কুপিল্লা ভাবছিল, তাহলে এই বৃটিশরা এসেই আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার নাম করে স্বাধীনতা কেড়ে নিল? নাকি রাজারাই নিজেদের সঁপে দিয়েছিলেন ওদের হাতে? যে কারণেই হোক না কেন, স্বাধীনতা বিসর্জন করা মোটেই যুক্তিযুক্ত কাজ হয়নি। অবশ্য অসহায় বা নিরুপায় হলে মানুষ যে কত কিছুই করতে বাধ্য হয়। এই এখন যেমন তার নিজেরও সেই একই অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। চেনা নেই, জানা নেই, এমন এক অজানা মেয়েকে বিয়ে করতে হবে, বাবার পছন্দ করা পাত্রীকে মেনে নিলেই জাতকূলের সম্মান থাকবে। আদপে তারাও তো কোরাগুরই বাসিন্দা। ব্রাহ্মণ বলে তো আর জন্ম হয় না কারুর। অব্রাহ্মণ বলেও। মানুষই নিজের নিজের অবস্থানকে চিহ্নিত করে নিজেদের স্বার্থে। তাই আজ বিদ্যাবতীকে সে বিয়ে করার কথা মুখেও আনতে পারছে না। ওকে বিয়ে করলে কুপিল্লার এই বাড়ি ছাড়তে হবে, ব্রাহ্মণ সমাজ তাকে অচ্ছুৎ করবে। বাবা রাগে, লজ্জায় মুখ দেখাতে পারবে না। মা তো কেঁদে কেঁদে অন্ধ হয়ে যাবে। মা’র কথা ভাবলেই সে অস্থির হয়ে পড়ে। মাকে দুঃখ দেওয়ার কথা ও ভাবতেই পারে না। সেদিক থেকে দেখলে তো বিদ্যা অনেক দূরের মানুষ। ওকে সেই মেয়ে পছন্দ করে কিনা তাও জানা নেই ঠিক করে। কুপিল্লাও কি বিদ্যাকে ভালবাসে? এখনও এর উত্তর তার নিজেরই অজানা।
স্যার রবার্ট অ্যাবারক্রম্বি তখন ভারতের বম্বের গভার্নর ও বম্বে আর্মির কম্যান্ডার হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন। এখন পুরো ভারতের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে দিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিশ্চিন্ত হতে চাইছিলেন। এবং কোম্পানি যে খুব একটা ভুল মানুষের ওপর ভরসা করেনি, সে অচিরেই প্রমাণিত হয়েছিল। ফলে এমন এক হস্তীর ডাক পেয়ে রাজারাজেন্দ্র বেশিদিন সময় নষ্ট করার কোন যুক্তি খুঁজে পাননি। তাঁর মনেও এক সুপ্ত বাসনা ছিল যে, টিপুর কবল থেকে নিস্তারের জন্য অ্যাবারক্রম্বির কাছে প্রার্থনা করবেন। তাঁর বুদ্ধিমত্তা তাঁকে এও জানান দিয়েছিল যে, অ্যাবারক্রম্বি বিনা কারণে বা বিনা উদ্দেশ্যে ওকে ডাকবেন না। টিপুর দৌরাত্ম্যে বৃটিশরাও কম নাজেহাল হচ্ছে না সম্প্রতি। ফলে কোরাগুর পক্ষে একটা সদর্থক উপায় ও পথ নিশ্চই বেরবে এই বৈঠকে। গুটিকয়েক রক্ষী পরিবৃত হয়ে তিনি পৌঁছলেন কুন্নুড়। আমবাত্তি পাহাড়ের এক বিশেষ স্থানে কোম্পানি অফিসার রবার্ট টেলর স্যার অ্যাব্রক্রম্বের তরফ থেকে তাঁকে সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে