• Uncategorized
  • 0

কত কথায় পায়েল চ্যাটার্জী

কর্মক্ষেত্র- আকাশবানী কলকাতা শখ- লেখালিখি, বইপড়া, গীটার বাজানো, ছবি তোলা।

ইম্পারফেকশন ইজ বিউটি

১লা জুন, ১৯২৬। ২৬ বছরের গ্ল্যাডিস বেকার। মা। সঙ্গে জীবন্ত ছোট্ট পুতুল, বয়স দু সপ্তাহ। প্রতিপালনের ক্ষমতা নেই। মাতৃত্ব ভীতি। পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন। ছোট্ট মেয়েটির ঠাঁই হলো ক্যালিফোর্নিয়ার একটি হোমে। নরমা জিন বেকারকে হোমে মাঝে মাঝে দেখতে আসত তার দিদা ডেলা মনরো। দিদার আহ্লাদী। মাও আসত মাঝে মাঝে। কিন্তু কেমন যেন পথ ভুলে আসার মত। সে আসায় আশা ছিল না। হোমে দিদার অপেক্ষা করত‌ সে।তার “পথ চাওয়াতেই আনন্দ’।’ কিন্তু সে দিন শেষ হলো। দিদাকে কিছু কাজে ক্যালিফোর্নিয়া ত্যাগ করতে হলো। মা তখনও আসতো। তবে মেয়েকে দেখেও উদাসীন থাকতো। মেয়ে বুঝতো। মেয়ের মনের গভীরে জমতে থাকল ক্ষত। সাত বছর বয়সে যৌন নিপীড়নের শিকার হল। এগারো বছর বয়সে ধর্ষণের। তখন বয়েজ লকার রুম ছিল না। হোমের আনাচ-কানাচ গুলো সাক্ষী ছিল হয়তো।পনের বছর বয়সে স্কুল ড্রপআউট। ক্ষতগুলো জমতে জমতে দগদগে ঘায়ে রূপান্তরিত হয়েছে। মা আর আসেনা। প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ শুরু হয়েছে মায়ের। হোম ছেড়ে মেয়েটি আশ্রয় নিয়েছিল মায়ের এক বান্ধবীর বাড়ি। মা টাকা পাঠাতো তাকে। এভাবেই নিপীড়িত শৈশব, ধর্ষিত মেয়েবেলা নিয়ে নরমা জিন বেকার হয়ে উঠেছিল মেরিলিন মনরো। দ্য ব্লন্ড বম্বশেল।
মনরোর আশ্রয়দাতার বাড়ির পাশেই থাকতো সেই সুদর্শন ছেলেটা। মনরো তখনও নরমা জিন বেকার। ষোড়শী। নিরাপত্তাহীন। পাশের বাড়ির ছেলেটা তাকাতো ছাদে উঠলেই। বছর কুড়ি বয়স, সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানো ব্যবসায়ী ছেলেটা। একদিন এসেছিল ছেলেটা। কেউ বাড়ি ছিল না সেদিন। উথাল -পাথাল প্রেম, একটু আদর। আদর ব্যাপারটা এরকম হয়। দিদার আদরের মত নয়। বেশ মিষ্টি লেগেছিল ষোলো বছরের মেয়েটার। অতএব বিয়ে। ষোলো বছরেই। মেয়েটা স্বপ্ন দেখতো অভিনেত্রী হওয়ার। স্বামী বাইরে, একাকীত্ব। যদিও একাকীত্ব তার কাছে নতুন কিছুই নয়। অস্ত্রশস্ত্র তৈরীর কারখানায় কাজ করতো মেয়েটা। এক ফটোগ্রাফার এসেছিল কারখানায় ছবি তুলতে। নজরে পড়লো নরমা জিন বেকার। ১৯৪২ সালে সেই ফটোগ্রাফারের সঙ্গে প্রথম মডেলিংয়ের কন্ট্রাক্ট। নতুন সাজ, নতুন রূপ,নতুন নাম। ব্লন্ড রঙের চুল। জিন বেকার থেকে মেরিলিন মনরো। শুরুটা অতটা ভাল ছিলনা। তারপর!”Give a girl the right pair of shoes and she will conquer the world”! মনরো সেই জুতো পেয়েছিল। গুপিগাইন বাঘাবাইন এর সেই ম্যাজিক জুতোর মত। ব্রেদি ভয়েজ । Hourglass figure । তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে উঠেছিল মনরোর কেরিয়ার। পিছনে পড়ে থাকল প্রথম স্বামীর সঙ্গে সংসার, অস্ত্রশস্ত্রের কারখানা, ছোট্ট বাড়ি ,সেই আদর সবকিছু।

