আমাদের দেশে এক মহৎ কবি গোরা উপন্যাসে এক অসাৎধারণ মাতৃচরিত্র সৃজন করেছেন। গোরা উপন্যাসে আমরা কৃষ্ণদয়ালবাবুর দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী হিসেবে আনন্দময়ীকে দেখতে পাই। আনন্দময়ীর বাবা মা জীবিত ছিলেন না। তিনি ছোটো থেকেই বিশিষ্ট সংস্কৃত পণ্ডিত পরম গুরুজনের কাছে কাশীতে মানুষ হয়েছিলেন। কাশীর সংস্কৃত পণ্ডিতের আশ্রয়ে রুচি ও সংস্কৃতির অভাব ছিল না। আর ছিল ঘরোয়া শিক্ষা। মার্জিত ভদ্র সুস্থ মনের চর্চা। পণ্ডিতের ছাত্রদের কাছে বালিকাবয়সী আনন্দময়ী সুপ্রচুর স্নেহ ভালবাসার পরিবেশ পেয়েছেন। এই স্নেহপূর্ণ পরিবেশ আনন্দময়ীর ব্যক্তিত্ব সৃজনে ও পরিস্ফুটনে সদর্থক ভূমিকা পালন করেছিল। আনন্দময়ীর স্বামী কৃষ্ণদয়াল ছিলেন ব্রিটিশের পদস্থ কর্মচারী। ব্রিটিশের আস্থাভাজন হতে চেয়ে তিনি সনাতনী হিন্দু রুচি ও আচার ত্যাগ করেন। মদ্য মাংসে তাঁর বিলক্ষণ রুচি ছিল। সেকালের নিয়মানুযায়ী নিজের পত্নীকে তিনি অবরোধের মধ্যে রাখেন নি। আনন্দময়ীকে তিনি প্রথার বাইরে গিয়ে সায়া সেমিজ ও জুতা মোজা পরতে উৎসাহ দিতেন। সেকেলে হিন্দুনারীর পক্ষে এ ছিল নিতান্ত খ্রিষ্টানি। কিন্তু এ সবটাই ছিল কৃষ্ণদয়ালের অভ্যাস। আর অনেকটাই ব্রিটিশ প্রভুর আস্থাভাজন হবার ট্যাকটিক্স।
এই সময় সিপাহী বিদ্রোহ (১৮৫৭) বাধল। রবীন্দ্রনাথ নিজে জন্মেছেন ১৮৬১ সালে। সিপাহীরা ক্ষেপে উঠেছিল। তাদের মূল অভিযোগ ছিল ভারতীয় সিপাহীদের অর্থনৈতিক শোষণ ও বঞ্চনা। ব্রিটিশ সৈন্যদের তুলনায় ভারতীয় সিপাহীদের পাওনা গণ্ডা ছিল নামমাত্র।
কিন্তু সিপাহীদের ক্ষেপে ওঠার আশু কারণ ছিল ধর্মভয়। ভারতীয় হিন্দু ও মুসলমান অশিক্ষিত সিপাহীরা দীর্ঘদিনের আর্থিক বঞ্চনার রুদ্ধমূখ ক্ষোভের ফেটে পড়ার পরিস্থিতি হল ধর্মীয় অনুষঙ্গে।
ক্ষেপে উঠে সিপাহীরা ব্রিটিশ সৈন্যদের ও ঊর্ধ্বতন সেনাকর্তাদের আক্রমণ করে। বাধ্য ও অনুগত, অদৃষ্টে বিশ্বাসী সরলপ্রাণ ভারতীয় সিপাহীদের এহেন মারমুখী আক্রমণের সামনে প্রথমে ব্রিটিশ সেনারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এমন কি তাদের ঘরের মেয়ে বউকে পর্যন্ত নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছিল সিপাহীদের হাতে।
পরিকল্পনাহীন, দিশাহীন, সমন্বয়হীন সিপাহীদের একটি অংশ গর্ভবতী মেয়েদের পর্যন্ত আক্রমণ করে।