স্বাগতম জানান। বিনা অস্ত্রে তিনি মুখোমুখি হলেন স্যার রবার্ট অ্যাব্রক্রম্বির। অ্যাবারক্রম্বি তাঁকে সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়ে আলিঙ্গন করলেন। আপ্লুত হলেন রাজারাজেন্দ্র। সম্মান এমন এক বস্তু, যা এক যোগ্য বীরের হৃদয়বেত্তার তীব্রতা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। কোন সংশয় রইল না আর বীরা রাজেন্দ্রর। ১৭৯০ সালের ২৫শে অক্টোবর, বৃটিশদের সঙ্গে বীরা রাজেন্দ্রর এক চুক্তি সাক্ষরিত হয়ে গেল। যে চুক্তিতে দুপক্ষই আখেরে লাভবান হয়েছিল। এই চুক্তিতে বলা হয়েছিল, কোরাগুর সম্পূর্ণ সুরক্ষার দায়িত্ব নেবে বৃটিশরা। কোরাগু স্বাধীন রাজ্য হিসেবে রাজা বীরা রাজেন্দ্র পরিচালনা করবেন। টিপুর আক্রমণের বিরুদ্ধে বৃটিশরা কোরাগুকে সুরক্ষা দেবে। পরিবর্তে বীরা রাজেন্দ্রকে বৃটিশ সেনাদলের সঙ্গে টিপুর মোকাবিলায়, বৃটিশদের পক্ষে যুদ্ধ করতে হবে। বীরা রাজেন্দ্র এরপর সেই বন্ধুত্বপূর্ণ চুক্তির পরে আমবাত্তি পাহড়ের কোলে স্যার রবার্ট অ্যাবারক্রম্বির সঙ্গে সাক্ষাতস্থলের নামকরণ করেন বীরারাজেন্দ্রপেট।
এই চুক্তির পরে উল্লসিত রাজা ফিরে এলেন নিজের মুদ্দুকেরিতে। এরপর জয়যাত্রা ছাড়া আর কোন উৎসব ছিল না সমস্ত কোরাগুতে। এক বছর ধরে লাগাতার বৃটিশ সেনাদল ও বীরা রাজেন্দ্রর সম্মিলিত আক্রমণে টিপু মুদ্দুকেরির প্রাসাদ ছেড়ে চলে যান। ১৭৯১ সালেই পুরো কোরাগু এবার বীরা রাজেন্দ্রর হাতে চলে আসে। কোরাবারাও বৃটিশদের পক্ষে তাদের সমর্থন জানিয়ে এসেছিল এক ভাবে। টিপুর বিরুদ্ধে তারা লড়াই করে গেছে। মুদ্দুকেরি প্রাসাদ! তাঁর সাধের, তাঁর বংশের একমাত্র গৌরব এই প্রাসাদ। তাঁর উত্তরপুরুষ মুদ্দু রাজার শখের প্রাসাদ। কিন্তু এই প্রাসাদকে রাজেন্দ্র চিনতে পারছেন না এখন। এ কোন প্রাসাদে এলেন তিনি! সেই আগেকার গঠনের অনেকটাই বদলে দিয়েছেন টিপু। মুসলমান স্থাপত্যের রীতি অনুযায়ী গোল গোল আর্চ, খিলান, গম্বুজ দেওয়া বারান্দা…এ কোন প্রাসাদ ফিরে পেলেন তিনি! যদিও এ কথা অনস্বীকার্য যে, আগেকার প্রাসাদের বয়স হয়েছিল, ভেঙে পড়ছিল অনেক অংশ। সারাই করার প্রয়োজনীয়তা যে ছিল না, তাও নয়। কিন্তু এমন ভাবে আমূল বদলে দিতে হবে সবকিছু? টিপু কি ভেবেছিলেন আজন্ম এখানেই কাটিয়ে দেবেন? অধিকারবোধ থেকে মানুষ কত কী যে সিদ্ধান্ত নেয়! তাছাড়া নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন, সেও একপ্রকার কারণ বৈকি এই ভোলবদলের। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়লেন রাজেন্দ্র। হাহাকার করে উঠল যেন সমস্ত প্রাসাদের গম্বুজের হাওয়া। এই প্রাসাদে থাকতে মন সায় দেয়নি সেই থেকে রাজার। সেই থেকে ভাবনা শুরু হয় নতুন প্রাসাদের। আর তারই ফসল নালকনাড়ু।