১৯৫০ সালে প্রথম ছবি “Asphalt Jungle” , তারপর “All about Eve”, “Niagara”, “Gentleman prefer blondes” ইত্যাদি। আরো অনেক ছবি। সেক্স সিম্বল হয়ে ওঠা। গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড। কিন্তু মনরোর ভিতর ঝড়টা শুরু হয়ে গেছে তখন। বড্ড মেটিরিয়ালিস্টিক ফিল হত। “A sex symbol becomes a thing, I hate being a thing”। এদিকে ভেতরের ঝড়টা তখনও চলছে। লক্ষ লক্ষ এডমায়ারার ,অটোগ্রাফ সংগ্রহকারীদের ভিড়। অনেক পুরুষের কাঙ্খিত স্বপ্ন সুন্দরী তখন একা হয়ে যাচ্ছে। এরই মাঝে নতুন সম্পর্ক, জটিলতা। বেসবল প্লেয়ার জো ডি ম্যাগিওর সঙ্গে বিয়ে। সংসারের মতন কিছু একটা হয়েছিল। এদিকে মনরোর তখন প্রি পারফরমেন্স এ্যাংজাইটি শুরু হয়েছে। ফিল্ম সেটে ট্যানট্রাম। ভেতরের চিৎকারটা আর্তনাদে রূপান্তরিত হয়েছিল। তখন জীবনে এলো নাট্যকার আর্থার মিলার। বিয়েটা টিকে ছিল বেশ কয়েকবছর। তারপর এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি ,দুবার মিসক্যারেজ। সম্পর্কের মধ্যে পাথরগুলো জমতে শুরু করল। ভালোবাসা টালোবাসা আর নেই। আদৌ কি ছিল কখনও? একমঅদ্বিতীয়ম। মেরিলিনের আশেপাশে মৌমাছির ভিড় কিন্তু লেগেই থাকত। ফুল তখন ডিপ্রেশনের ভারে নুইয়ে পড়ছে। একের পর এক ফিল্ম কন্ট্রাক্ট বাতিল হয়ে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির সঙ্গে তার সম্পর্কের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু ব্লন্ড সুন্দরীর‌ আত্মা তখন ক্ষতবিক্ষত। “Hollywood is a place where they’ll pay you a thousand dollars for a kiss and fifty cents for your soul.” অভিনয়টা তবে প্যাশন ছিলো তাঁর। তাই কেরিয়ারের আসমানী রং ছুঁয়েও কিংবদন্তি অভিনেতা স্টুডিওতে অভিনয় শিখতে গিয়েছিল। কিন্তু ভেতরের অসুখটা বাড়ছে মায়ের মত। মা তখন মানসিক হাসপাতালে। কেরিয়ারের সিঁড়িটা ও নিচের দিকে নামছে। আর জীবনটা অন্ধকারের দিকে। ২০০ মিলিয়ন ডলার রোজগার করা মেরিলিনের কোন নিজের বাড়ি ছিল না। থাকার জায়গাগুলো শুধুই একেকটা ঘর। সেই ঘরে অবসাদগ্রস্ত মেরিলিন। দেওয়াল জুড়ে গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের আঁকিবুকি। কিন্তু ইঁট, কাঠ, পাথরে শুধুই শূন্যতা। ঘুম আসত না। ৩৬ বছর বয়সেই ইনসম্নিয়া। তারপর ঘুম এলো। অনেকগুলো স্লিপিং পিল একসঙ্গে। একটা ঘুম ,শান্তির ঘুম। ব্লন্ড রং এর চুল আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে গেল। একাকীত্ব, উদ্দাম জীবন, অনেক সম্পর্ক সব মিলিয়ে গেল একটা বিন্দুতে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।