আজ ২৬ শে মার্চ ২০২০। এখন সময় প্রায় ৬ টা । আরো একটা আতঙ্কের দিন চোখ মেললো জানলার বাইরে । যদিও বাইরের আকাশ শিশুর মুখের মত নির্মল আর মৃত্যভয়হীন । পাশের মানুষটির ঘুমন্ত চোখের মণি চঞ্চল । এবারে জেগে উঠবে । ফ্রেশ হয়ে চায়ের জল চাপালাম। পাতা ভিজে উঠতেই অদ্ভূত এক আলোর মত সোনালি রং। এই রংটা রিল্যাক্সিং । ফেলে আসা আরো সব সকালকে বেঁধে দেয় আনন্দ ছন্দে। যেন পৃথিবীর কোথাও কোনো সঙ্কট নেই। মহামারী অতিমারী কিচ্ছুটি নেই । বটের পাতার মত চিকন জীবন।
সকাল হলেই এক মহাচিন্তা , কি খেতে দেব ? আজ সকালে পাঁউরুটি , দুপুরে খিঁচুড়ি__ এই ঠিক করলাম । অনেকগুলো ডিম আছে বাড়িতে । খুব হিসেব করে দিন চালাচ্ছি ।
আমার জানলার পাশে হাফ_কনস্ট্রাকটেড একটা বাড়িতে বাস করে একটা বাচ্চা কুকুর । সে আমার জানলাতুতো পোষ্য , নাম ভুলকি। তাকেও সকাল বিকাল বিস্কুট আর রুটি, পাউরুটি দিই। ওকেও তো বাঁচিয়ে রাখতে হবে । আমাদের তো চলে যাবে তবুও কিন্তু যারা রোজ আনলে তবে খেতে পায় , কি হবে তাদের ? তাদের পেটের আগুন আমায় বড্ড পোড়াচ্ছে গো । শান্তি নেই । স্বস্তি নেই । শুনছি সরকার থেকে তাদের দুটো ভাতের বন্দোবস্ত হচ্ছে । বিত্তশালী মানুষেরা অর্থ সাহায্য দিচ্ছেন । সাধারন মানুষেরাও যাতে সাধ্যমত কন্ট্রিবিউট করতে পারে এমন একটি তহবিল খোলা হোক । সময়ের নৌকায় এভাবেই ভেসে থাকুক জীবন। তবে এই মুহূর্তে শারীরিকভাবে ঘরে বন্দি থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখাটাও কিন্তু দেশ সেবা।
বাইরে হাঁটা বন্ধ। নিজের ভেতর হেঁটে যাই কয়েক কদম। আজ নাসরিণের কথা মনে পড়ছে খুব।এই পরিস্থিতিতে তার, হেল্পলেসনেস_হোপলেসনেস_ওয়র্থলেসনেসের নেগেটিভ ট্রায়াড আরো নিবিড় করে জাপটে ধরেছে নিশ্চিত।
ষোলো বছরের সামিম হসপিটালে আসত কাউন্সেলিং করাতে । ইদানিং কথায় কথায় ভারি রেগে ওঠে সে । হাতের কাছে যা পায় ছুঁড়ে দেয় । আজও হয়ত বেরিয়ে গিয়েছে সেই পোড়ো মন্দিরের পিছনের ঠেক এ ।
জয়ন্ত জানিয়েছে , গত সপ্তাহে সে পুরী গিয়েছিল ।থটরিউমিনেশন বেড়ে গেছে তার । একই কথা বারবার বলে । উদ্বেগের সার্কিট ব্রেক হয়না কোনোমতে ।
সুমনা কি এখনো বিশ্বাস করে , সেই টোটকায় ? এখনো কি স্নানের জল শোধন করতে বালতিতে ফেলে রাখে পুরনো চাবির গোছা ?তা না হলে, জল নাকি তার মাথা ফুটো করে দেবে । সুমনা কি ওষুধ খাচ্ছে নিয়মিত?
আমি মনেমনে ছুঁয়ে থাকি ওদের । বলি , ভাল থাক ওরা । বাড়ির ভিতর নিজের মত থাকতে দিও ওদের । অকারণ উত্যক্ত কোরোনা।জানি না এই করোণা পরিস্থিতি আরো কত মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষের ট্রিগারিং ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে ।
ভীষণ উৎকন্ঠা হচ্ছে দেশবিদেশে ছড়িয়ে থাকা আত্মীয় বন্ধুদের জন্যে । প্রার্থনা করি , সকলেই ভাল থাকুক , নিরাপদে থাকুক । আর আমার পশ্চিমের বারান্দায় বাসাবাঁধা ঘুঘু পাখিটার মতই আমিও , দাঁতে দাঁত চেপে তা দিয়ে যাই আমার ছোট্ট সংসারটিতে ।।