কুপিল্লা একবার নালকনাড়ু প্রাসাদ দেখতে গেছিল। ঘন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে সরু পথ। দিনের বেলাই আঁধার ঘনিয়ে আছে সেই পথে। পদে পদে জঙ্গলি জানোয়ারের ভয়। ওরা সেবার ক’জন বন্ধু মিলে একটা ছোট গাড়ি ভাড়া করে সেই প্রাসাদ দেখতে গেছিল। ভেবেছিল খুব হুল্লোড় করবে। কিন্তু জঙ্গলের কাঁচা, সরু পথে এসে আপনাআপনিই নিজেরা চুপ করে গেছিল। গা ছমছম করছিল এক অজানা ভয়ে। যদিও ওরা জানত, নালকনাড়ু প্রাসাদ দেখতে অনেকেই যায় এখন, দেশ, বিদেশ থেকে টুরিস্ট আসে। হয়ত এই কাঁচা রাস্তাও কিছুদিন বাদে পাকা করে দেবে সরকার। তবে যাই হোক না কেন, ওই প্রাসাদে গিয়ে ওদের মনে এক অদ্ভুত শান্তি এসেছিল। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দোতলা লাল টালি ছাওয়া, টানা বারান্দা দেওয়া সারি সারি ঘর—মাটিতে পা দিলেই শান্ত হয়ে আসে মন। ওদের মতো অল্প বয়সীরাও চ্যাঁচামেচি করতে ভুলে গেছিল সেদিন। ওখানে গিয়ে কুপিল্লা নিজেকে বীরারাজেন্দ্রর জায়গায় বসিয়ে দিয়েছিল মনে মনে। যেন ওরই প্রাসাদ। আর ঘরের ভেতর থেকে এখুনি হাস্য, লাস্য আর ব্রীড়া নিয়ে বেরিয়ে আসবে তার রানী, বিদ্যাবতী! এই মেয়েটাকে সে কিছুতেই মন থেকে তাড়াতে পারছে না। যেখানেই যাক, সে বেড়াতেই হোক, কাজের মধ্যেই হোক বা ভিড়ে—বিদ্যা এসে যেন ওকে ছুঁয়ে দিয়ে যায়। কী আছে ওর ভেতরে কে জানে! আনমনা হয়ে রইল কুপিল্লা কিছুক্ষণ।
১৭৯২ সালে লর্ড কর্নওয়ালিস, যিনি তখনকার ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন, টিপুকে একেবারে শ্রীরঙ্গপত্তনামে ফেরত পাঠিয়ে দেন। এরপর আবার একবার স্যার অ্যাবারক্রম্বির সঙ্গে রাজেন্দ্রপেটে বীরা রাজেন্দ্রর সাক্ষাৎ হয়। সেই সময়ে, ১৭৯৩ সালে স্যার অ্যাবারক্রম্বি ভারতের কম্যান্ডার ইন চিফ নিযুক্ত হয়েছেন। ফলে রাজা রাজেন্দ্রর মনে একপ্রকার উদ্বেগের জন্ম হচ্ছিল। রাজা ভাবছিলেন, সেই আগের মতো কি স্যার তাঁকে অভ্যর্থনা জানাবেন? যে রাজেন্দ্রপেটে বৃটিশদের থাকার এলাহি ব্যবস্থা তিনি করে দিয়েছিলেন, তাঁর নামাঙ্কিত সেই নিজস্ব নগরী কি আর তাঁকে আগের মতো মান দেবে? হয়ত স্যার এবার আগের চুক্তি ভেঙে দিতে চাইছেন…হয়ত তাই আবার ইত্তেলা পাঠিয়েছেন! এইসব ভাবনা রাজেন্দ্রকে চিন্তান্বিত করে তুলছিল। রাজা এখন বিবাহ করেছেন, নালকনাড়ু প্রাসাদ এখনকার বাসস্থান তাঁর। ফলে, সময় অনেকটা