আমাদের গোরা উপন্যাসের গৌরমোহন এই রকম এক আইরিশ মহিলার সদ্যোজাত সন্তান। কাতর আইরিশ মা কৃষ্ণদয়ালের গৃহবধূ আনন্দময়ীর কাছে শিশুকে রেখে মৃত্যুমুখে পতিত হন। আনন্দময়ী ছিলেন নিঃসন্তান। কিন্তু তাঁর মন ও চরিত্রের গঠন ছিল মাতৃত্বে পরিপূর্ণ।
বিদেশি অপরিচিতা মৃত্যুপথযাত্রিণীকে মুখের ভাষায় নয়, আঁতের ভাষায় আনন্দময়ী কথা দিয়েছিলেন সদ্যোজাত শিশুটিকে সুরক্ষিত রাখবেন।
এই হল গৌরমোহন তথা গোরার জন্মবৃত্তান্ত।
শারীরিক ভাবে প্রসবের সূত্রে মা না হয়েও আনন্দময়ী গোরার মা হয়ে উঠতে আদৌ সময় নিলেন না। কাশীবাসী পণ্ডিতের নাতনির বাধল না ম্লেচ্ছ সন্তানকে বুকে তুলে নিতে। মাতৃত্বের রসে ভরা একটি উদার হৃদয়ের নারী এমন একটি সন্তানেরই অপেক্ষায় ছিলেন।
গোরার চেহারা ছবিতে আইরিশ জিন স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। কৃষ্ণদয়াল অস্বস্তিতে পড়ছিলেন। তিনি যে ব্রিটিশের অনুগত কর্মচারী। কেন ইউরোপীয় শিশুকে সময়মত সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয় নি, তার যুৎসই জবাব দেবার সহজ স্পষ্ট সরল বুদ্ধি তাঁর ছিল না। তিনি ইংরেজের খিদমতগারির প্রতিদানে বিস্তর রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট পেয়েছিলেন।
রিটায়ারমেন্টের পর কৃষ্ণদয়ালের অদ্ভুত ও বিসদৃশ পরিবর্তন আমরা দেখব। মদ্যমাংসে যাঁর বিলক্ষণ রুচি ছিল, যিনি গৃহবধূকে অবরোধের মধ্যে রাখেন নি, সেই কৃষ্ণদয়াল রিটায়ার করে তেড়ে ফুঁড়ে হিন্দু হয়ে উঠলেন। ফোঁটা তিলক বার ব্রত পূজা উদযাপনে কোনো খামতি রইল না।
গোরা শুরু করল আরেক আখ্যান। সে কলেজে ভালই পড়াশুনা করেছিল। কিন্তু তার নিজের কাছে নিজের পরিচয় ছিল ভারতীয় সনাতনী হিন্দু।
গোরা নিজের জন্মবৃত্তান্ত জানত না। কৃষ্ণদয়াল ও আনন্দময়ী ছাড়া আর কেউই সে কথা জানত না। অথচ জিনকে তো লুকোনো যায় না। পিতৃপুরুষের অদৃশ্য লিপি থাকে তাতে। গোরার দীর্ঘ বলিষ্ঠ চেহারা, অপরিসীম মনোবল আর উদ্যম, স্পষ্ট জোরালো জেদালো ভাষণের প্রতি আত্যন্তিক আগ্রহ তাকে অন্য পাঁচটা বাঙালির চেয়ে বিস্তর আলাদা করে দেখাত।
এই জিনগত চেহারা বৈশিষ্ট্য তাকে যতই আলাদাভাবে চেনাত, ততই গৌরমোহন নিজেকে ভারতীয় সনাতনী হিন্দু প্রতিপন্ন করতে অস্থির হয়ে উঠত। সে কিছুতেই ভাবতে পারত না, তার জন্মের ব্যাপারে কিছু রহস্য থাকা সম্ভব। অথচ তার পিতা কৃষ্ণদয়াল যেন তার সঙ্গে কিছুতেই সহজ হতেন না, হতে চাইতেন না। গোরাকে কৃষ্ণদয়াল এড়িয়ে থাকার চেষ্টা করে যেতেন। গোরা তার ধর্মগোঁড়া হিন্দু বাবাকে দেখত। তাঁর ফোঁটা তিলক আচমন জপ তপ বার ব্রতের ঘটা দেখত আর নিজের জোরালো হিন্দু সাম্প্রদায়িক উচ্চকিত ঘোষণা তুল্যমূল্য যাচাই করত, আর কিছুতে বুঝে পেত না বাপ বেটা দুই হিন্দুর এমন জল অচল তফাৎ কিসের।
