গৌরাম্মার একটাই ভাল লাগার জায়গা এখানে। মেজর ড্রুমন্ডের বাড়ি। ওখানে গেলে বা তাঁর স্ত্রী এমিলি এখানে এলে, গৌরাম্মা বেশ সহজ হয়ে ওঠে। এমিলির বয়স বেশি নয়, অন্যান্য বৃটিশদের মতো সে খুব একটা নাক উঁচু টাইপের নয়, গৌরাম্মাকে আপন করে নিয়েছিল সেই জাহাজেই। জাহাজ যাত্রার সাত/আটদিনে তাদের মধ্যে এক গভীর সংযোগ স্থাপিত হয়ে গেছে। এমিলি গৌরাম্মার থেকে বছর দশেকের বড় হলেও, দুজনের একেবারে সখির মতো, দুই বোনের মতো মিলমিশ হয়েছে। তাই সবটুকু এমিলিকে বলে গৌরাম্মা হালকা হয়। এমিলি বারবার গৌরাম্মাকে সাবধান করেছে, বুঝিয়েছে, সে যেন কোনমতেই রানীর বিরোধিতা না করে। বুদ্ধি করে, কোন সংঘাতে না গিয়ে, হাসিমুখে যেন রানীর সঙ্গে আলাপচারিতায় যায়। যতই হোক না কেন তিনি সর্বময় কর্তৃ, তায় আবার গৌরাম্মার গডমাদার এবং অভিভাবক। রানী যদি কখনও আঁচ করেন যে, কেউ তার বিপক্ষে যাচ্ছে বা বিরুদ্ধাচারণ করতে পারে, তাকে ছেঁটে ফেলতে বেশি সময় নেন না। তবে মোটের ওপর রানী মানুষ হিসেবে খুব খারাপ নন মোটেই। ক্ষমতার শীর্ষে থাকলে অহং তো থাকবেই এবং সেই ক্ষমতা ব্যবহারের মাত্রাজ্ঞান খুব কম মানুষেরই থাকে। এক্ষেত্রে রানীও ব্যতিক্রম নন। ওঁর মতে মত দিলেই তিনি খুশি। এটুকুই যা। এমিলির কথা নিজের ঘরে এসে ভাবছিল গৌরাম্মা। এতদিন কেটে গেল এই প্রাসাদে, কত নাম শুনেছিল এই বাকিংহাম প্যালেসের, কোনদিনও ভাবেনি এই প্যালেসে এসে তাকে থাকতে হবে! এই সৌভাগ্য, আগে এই প্যালেসে থাকার কথা ভাবলে তাকে সৌভাগ্যই বলত, আর সেই সৌভাগ্যের রূপটি এমনভাবে দুমড়ে মুচড়ে যেতে পারে, ওর কল্পনাতেও ছিল না। তবে এমিলি খুব খারাপ কিছু বলেনি। রানীকে দেখছে ও কাছে থেকে। বিলাসবহুল জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত, কিছুটা খামখেয়ালি এবং প্রেগন্যান্ট থাকার কারণে হয়ত কিছুটা অলস মনে হয়েছে তাঁকে। এত বড় দেশের সম্রাজ্ঞী তিনি, আদেশ করতে অভ্যস্ত, যদিও সেই আদেশ বা হুকুমের স্বরটি খুবই বিনীত এবং নিচু তারে বাঁধা, তাঁর অহং থাকবে না তো কি গৌরাম্মার থাকবে? যে কিনা বৃটিশ অধিপতির কাছে পরাজয় স্বীকার করেছে, নিজের রাজ্য তাদের হাতে তুলে দিয়েছে, এমন এক রাজার কন্যা!
