“আমি ও রবীন্দ্রনাথ” বিশেষ সংখ্যায় শ্রীতমা রুদ্র
স্মৃতিতে রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথ আমার কাছে কি তা বলতে গেলে শেষ করা সম্ভাব না, আজ সেখানথেকেই কিছু স্মৃতিচারণ করি নিজের ভালােবাসার ছােট্ট একটা অংশ ভাগ করে নি সবার সাথে।গুরুদেবের আশ্রমে পড়াশুনাে করার সুবাদে গুরুদেবকে বুঝেছিলাম সেই ছােটোবেলা তেই সেটা গানের হাত ধরেই মনে পরে সবার আগে আনন্দ পাঠশালার প্রার্থণার গান ‘আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া’, তখন কি আর মানে বুঝে গেয়ে উঠেছি তখন বন্ধুদের সাথে গলা মিলিয়ে কে বেশি জোর গলায় গাইতে পারি তারই না বলা প্রতিযােগিতা হতাে রােজ কিন্তু তাও মনের মধ্যে কোথাও তিনি ঠিকই ছিলেন মনে পরে কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা’ শুনতে শুনতে সত্যিই বােধহয় তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে গেছি বহুবার গানের হাত ভালাে করে ধরতে না ধরতেই সময় হয়ে গেছিলাে বড়ো হবার প্রথম পদক্ষেপে পা দেবার আর এবার সেই পড়া পড়া খেলার জগতেই খুঁজে পাওয়া তাঁকে, আমাদের পড়াশুনােয় রবীন্দ্রনাথ সবসময় ছিলেন সব সময় তাঁকে হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে ফেলেছি।সহজপাঠের হাত ধরেই আমাদের হাতেখড়ি বলা যায়,
‘ছােটখােকা বলে অ আ
শেখেনি সে কথা কওআ ‘
এই দিয়েই তাে শুরু জীবনের মূলপাঠ।
এবার আসি প্রকৃতির কথায়, রবীন্দ্রনাথ ও প্রকৃতির সম্পর্ক কতােটা কাছের সেটা আর বলে দিতে। হয়না।পাঠভবনের ছাত্রী হওয়ায় প্রকৃতির কোলেই বড়াে হয়ে ওঠা আমাদের।আমার প্রিয় ঋতু বর্ষা,বৃষ্টি ভেজা সোঁদা মাটির গন্ধ মেখে গাছের তলায় ক্লাস করতে করতে কতােবার হারিয়ে গেছি ওই দূরে যেখানে ভেজা হলুদ পাঞ্জাবি পরা ছেলের দল নিজেদের মধ্যেই ব্যস্ত ফুটবল খেলায় তবে সত্যি বলতে মাষ্টারমশাইরা বুঝতেন আমাদের বারবার ওনারাই উৎসাহ দিয়েছেন সাহিত্যসভায় অংশ গ্রহণ করতে যেখানে ওই হারিয়ে যাবার কথাই ফুটে উঠবে হয়তাে বা গানে,নাচে বা কবিতায়,এই সাহিত্যসভা কিন্তু গুরুদেবরেই সৃষ্টি উনি সভাপতি হয়ে বসতেন মধ্যমনি হযে আর ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের পারদর্শীতা নাচ,গান,পাঠের মাধ্যমে উপস্থাপনা করতাে গুরুদেবকে সাক্ষী রেখোকতাে নাটক অভিনয় হযেছে কখনও কখনও তিনি নিজেই করেছেন অভিনয় ,আর আমরা তাঁর লেখার পাত্রপাত্রী হয়েই কাটিয়ে দিলাম জীবনের বেশিরভাগটা।
রবীন্দ্রনাথ শুধু পড়াশুনাের বন্ধনেই আবদ্ধ রাখতে চাননি ছাত্রছাত্রী দের তাই ছােট থেকেই পারিপার্শ্বিক বিষয় ও শিখতে হয়েছে আমাদের।আমি নাচতে ভালােবাসি ছােটোবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথের গানেই সেই নাচ,তাতে আমি নিজেকে খুঁজে পেয়েছি বারবার , গত বছর দিল্লি গিয়ে সেই নাচ করেছি যা আমার মনের মাঝে লুকিয়ে আছে ওরা গানের মানে বােঝেনি নাচের ধরণও অচেনা তাও কি মুগ্ধ ভাবে দেখলাে বারবার এসে ভালােলাগা জানিয়ে গেলাে এসবই তাে আমি পেয়েছি তাঁর আশ্রমকন্যা হিসেবে, শিখতে হয়নি কোনােদিন জোর করে ,আপন মনেই ভালােবেসে ফেলেছি কখন কে জানে।
লেখার শেষ দিকে এসে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য নিয়ে বলা না হলে লেখা শেষ হয়না।আমাদের বাংলা ভাষার। ক্লাসে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সবসময় হাত ধরে আচ্ছা একজন মানুষ এভাবে লিখতে পারেন সব বয়সি পাঠকের জন্য? বড়াে হবার প্রত্যেক ক্ষেত্রে ঠিক পাশেই ছিলেন তিনি,মনখারাপের রাতে কিংবা গ্রীষ্মের দুপুর চোখবুজলেই পেয়েছি তাঁর সঙ্গ।
গল্পগুচ্ছ আমার খুব পছন্দের পরবর্তীকালে কলেজের পাঠেও পেযেছি ছােটোবেলা থেকে চেনা সেই সব চরিত্রের স্বাদ। উচ্চমাধ্যমিকের পরে আমি জাপানি ভাষা নিয়ে পড়াশুনাে এগিয়ে নিয়ে যাই তখনই রবীন্দ্রনাথের জাপান যাত্রা এবং জাপান সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের ভালােলাগার গভীরে যাবার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। ওই যে প্রথমেই বলেছি ওই মানুষটিকে বাদ দিয়ে একপাও হাঁটার উপায় নেই বারবার তিনি ফিরে আসবেন, তিনি বেঁচে থাকবেন আমরা বারবার গেয়ে উঠবাে তাঁরই গান –
‘আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে
তাই হেরি তায় সকল খানে৷৷’