গোরা যত বুঝতে পারত না, তত গোঁড়া হয়ে নিজেকে বেশি বেশি হিন্দুর সাম্প্রদায়িক খোলসে মুড়তে চাইত। এক অবোলা আইডেন্টিটি ক্রাইসিস তাকে তাড়িয়ে বেড়াত।
এদিকে গোরার ব্রাহ্মণসন্তান সুলভ উপবীতধারণ অনুষ্ঠান হয় নি। আনন্দময়ী চেয়েছিলেন। কিন্তু বাদ সেধেছিলেন কৃষ্ণদয়াল। তিনি কিছুতেই ভুলতে চাইতেন না যে গোরা এক ম্লেচ্ছ সন্তান।
আনন্দময়ী পড়েছিলেন মাঝখানে। গোরাকে তিনি বুকে করে মানুষ করেছিলেন। প্রকৃত মাতৃহৃদয় থেকে গোরাকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। গোরা আর কৃষ্ণদয়ালের সম্পর্কের টানা পোড়েনে বিধ্বস্ত হচ্ছিলেন আনন্দময়ী।
ঘটনার ঘাত প্রতিঘাতে গোরার সঙ্গে একটি ভদ্র ব্রাহ্ম পরিবারের যোগাযোগ হয়। পরিবারের কর্তা পরেশ ভট্টাচার্য যে গোরার পিতা কৃষ্ণদয়ালের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন ক্রমে তাও জানা গেল। ব্রাহ্ম পরিবারটিতে মেয়েদের শিক্ষা এবং সংস্কৃতিচর্চার ব্যবস্থা ছিল। তারা পরিবারের বাইরের পুরুষদের সামনে অসংকোচে বের হতে জানত এবং আলাপ আলোচনা তর্ক বিতর্কে অংশগ্রহণ করতে তাদের বাধত না। সমপাঠী বিনয়ের সূত্রে গোরা প্রথমে পরেশবাবুর সাথে পরিচিত হয় ও পরে তাঁর কন্যাদের চাক্ষুষ করে।
গল্পের ধারাবাহিকতায় ওই ব্রাহ্ম পরিবারের বড়ো মেয়েটিকে দেখেই গোরা ভালবেসে ফেলে। এভাবে মেয়েদের ভালবেসে ফেলা চলে, গোরা কোনোদিন ভাবতে পারে নি। কিন্তু পুরুষের পক্ষে উপযুক্ত নারীর হৃদয়ের টান যে শুধুমাত্র মোহ নয়, গোরা তার অন্তর দিয়ে বুঝতে পারে।
সাধারণভাবে গোরার সাথে সুচরিতার ভালবাসার কোনো পরিণতিই হতে পারত না। কিন্তু গোরা যখন দেখল তার মা সুচরিতাকে আপন করে নিয়েছেন আর সমস্ত সাম্প্রদায়িক গণ্ডির বাইরে দাঁড়িয়ে কেবলমাত্র মানুষ বলেই মানুষকে ভালবাসা দিতে এগিয়ে এসেছেন, তখন গোরার এক উত্তরণ ঘটে। নিজের জন্ম রহস্য সে জানতে পারে। তথাকথিত সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় নিগড়ের বহু উচ্চে সে নিজেকে খুঁজে পায়। তার মা আনন্দময়ী তাকে এই নিজেকে খুঁজে পাওয়ার পথে দীক্ষা দেন। এই মাকেই সে ভারতবর্ষ হিসেবে উপলব্ধি করে, যে ভারত সর্বমানবের।
