙক্তির পূর্ণচ্ছেদ টানার পর অব্যাহত থাকে। শোনো—

আমি সমস্ত শ্রুতি একত্র করে বাড়িয়ে দিলাম। বটবৃক্ষের পত্রমর্মর ছিন্ন করে তা উঠে গেল বহু ঊর্ধ্বে, ক্রমে স্পর্শ করল এক নোটেশনলোক। শ্রুতিকে টেনে নামিয়ে কর্ণকুহরে পুনরায় প্রবেশ করাতে তা হয়ে উঠল—হম, বেখুদি মেঁ তুমকো পুকারকে চলে গয়ে… কাকে ডেকে কে চলে গেল— জিজ্ঞাসা করাতে আচার্য্য বললেন— বেখুদি। সে কি কোনো আত্মা? সে কি এক নিরালম্ব ঢেউ? রুমি চক্রবর্তী, কাবেরী দাশগুপ্ত? ওয়াহিদা রহমান? গীতা দত্ত? মনে হলো, সমস্ত সত্তার ভিতরে আছড়ে বেড়াচ্ছে বেখুদি। আচার্য্যের মৃদু স্বর চাপা সমুদ্রগর্জনের মতো শোনাল— আরও নিবিড়ে যাও, দ্যাখো… তবে কি পুকার? কাকে ডাকছে কে? আরো শ্বাসক্ষট, আরও জলতেষ্টা, আরও নুন ঝরে পড়ছে সমস্ত শরীর থেকে… কোনোক্রমে বললাম—থামান। দয়া করে থামান।

আচার্য্য হাসলেন। মনে হলো, বশিষ্ট নক্ষত্র থেকে একখণ্ড হিম জ্যোৎস্না নেমে এলো। হাত রাখলেন আমার কানের পিছনে— সমস্ত কবিতার শেষে… সমস্ত কবিতার শেষে… তা হলে কী থাকে? দাড়িমুখ একপল জ্বলে উঠল, বামহস্তের তর্জনি ঊর্ধ্বে তুলে আচার্য্যদেব বললেন—ঐ!

ভাগীরথীতীর শান্ত, পক্ষীবাচালতা উধাও, স্নানার্থীরা অদৃশ্য। শুধু অক্ষয়বটের পাতা ফিস ফিস করে বলে যাচ্ছে—মৌসম বিতা যায়, মৌসম বিতা যায়!

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।