হুকুম তোমাকে মানতেই হবে গৌরাম্মা! আর তুমি আদরের রাজকন্যা নও, বরং বৃটিশ মহারানী ভিক্টোরিয়ার দয়াপ্রার্থী, তাঁরই আনুকূলে রানী তোমার গডমাদার। যে মায়ের ইচ্ছানুসারে তুমি আজ বাকিংহাম প্যালেসে থাকছ, ইংরেজি শিক্ষা পাচ্ছ, রানীর পরিবারভুক্ত হয়ে তোমার মান, ইজ্জত বেড়েছে বৈকি! কোথায় তুমি ছিলে এক পাহাড়-জঙ্গলের ছোট্ট রাজ্য কোরাবার রাজকন্যা, আর এখন কোথায় তুমি পৌঁছেছ বৃটিশ মহারানীর পালিত কন্যা হয়ে! সইতে শেখ গৌরাম্মা! সহ্যের মতো বড় শক্তি আর নেই। ওই যে আয়নায় দেখ এবার নিজের চেহারা। কেমন জৌলুস বেড়েছে দেখতে পাচ্ছ? এই আবহাওয়ায় তোমার গায়ের ময়লা রঙের আস্তরণ অনেক ফিকে হয়ে এসেছে এ কদিনে, মুখচোখ কিঞ্চিৎ ম্লান দেখাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সব মিলিয়ে তুমি যে সুখেই আছ বোঝা যাচ্ছে……এই সমস্ত কথা নিজেকে নিজে অনবরত বলে চলেছে গৌরাম্মা। এই সব ভাবনার মধ্যে ওর টিচার চলে এলেন। এই আরেকজন মানুষ, যাকে গৌরাম্মা খুব পছন্দ করে। ভদ্রলোক বাঙালি, বৃটিশ স্ত্রী তাঁর। লন্ডনে আছেন অনেক বছর হল। স্ত্রীর সুবাদে এই প্রাসাদে প্রবেশ করতে পেরেছেন। গৌরাম্মার মতো ভারতীয়দের উনি ইংরেজি শেখান। সহবৎ শিক্ষা দেন। ভদ্রলোকের একটা অদ্ভুত নাম আছে বটে, কিন্তু ওর সেটা কিছুতেই মনে থাকে না। অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছে ও, আর ততবারই ভুলে গেছে। লজ্জায় আর জিজ্ঞেস করে না এখন। মুখার্জিবাবু বা মুখার্জিস্যার বলে সম্বোধন করে ওঁকে সকলে। ভদ্রলোকের মুখ আর গোলগাল চেহারা দেখলেই মনে হয় খুব নরম মানুষ। যদিও ওঁর ভেতরে একটা কঠিন রূপ আছে, গৌরাম্মা সেটা প্রত্যক্ষ করেছে অনেকবার। আর সবাই ওঁকে বেশ সমীহ করে চলে, এমনকি স্বয়ং রানীও ওঁর সঙ্গে সম্ভ্রমের সুরেই কথা বলেন। লোকমুখে শুনেছে এই মুখার্জিবাবু নাকি খুব বিদ্বান। আর ইংরাজি উচ্চারণে বৃটিশদের থেকে খুব একটা ফারাক নেই ওর। উনি প্রায়শই হাতে কোন না কোন একটা বই নিয়ে আসেন। গৌরাম্মাকে পড়িয়ে, পড়া মুখস্থ করতে দিয়ে বা কিছু লিখতে দিয়ে উনি সেই বই খুলে বসেন। আর নিমেষেই মগ্ন হয়ে পড়েন বইয়ের পাতায়। গৌরাম্মা খুব একটা ফাঁকিবাজ ছাত্রী না হলেও, মাঝেমাঝে অন্যমনা হলে উঁকি দিয়ে দেখেন বইয়ের পাতায়। একদিন ও ধরা পড়ে গেছিল। সেদিন স্যার ওকে বলে ছিলেন, ‘চিন্তা কর না। আর কিছুদিনের মধ্যেই তুমি এই রকম বই পড়ে ফেলতে পারবে। শুধু মন দিয়ে পড়ে যাও এখন’। গৌরাম্মা জিজ্ঞেস করেছিল, ‘কী বই ওটা?’ জবাবে বইটা এগিয়ে দিয়েছিলেন স্যার। বইয়ের প্রথম পাতায় লেখকের নামের জায়গায় লেখা ছিল, শেকসপিয়ারের নাম। আর একদম মার্জিনে লেখা ছিল প্রদ্যুত ভূষণ মুখোপাধ্যায়। এইরকম নাম বলেই গৌরাম্মা মনে রাখতে পারে না। সে যাই হোক, মুখার্জি স্যারকে ওর খুব পছন্দ। কতরকম গল্প করেন। দেশ, বিদেশের, অনেক অজানা বিষয়ের উত্থাপন করেন, নিজেই বলে যান একতরফা। আর গৌরাম্মা অনেকটাই না বুঝে, কিছুটা বুঝে শুনে যায় মোহাবিষ্টের মতো। যেন এই পৃথিবীতে বই আর বইয়ের জ্ঞান ছাড়া আর কোন বিষয় নেই। এ এক অজানা পৃথিবী দ্বার খুলে এসে পড়ে গৌরাম্মার কাছে। শিল্প, সাহিত্য, নিয়ে কত রকম যে তত্ত্ব কথা উনি বুঝিয়ে যান একে একে…অনেক কিছুই মনে রাখতে পারে না ও। যদিও উন্মুখ হয়ে থাকে স্যারের এই ধরনের কথা বা আলোচনা শোনার জন্য। বইয়ের থেকে এই প্রসঙ্গে বেশি উৎসাহ তার।
পড়ার নেশা কুপিল্লারও কিছু কম নেই। রোজ কিছু না কিছু পড়লে ওর স্বস্তি হয় না। এও এক অভ্যেস। হাতের বইটা মুড়ে রাখল ও। মন বসছে না। বিদ্যার মুখের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠেছিল। ওর মুখে, হাতে কালশিটে দাগ। কুপিল্লার সঙ্গে মেলামেশার এই তার প্রাপ্তি। বাড়িতে ওর বাপ ওকে খুব মারধোর করেছে সেদিন। ভয়ে বিদ্যা কাঠ হয়ে আছে। কোনরকমে লুকিয়ে এসেছিল ওর কাছে। বলেছিল, ‘তুমি আর এস না এখানে। ওরা এবার তোমাকেও মারবে ঠিক করেছে। আমাকে মারুক, সহ্য করে নিয়েছি। কিন্তু তোমার গায়ে হাত উঠলে আমি আত্মহত্যা করব। তুমি এখুনি চলে যাও! আর এস না’। বলতে বলতে বিদ্যার ঠোঁট কেঁপে উঠেছিল। চোখে জল মুছতে মুছতে দৌড়ে চলে গেছিল ও। হতভম্ব হয়ে একলা দাঁড়িয়েছিল কুপিল্লা। বাড়ি এসে লেনিনকে বলেছিল সব। ওর মুখের মেঘ দেখেই কিছুটা আঁচ করেছিল লেনিন। গম্ভীর হয়ে গেছিল ও। রাতে মদ খেয়ে প্রচণ্ড খিস্তি করছিল আপনমনে। তারপরে বলেছিল, ‘কাল ভোরে আমরা শহরে যাব। রেডি হয়ে থেক’। এই বলেই অঘোরে ঘুমিয়ে পড়েছিল ও। লেনিন এখনও কেতরে পড়ে আছে। মুখ থেকে লাল গড়াচ্ছে। এই কয়েক মাসে এই অনাত্মীয় লেনিনই ওর আত্মার আত্মীয় হয়ে উঠেছে। মায়ার পৃথিবীতে কখন যে কে, কার সাহারা হয়ে ওঠে আগাম কেউ বলতে পারবে না। চোখে জল এল কুপিল্লার।
সেদিন এমিলির বাড়িতে গিয়েছিল ও। এমিলি রানীর থেকে অনুমতি নিয়ে গৌরাম্মাকে নিয়ে গেছিলেন সঙ্গে করে। উপলক্ষ্য একটা ছিল বটে। এমিলির ভাই এসেছে, সে আসার জন্য ছোট একটা গেট টুগেদার হচ্ছ ওদের বাড়িতে। রানীর নির্দেশে সেদিন গৌরাম্মাকে বিশেষ ভাবে সজ্জিত হতে হয়েছিল। নইলে নাকি মানমর্যাদা থাকে না রাজপরিবারের। সেই মতো মহার্ঘ্য জরি পাড়ের সাদা সিল্কের শাড়ির ওপর ফারের কোট