২| সাংসারিক সংকট ও আনন্দময়ী
আনন্দময়ী তাঁর দ্বিতীয়া স্ত্রী। কৃষ্ণদয়াল তাঁর যৌবনে মদ্য মাংসে বিলক্ষণ রুচি প্রকাশ করেছেন। তাঁর বিলিতি মালিকেরা তাঁর বিলিতি আচার অভ্যাসে বিগলিত ছিলেন। অবসরের পর এই কৃষ্ণদয়াল কি করে এতখানি পালটে গেলেন, অবাক হয়ে লক্ষ্য করতে থাকেন আনন্দময়ী। স্ত্রীসঙ্গ দূরে থাক, বাড়ির মধ্যে একটা জায়গা আলাদা করে “সাধনাশ্রম” লিখে বোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন। বার ব্রত উপবাস আচার অভ্যাসের আর কোনো সীমা নেই। এদিকে কোলে তুলে নিয়ে পুত্রের সম্মানে স্নেহে যাকে মানুষ করলেন সেই গোরাই বা কি করছে! সে যেন পণ করেছে আচারে বিচারে ফোঁটা তিলকে গঙ্গাস্নানে পরম নৈষ্ঠিক হিন্দুকেও হার মানাবে সে। অথচ তার জন্ম বৃত্তান্ত তাকে জানাতে চান না মা। কত কষ্ট করেই যে তিনি তাকে সবার গঞ্জনা অবছেদ্দা সয়ে বড়টি করে তুলেছেন। নিজের ঘরে হিন্দুয়ানির উৎকট দু দুটো দৃষ্টান্ত দেখে গুমরে মরেন আনন্দময়ী।
৩| দু্ঃখ বিজয়িনী আনন্দময়ী
নিজের পেটের সন্তানকে যেভাবে মানুষ ভালবাসে, সেই মাতৃহৃদয় থেকেই হিন্দু জাগো আন্দোলন নিয়ে মাতামাতি মাকে আশঙ্কিত করেছিল। হুজুগ তো ভাল নয়। ভাল নয় অসহিষ্ণুতা। নিজের সন্তানের মধ্যে এই অসহিষ্ণুতা দেখে উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়তে থাকেন মা। স্বামী, পরিবার, এমন কি সন্তান স্নেহে যাকে বড়ো করে তুলেছেন, সত্যের আহ্বানে তারও বিরুদ্ধতা করতে তাঁর বাধে নি। গোঁড়ামির বিরুদ্ধে, অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে শত অবজ্ঞা সয়েও মাথা উঁচু রাখেন তিনি। নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থের বিপরীতে মহৎ সত্যের আহ্বান কান পেতে শুনতে জীবন বাজি রেখেছেন তিনি। সত্যকে আঁকড়ে ধরতে চেয়ে হয়ে উঠেছেন আনন্দময়ী। স্বার্থ, সুখ, স্বাচ্ছন্দ্যকে অনেক পিছনে ফেলে আনন্দের প্রকাশ। সত্যের সপক্ষে, অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই লড়তে লড়তে যথার্থ মা হয়ে ওঠেন আনন্দময়ী।
৪| বিনয়ের বিয়ে
