• Uncategorized
  • 0

অনুবাদে তুষ্টি ভট্টাচার্য

হুল হত্যা 

জসিন্তা কেরকেট্টা (জসিন্তা কেরকেট্টা ওঁরাও সম্প্রদায়ের মেয়ে। ঝাড়খণ্ডের এই তরুণ কবি সাংবাদিক এবং সমাজসেবক।)

হ্যাঁ, আমিই সেই গাছ
যে পঞ্চিকাঠিয়া-বরহেটের দ্রোহ প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে আছি।
সময়ের আদালতের
এক জীবিত সাক্ষী
যে হুল হত্যাকারীর
মুখ চেনে।

আমি নিজের কাঁধের দাগ ছুঁয়ে দেখি
ওই দড়ির ঘর্ষণে যা তৈরি হয়েছিল
যার ফাঁদে
লটকে দেওয়া হয়েছিল
১৮৫৫ সালের প্রতিরোধ।
যার ওপর ঝুলে পড়েছিল
সাঁওতাল হুলদের অগ্রজ সিদোর
শোসন বিরোধী যুদ্ধরত আত্মারা।

ওর শরীর থেকে শেষবারের জন্য
ঘামের গন্ধ এসেছিল
নিহত হুলের মাথা তুলতেই
পারদের মতো আজও
জঙ্গলের শিরায় শিরায় গন্ধ বয়ে যায়।

ওর ছটফটে পায়ের আঙুল
আমার বুকে হোঁচট খেয়েছিল ঠিক যেখানে
আমার কলজে ধকধক করে।
সেই থেকে আজও রক্তের সম্পর্ক
হুল—হুল ডেকে ফেরে।

ওই ডাকে
জঙ্গলের বুকে
স্মৃতির ছুরি আমূল বিদ্ধ হয়
ব্যাকুল হয়ে ওঠে,
নিহত’র দেহ কুরে কুরে খেতে চাওয়া পোকাদের
সমস্ত বসতি উজার করে দিতে চায়
হত্যাকারীর আয়ুর ওপর চাপানো
সমস্ত কবচ মাটিতে মিশিয়ে দিতে চায়।

হ্যাঁ, আমারই বুড়ো ডালে
দোল খেতে খেতে
বাচ্চারা বড় হয়ে উঠেছে
আমারই এই হাতের সহায়তা নিয়ে
বীরপুরুষরা ষড়যন্ত্রে করে
ওদেরই মৃত্যুর হাতে তুলে দিয়েছে।

আমি আজও ঠিক ওখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছি
যেখানে খোঁড়া হয়েছে
সময়ের কবর
এক জীবিত সাক্ষী হয়ে
সত্যের আলো হয়ে
যে ইতিহাসকে ঘুম থেকে
তুলে জাগিয়ে রাখে।

সময়ের আদালত আমাকে জিজ্ঞেস করে
হুল হত্যাকারীর মুখ কেমন দেখতে?
আমি চিৎকার করে উত্তর দিই
যুগ যুগ ধরে
ওদের মুখ একই রকম…
নির্দয় পরাকাষ্ঠায় রাঙানো মাথা
লালসার সীমা অতিক্রান্ত চোখ
জীবন রস চুষতে থাকা মানুষখেকো আঙুল,
পৃথিবীর পুঁটলি কোমরে লুকিয়ে রেখে
“আরও, আরও…”র সন্ধানে ঘুরতে থাকা
এই ব্রহ্মাণ্ডের সবথেকে ক্ষুধার্ত আকার…

এই পর্যন্ত শুনে আদালত
উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে
আর শুনানি স্থগিত করে
আদালত খারিজ হয়
এক অনিশ্চিতকালের উদ্দ্যেশে…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।