বদলেছে। টিপুকে তাড়ানো গেছে, মুদ্দুকেরিও তাঁর আয়ত্বে, তবে কেন আবার নতুন করে স্যার ডেকে পাঠালেন তাঁকে! কিন্তু আর যাই হোক, এই ডাকে সাড়া না দিয়ে কোন উপায় নেই রাজার। এত বড় পদাধিকারী তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছেন সম্মানের সঙ্গে, যেহেতু তাঁরা আগে থেকেই চুক্তিবদ্ধ, তাই যেতে তাঁকে হবেই। মহাদেবাম্মা রাজেন্দ্রকে চিন্তিত দেখে কারণ জিজ্ঞেস করলেন। রাজেন্দ্র তাঁকে এড়িয়ে যেতে চাইছিলেন প্রথমটায়। ভাবছিলেন, রানীকে কেন আবার এইসব রাজনীতির পরিসরে জড়াই! কিন্ত তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমতী রানী রাজা রাজেন্দ্রকে এমনভাবে সওয়াল করতে শুরু করলেন যে, রাজেন্দ্র হার মানলেন। রাতে খাবারের পর তাঁরা গুছিয়ে বসলেন বারান্দায় মাদুর পেতে। তাকিয়ায় ঠেসান দিয়ে রাজেন্দ্র এবার বলে চললেন একে একে তাঁর কথা। কোরাগুর কোরাবাদের কথা আর ইতিহাস। নিজের জীবনের সবটুকু খেদ, হতাশা, দুঃখ, বঞ্চনা—সমস্ত উজাড় করে দিলেন রানীর কাছে। সেদিন থেকে মহাদেবাম্মা হলেন রাজেন্দ্রর সবথেকে প্রিয় বন্ধু, সবথেকে আপনার মানুষ, যাঁকে শেষদিন পর্যন্ত রাজেন্দ্র ভরসা করেছিলেন, নির্ভর করেছিলেন যাঁর ওপর। কিন্তু রাজেন্দ্রর ভাগ্য অবশ্য তত সহায় হয়নি শেষ পর্যন্ত।
রাজেন্দ্র বলতে শুরু করলেন রাজকাহিনি। ‘পালেরি সাম্রাজ্যের প্রথম রাজা ছিলেন বীরা রাজা। তাঁর নাতি প্রথম মুদ্দু রাজা ছিলেন খুবই জনপ্রিয়, পঞ্চাশ বছর সময় ধরে তিনি রাজত্ব করেছেন, তিনিই মুদ্দুকেরিতে কোরাগুর রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। এই ঘটনা নিশ্চই তুমি জান’। রানী সায় দিলেন ঘাড় নেড়ে। ‘এরপর প্রথম লিঙ্গরাজা অর্থাৎ আমার পিতা রাজত্ব সামলাতে থাকেন। কিন্তু ১৭৮০ সালে পিতার মৃত্যু হয় হঠাতই। তখন আমরা তিন ভাই, আমি, লিঙ্গ রাজেন্দ্র আর আপ্পান্না, খুবই ছোট। বোঝার মতো বয়স বা রাজ্য শাসনের মতো ক্ষমতা আমাদের কারুরই ছিল না। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হায়দার আলী কোরাগু দখল করলেন। আর আমাদের বন্দি করে পাঠিয়ে দিলেন গোরুর কেল্লায়। এই মুদ্দুকেরিতে তখন হায়দার আলীর সেনা মোতায়েন হয়েছে। আর সবথেকে বড় দুঃখের কথা কী আর বলি তোমায়…’ রানী তখন দুচোখে বিস্ময় আর দুঃখ নিয়ে উৎসুক মুখে রাজার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। রাজেন্দ্র একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে আবার বলতে শুরু করলেন। ‘আমাদের অধীনে এক আমলদার ছিল। সুব্বারাসাইয়া। বেইমানের