বন্ধুকে ভালবাসতে গিয়ে কি মারাত্মক বিপর্যয় ই না ঘটাতে যাচ্ছিল একটি উচ্চশিক্ষিত প্রাণবন্ত যুবক। বন্ধু তার সহপাঠী ও অত্যন্ত অন্তরঙ্গ। এমন কি নিজের মা বাবা নেই বলে সে বন্ধুর মাকে ‘মা’ বলে ডাকে। প্রায় সময় বন্ধুর বাড়ি যায়, থাকে, খায়। কিন্তু কয়েকদিন হয় বন্ধুটি নিজের মত সাংঘাতিক ভাবে তার উপর চাপিয়ে দিতেন। বন্ধুর প্রতি স্নেহে অনুরাগে আর অনেকটা যেন আনুগত্যে সে মেনেও নিত। কিন্তু শিক্ষিত আলোকপ্রাপ্ত মনের একটা বৈশিষ্ট্য হল ভেতরে ভেতরে যুক্তিবিচার করা। এটা যেন মগজের ভেতর হয়ে উঠতেই থাকে। ক্রমশঃ সে টের পায়, বন্ধু আর বুঝি বন্ধু নয়, সে প্রভু হয়ে উঠছে।
এই সময়েই একটি শিক্ষিত ব্রাহ্ম পরিবারে সে যাতায়াত করত। অনেকটাই সেই পরিবারের কর্তার রুচিশীল উদার স্নিগ্ধ ব্যক্তিত্বের আকর্ষণে, আর তার চেয়ে বেশ বেশি ভাবেই ভদ্রলোকের সুন্দরী ও আকর্ষণীয় মেয়েদের জন্য। এমন মেয়ে সে কখনো দেখেনি। নারীত্বের তনুলতায় কমনীয়তার বিন্দুমাত্র ঘাটতি নেই, অথচ কি সহজ সাবলীল স্বচ্ছন্দ মেয়েগুলি ! বাঙালি শিক্ষিত যুবা যেন যুগে যুগেই এরকম সহজ সুন্দরীকে পেতে চেয়েছে। মেয়েগুলি যেমন সুন্দর, তাদের নামগুলিও খুব রুচিপূৰ্ণ। আর সেই ব্রাহ্ম পরিবারে শিক্ষিত মার্জিত যুবকের সাথে বেশ আলাপ গল্প করতে দিতে বাবা মায়ের তরফে কোনো সমস্যা নেই।
বন্ধুটির উপর খুব রাগ হচ্ছিল, যখন সে এমন একটি আলোকপ্রাপ্ত সুন্দর পরিবারের মেয়েদের সাথে মেলামেশাকে টিপ্পনী কাটতে শুরু করল। বন্ধুটি বিজ্ঞ, কিন্তু তার বিনয়ের দিকটি বিশেষ কম। বেশ গোঁড়া হয়ে উঠতে চাওয়া মানুষ। বন্ধু হয়ে উঠতে চাচ্ছে প্রভু।
কিন্তু বন্ধুকে কি ছাড়া যায়? তাহলে সে কি করবে? ব্রাহ্ম পরিবারটিতে আর যাবে না ? যে মেয়েগুলির হাসিখুশি বুদ্ধিদীপ্ত মুখগুলি সে শয়নে স্বপনে দেখতে পায়, তাদের অনায়াস সঙ্গ ভুলে যাবে?
সে রাজি হল প্রচণ্ড হিন্দু গোঁড়া হয়ে উঠতে চাওয়া বন্ধুটির ভাইঝি শশিমুখীকে বিয়ে করতে। সে জানে শশিমুখী নেহাত বালিকাটি। এমন কি শৈশবে মেয়েটিকে কোলেও নিয়েছে সে। এমন একটি বালিকাকেও সে বধূ হিসেবে ভাবছিল, শুধু সাঙ্ঘাতিক গোঁড়া হয়ে উঠতে থাকা বন্ধুটির সাথে সম্পর্ক রাখবে বলেই।
শশিমুখী নয়। গৌরমোহনের সাথে বন্ধুত্ব। এই বন্ধুত্ব টিঁকিয়ে রাখতে নিজের যৌবনকে জলাঞ্জলি দিতে চায় সে।
বাদ সাধলেন বন্ধুর মা। আনন্দময়ী। প্রশ্ন তুললেন যৌন কমপ্যাটিবিলিটির। আলোকপ্রাপ্ত মার্জিত যুবকের পক্ষে একান্ত বালিকাকে বধূ হিসাবে গ্রহণ করা অন্যায় হবে। বিবাহ হবে সমযোগ্য মানুষ এর মধ্যে। নইলে সে একটা বিশ্রী ব্যাপার। মনের মধ্যে আলো ধরেন রবীন্দ্রনাথ।