পরেছিল ও। চুনী ও পান্না বসানো চওড়া কোমরবন্ধ ছিল তার সরু কোমরে। মাথায় হীরে বসানো সোনার মুকুট, গলায় মানানসই হীরে বসানো নেকলেস ও কানে দুল। মুখে প্রসাধন করে দিয়েছিল রানীর লোকজন। খোঁপা বেঁধে দিয়েছিল একটি ভারতীয় মেয়ে, যদিও সেই খোঁপা ভারতীয় কায়দার ছিল না। খোঁপাতেও লাগানো ছিল সোনার কাঁটা আর হীরের ফুল। এককথায় সেদিন গৌরাম্মাকে দেখে সত্যিই আর চোখ ফেরানো যাচ্ছিল না। রানী তো খুব খুশি। গালে গাল ঠেকিয়ে আদর করলেন ওকে। এমিলি উচ্ছসিত ওকে দেখে। এমন ব্রাউন কালারের সুন্দরী সে নাকি কখনও দেখেনি। ফিটনে চেপে, পাশে ঘোড়ায় চড়া রক্ষী নিয়ে গৌরাম্মা ভিক্টোরিয়া চলল এমিলির বাড়ি নিমন্ত্রণে। আজ গৌরাম্মার মন খুব খুশি খুশি লাগছে। এইরকম ভাবে কোথাও নিমন্ত্রিত অতিথি হয়ে যাওয়া তার প্রথম অভিজ্ঞতা। এর আগে অবশ্য প্যালেসে রানীর অতিথি সমারোহে সেজেগুজে তাকে অনেকবার উপস্থিত থাকতে হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোন আনন্দ ছিল না। একগাদা লোকজনের ভিড়ের মাঝে মুখ বুজে উপস্থিত থাকতে হত শুধু। যেন ও একটা পুতুল ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু আজ সত্যিই আনন্দ হচ্ছে খুব। কখন পৌঁছবে সেই অপেক্ষায় মন ছটফট করছে ওর। গাড়িতে এমিলি আর ও একটানা গল্প করেছে। অবশেষে গাড়ি এসে পৌঁছল এমিলির গৃহে। ড্রুমন্ড সাহেব নিজে এগিয়ে এসে অভ্যর্থনা জানিয়ে ওকে ভেতরে নিয়ে গেলেন। সেখানে পরিচয় করিয়ে দিলেন এমিলির ভাইয়ের সঙ্গে। দেখে মনে হল ছেলেটি প্রায় তারই বয়সী। সামান্য কিছু বড় হতে পারে বড়জোর। ছিমছাম চেহারা, রোগাপাতলা আর আমুদে খুব। খুব সহজেই মিশে যেতে পারল গৌরাম্মা ওর সঙ্গে। অন্যান্য অতিথিরা অবশ্য গৌরাম্মাকে সমীহ দেখিয়ে একটু দূরে দূরে থাকছে বা হাত ধরে অভিবাদন জানিয়ে দূরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু এই ছেলেটি যেন একটু বেশিই সহজ। প্রথম থেকেই বন্ধুর মতো মিশছে। গৌরাম্মার রূপের থেকেও তার গয়নার প্রশংসা করেছে বেশি। ওর চোখ বারেবারেই গৌরাম্মার মুকুটে, গয়নায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল। তবে কোনরকম ফর্মাল ব্যাপার যেন ওর মধ্যে নেই। যা কিনা এই বৃটিশ সমাজে একেবারেই দেখা যায় না। পরে এমিলির মুখে শুনেছে ওর এই মাসতুতো ভাই নিউইয়র্কে থাকে। ওখানে ছোট থেকে থাকতে থাকতে নাকি অ্যামেরিকানদের মতো স্বভাবচরিত্র হয়ে গেছে ওর। তবে যাই হোক না কেন, ছেলেটিকে গৌরাম্মার খুব পছন্দ হল। ওর নাম ক্যাম্পবেল এবং বয়সে সে গৌরাম্মার থেকে অনেকটাই বড়, প্রায় দ্বিগুণ!
