যশোবন্ত বসু,বাঁকুড়া শহরে বসবাস, সাহিত্যের ছাত্র, পেশা শিক্ষকতা। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে জেলা ও রাজ্যের কিছু পত্রপত্রিকায় লেখালিখি শুরু। ভালোবাসার বিষয় কবিতা ও রম্যরচনা। কবিতার পাশাপাশি স্যাটায়ারধর্মী লেখাতেও সমান আগ্রহ। কবিতা ও মননশীল প্রবন্ধের আগ্রহী পাঠক। ভণ্ডামি ও কপটতাহীন জীবনযাপনে বিশ্বাসী।
বাংলার শ্রী
শিল্পের রকমফের আছে, শিল্পীরও। সব শিল্প সবার জন্য নয়। মেরুদণ্ড শক্ত হলে পাদপদ্মে মাথা ঝোঁকানো বেশ কঠিন কাজ। তার জন্য নরম শিরদাঁড়া চাই। আভূমি আনত হওয়ার দক্ষতা সকলের থাকে না। তার জন্য বিশিষ্টজন হতে হয়। সান্ধ্য পর্দায় আসর জমিয়ে তুলতে সুযোগদাত্রীর গুণকীর্তন করা চাই ঠিক সুরে-তালে। তবেই তো লক্ষ্মীর কৃপালাভ হবে, অ্যাকাডেমির গুরুত্বপূর্ণ পদ, সম্মান, সাম্মানিক, বিদেশ-ভ্রমণ, বিভিন্ন কমিটির মাথায় আসন অলংকৃত করে থাকা। সেসবের বাইরে যে-অবসর, তাতে কাক-চড়াই আঁকুন, মণিপুর, আসাম, গুজরাট, ফুল্লরা, কালকেতু নিয়ে কবিতা লিখুন, মহাভারতের অজানা ব্যাখ্যা শোনান, কে বারণ করেছে ?
মোটের ওপর পিঠ ঝোঁকাতে জানার এলেম থাকলেই সিদ্ধিলাভ। মন্দ লোক স্তাবকতা বলছে তো কী হয়েছে ? হিংসায় লোকে অমন অনেক কিছুই বলে ! আর এই আপেক্ষিকতাবাদের দুনিয়ায় একজনের বিচারে যা স্তাবকতা, অন্যের কাছে তা হল আনুগত্য। অনুষ্ঠান মঞ্চে পারিষদাসনের কনফার্মড্ টিকিট, থুড়ি, আমন্ত্রণ পত্র।
বুদ্ধিজীবী হতে গেলে ইন্টেলেকচুয়াল ব্যাকগ্রাউন্ড লাগে, লাগে নিখুঁত ন্যাকামি। মহাত্মা গাঁধিকে পকেটে পুরে অহিংসার বার্তা দিন, মানুষকে শান্তিপূর্ণ থাকতে বলুন। তারপরেও যদি আগুন জ্বলে, তাতে আপনার কী ? আপনি বিশিষ্টজন, আপনাকে তো আর হতভাগ্য নাগরিকদের মতন বাসে-ট্রেনে চাপতে হচ্ছে না, আপনি একটু বেশি রাতে ড্রাইভারকে ফোন করে ডেকে নিন, তারপর গাড়ি বের করে চাঁইবাসা চলে যান। আদিবাসী রমণীর কথা লিখুন কবিতায়। গোলমাল মিটলে ফিরে আসুন, কবিতা সংকলনটি উৎসর্গ করুন ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটিতে পোস্ট-ডক্ করা সেই সুন্দরী যুবতীকে, যিনি ম্যানহাটনের অ্যাপার্টমেন্টের তেইশতলার বারান্দায় রাত দুটোয় মুখোমুখি বসে ব্লাডি মেরি খাইয়েছিলেন। নিজের বুকে টোকা মেরে বলেছিলেন, আপনার কবিতা তাঁর ঠিক ওইখানে এসে ধাক্কা মারে !
তবে কিনা গরিবের একখান কথা আছে। দু-চারটে বাইটে বা দু-চারবার মিছিলে-হাঁটায় যেমন বদলে যায় না দিন, তেমনই আগুনেরও কোনও ভরসা নেই। সংগঠিত নাশকতা তোয়াক্কা করে না সাহিত্য-সংস্কৃতির সুললিত মর্মবাণী। যদি স্বার্থের ঊর্ধ্বে গলা তুলে সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে না পারেন, আগুন আরও ওপরে উঠে হাত বাড়াতেই পারে গজদন্তমিনারের দিকে। সেই শিখা বড় সুখের হবে না !