বাচ্চা ছিল সে। পুরো কোরাগু জাতির কলঙ্ক। সেই আমাদের বিপক্ষে গিয়ে হায়দার আলীর চর হয়ে কাজ করছিল তলে তলে। আমাদের পিতা সে খবর রাখেননি। সেই বেইমান এবার কোরাগুতে সেনাধক্ষ্য সেজে বসল। এই রকম ভাবে কেটে গেল প্রায় দুবছর। কোরাবাদের মধ্যে অসন্তোষ জমা হচ্ছিল হায়দারের বিপক্ষে। একে তো রাজপরিবারের পুত্রদের তিনি নিয়ে চলে গেছিলেন, যদিও ওরা কোরাবাদের প্রাথমিক ভাবে বুঝিয়েছিল যে, রাজপুত্রদের যোগ্য সম্মানের সঙ্গেই তিনি লালন পালন করবেন, রক্ষা করবেন। ফলে প্রথম দিকে একান্ত বাধ্য হয়ে কোরাবারা হায়দর আলীর শাসন মেনে নিয়েছিল। কিন্তু অসন্তোষ তীব্রতা পেল কখন জান?’ রানী প্রশ্ন করলেন, ‘কখন, কখন? আর হায়দার আলী তোমাদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতেন গোরুর কেল্লায়?’ রাজেন্দ্র রানীর গালে মৃদু চুম্বন করলেন। ঘন হয়ে বসলেন আরও রানী। একহাতে রানীকে বেস্টন করে রাজেন্দ্র বললেন, ‘আমরা ছিলাম বৈশ্য। শিবের উপাসক। এখনও তাই আছি। আমরা ছিলাম স্বাধীন, যোদ্ধার জাতি, এখনও তাই আছি। হায়দার আলী আমাদের কিছু লোককে যখন জোর করে মুসলমান ধর্মে দীক্ষিত করতে শুরু করলেন, তখনই ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল আমাদের। ওই যে বললাম, আদপে আমরা যোদ্ধার জাত। চাপা অঙ্গার দাউদাউ করে জ্বলে ওঠার সুযোগও এসে গেল একসময়ে। হায়দার আলী বৃটিশদের সঙ্গে যুদ্ধে মেতে উঠলেন, ফলে কোরাবা থেকে সেনা সরিয়ে নিলেন সাময়িক ভাবে। আর সেই সুযোগ হাতছাড়া করল না কোরাবারা’। ‘কীভাবে কীভাবে?’ রানীর প্রশ্নের উত্তরে রাজেন্দ্র হাসলেন। ‘যে কজন সেনা ছিল মুদ্দুকেরি প্রাসাদে, কোরাবারা একজোট হয়ে একরাতে তাদের তাড়িয়ে দিল মেরেধরে। আবার তারা দখল নিল নিজেদের রাজ্যের। নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করে নিজেরাই রাজ্য চালাতে শুরু করল’। ‘আর তোমাদের কী হল?’ ‘আমাদের ছাড়িয়ে আনতে ওরা পারেনি সেসময়ে। গোরুর কেল্লার কড়া সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু ওরাও জানত না, বীরা রাজারাজেন্দ্রকে বেঁধে রাখার মতো দুর্গ তৈরি হয়নি আসলে’।
রাতে শুয়ে কুপিল্লার ঘুম আসছিল না। ভাবছিল, আগস্ট মাস শেষ হতে চলল প্রায়। কাইলপোলড়ু’র সময় চলে এল। এই একটা সময়ে অন্তত জাতপাতের ভেদাভেদ মানে না ওরা। নিশ্চই সেই সময়ে বিদ্যাবতীকে দেখতে পাবে ও। কথা বলা যাবে মন খুলে। আশায় আশায় ওর আরও অস্থিরতা বেড়ে গেল সে’রাতে। তেসরা সেপ্টেম্বরে একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে ওকে।