কোথাকার মানুষ যে কোথায় গিয়ে পোঁছয় কে বলতে পারে! গৌরাম্মাই কি ভেবেছিল কখনও যে সে দেশ ছেড়ে বিদেশে বড় হবে, আর এই বিদেশটাই তার দেশ হয়ে উঠবে? যদিও ছোট বেলায় মায়ের মুখে গল্প শুনেছিল একজন নাকি ওর ছমাস বয়সে ওর হাত দেখে বলেছিল এই মেয়ে বিদেশে যাবে। তখন ওরা বেনারসে থাকত। সেদিন ছিল দোলযাত্রা। চারিদিক উৎসবের রঙে রঙিন হয়ে আছে। প্রাসাদের চত্বর জুড়ে রঙিন চালের গুঁড়োর আবির উড়ছে। আর এককোণে রাখা আছে স্তূপীকৃত হলুদ পাকা আম। লোকে লোকারন্য, সবাই হাসছে খেলছে। সেও ছমাস বয়সে আপনমনে কলকল করতে করতে হামা দিচ্ছিল। সেই সময়ে হঠাতই নাকি তাদের চিরশত্রু, তাদের কাকা আলামান্ডা সোমাইয়া এসে হাজির হয়েছিলেন ধূমকেতুর মতো। তাঁর উপস্থিতিতে সবাই হতচকিত তখন। উৎসবের বাড়িতে পিন পতনের শব্দ। এই বুঝি ঘোর অশান্তি শুরু হয়ে গেল! কিন্তু দেখা গেল সোমাইয়া গৌরাম্মাকে কোলে তুলে নিলেন, আদর করলেন, আশীর্বাদ ক’রে তার ছোট্ট দুই হাতের পাতা মন দিয়ে নিরীক্ষণ করলেন কিছুক্ষণ। আর তারপর চিক্কা রাজেন্দ্রর উদ্দেশ্যে তাঁর দিকে না তাকিয়ে বলে গেছিলেন, ‘এই মেয়েকে ঘরে রাখতে পারবি না তুই কোনমতেই। এই মেয়ে কালাপানি পার করবে, বিদেশে থাকবে এবং বিধর্মী হবে’। যেমন এসেছিলেন, তেমনই হঠাৎ চলে গেছিলেন তারপর। গৌরাম্মা যদিও এই সোমাইয়াকে কখনও চোখে দেখেনি জ্ঞানত। তবে সেদিন তাদের দোলের উৎসব ম্লান হয়ে গেছিল, এ কথা মাঝেমাঝে আলোচনা হতে শুনেছিল অনেকের মুখে।
লেনিন সেদিন গোপীর কাছে নিয়ে গেছিল কুপিল্লাকে। ওর চাকরির বন্দোবস্ত হয়ে গেল প্রায় এক কথায়। রূপকথার গল্পের মতো চাকরির সঙ্গে জুটলো থাকার আস্তানাও। যদিও ভাড়ার। কিন্তু লেনিনের বাসস্থান ছেড়ে যেতে হবে ভাবতেই কুপিল্লার বুক ভেঙে আসছিল। এতটাই কাছের হয়ে গেছিল সে…কিন্তু যেতে তো হবেই। এই গ্রাম ছেড়ে এবার শহুরে চাকুরীজীবী হতে হবে কুপিল্লাকে। বিদ্যাকে পেতে আর কোনো বাধা রইল না এবার। ডেরায় ফিরে লেনিন ঘোষণা করেছিল, ‘কুপিল্লা আর বিদ্যার বিয়ে এই গ্যারাজেই হবে। এখানেই ওদের বাসর, এখানেই ওদের ফুলশয্যা করিয়ে তবে আমার ছুটি’। গলাটা কেঁপে উঠেছিল শেষদিকে লেনিনের। গলা বুজে এসেছিল কুপিল্লারও। আনন্দে, উত্তেজনায়, আশঙ্কায়, আর বোধহয় কোন এক অনাস্বাদিত ভয়ে। বিদ্যা এবার ওর বউ হতে চলেছে…নতুন শহরে নতুন জীবনের রোমাঞ্চে সেরাতেও ওর ঘুম হল না।